শুক্রবার, ০২ মে ২০২৫, ১৯ বৈশাখ ১৪৩২

ভারতকে কাঁদিয়ে আবারও এশিয়ার সেরা বাংলাদেশ

অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ
ক্রীড়া প্রতিবেদক
  ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
ভারতকে কাঁদিয়ে আবারও এশিয়ার সেরা বাংলাদেশ
দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে রোববার যুব এশিয়া কাপের ফাইনালে ভারতকে হারিয়ে শিরোপা জয়ের পর ট্রফি হাতে বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের উচ্ছ্বাস -ওয়েবসাইট

বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচ মানেই বাড়তি উত্তেজনা। ক্রিকেট, ফুটবল, হকি- যাই হোক না কেন। মাঠে ও মাঠের বাইরে উত্তাপ ছড়াবেই। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের ফলে মেগা ফাইনাল ঘিরে রোমাঞ্চ একটু বেশিই ছিল। শিরোপা নির্ধারণী সেই ম্যাচে আট বারের চ্যাম্পিয়ন ভারতকে হতাশায় ডুবিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো যুব এশিয়া কাপের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করল বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট দল।

ব্যাটিংয়ে নেমে পুঁজিটা খুব বড় করতে পারেনি বাংলাদেশ। কোনোমতে দুইশর কাছাকাছি পুঁজি পায় দলটি। তখন মনে হয়েছিল ৩০/৪০ রান কম করেছে তারা। বিষয়টি মাথায় রেখে দুর্দান্ত বোলিং করেন বোলাররা। বিশেষ করে পেসাররা। যার নেতৃত্ব দিয়েছেন ইকবাল হোসেন ইমন। তাতে দারুণ এক জয়ে এশিয়া কাপের শিরোপা ধরে রাখল বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল।

রোববার দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে এশিয়া কাপের ফাইনালে ভারতকে ৫৯ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। প্রথমে ব্যাটিংয়ে নেমে ৪৯.১ ওভারে সবকটি উইকেট হারিয়ে ১৯৮ রান সংগ্রহ করে যুব টাইগাররা। জবাবে ৩.২ ওভারে ১৩৯ রানে গুটিয়ে যায় ভারত।

এদিন শুরু থেকেই দারুণ নিয়ন্ত্রিত বোলিং করেন যুব টাইগাররা। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই আসে সাফল্য। আইয়ুস মার্থেকে (১) বোল্ড করে ওপেনিং জুটি ভাঙেন আল ফাহাদ। তাতে কিছুটা ব্যাকফুটে চলে যায় ভারত।

পঞ্চম ওভারে মারুফ মৃধাকে দুটি বাউন্ডারি মেরে পাল্টা আঘাত হানতে চেষ্টা করেন আরেক ওপেনার ভাইভাব সুরিয়াবানশি (৯)। তবে আরও একটি মারতে গিয়ে বিপদ ডেকে আনেন। গ্যালিতে শিহাব জেমসের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে আসেন তিনি।

তিন নম্বরে নামা আন্দ্রে সিদ্ধার্থ

\হ৫

প্রায় সেট হয়ে গিয়েছিলেন। ৩৫ বলে ২০ রানও করেন। তবে বড় ক্ষতি করার আগে তাকে বোল্ড করে দিয়ে সাজঘরের পথ দেখান রিজান হোসেন। তাতে ভারতীয়দের চেপে ধরে বাংলাদেশ। এরপর কেপি কার্থিকেয়াকে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেন অধিনায়ক মোহামেদ আমান। ২৯ রানের জুটিও গড়েন তারা। তবে ১৩তম ওভারের এই জুটি ভাঙার সুযোগ ছিল বাংলাদেশের। দুই প্রান্তেই রানআউট করার সুযোগ নষ্ট করেন বোলার ইকবাল হোসেন ইমন ও উইকেটরক্ষক ফরিদ হাসান।

পরের ওভারে ভারতীয় ব্যাটারদের সঙ্গে তর্কেও জড়িয়ে পড়েন টাইগাররা। তাতে উত্তেজনা বাড়ে ম্যাচে। কার্থিকেয়া দুটি বাউন্ডারি মেরে মোমেন্টাম ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চালান। তবে খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি।

২১তম ওভারে দুর্দান্ত বোলিংয়ে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশের হাতে এনে দেন ইমন। বিপজ্জনক হয়ে ওঠা কার্থিকেয়াকে উইকেটরক্ষক ফরিদের ক্যাচে পরিণত করে ভাঙেন জুটি। ২১ রান আসে তার ব্যাট থেকে। এক বল নিখিল কুমারকেও (০) একইভাবে ফেরান এই পেসার। তাতে বিপদেই পড়ে যায় ভারত। পরের ওভারে ফিরে ভারতের বিপদ আরও বাড়ান ইমন। এবার ফেরান হারভানশ পাঙ্গালিয়াকে (৬)। তাকেও উইকেটরক্ষকের ক্যাচে পরিণত করেন এই পেসার। অবশ্য এক বল আগেই ফিরতে পারতেন থার্ডম্যানে ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন হারভানশ। তবে সে সুযোগ লুফে নিতে পারেননি রিজান। পরে আল ফাহাদকে আক্রমণে ফিরিয়ে আনেন অধিনায়ক আজিজুল হাকিম। দ্বিতীয় ওভারেই সাফল্য পান। কিরান চোরমালেকে (১) উইকেটরক্ষকের ক্যাচে পরিণত করে লেজ বের করে আনেন ভারতের।

তবে গলার কাঁটা হয়ে আটকে ছিলেন ভারতীয় অধিনায়ক আমান। এক প্রান্ত আগলে রেখে আশা বাঁচিয়ে রাখেন তাদের। ৩২তম ওভারে বল হাতে নিয়েই তাকে ফেরান বাংলাদেশ অধিনায়ক আজিজুল। ব্যক্তিগত ২৬ রানে বোল্ড করে দেন আমানকে। তাতে জয় দেখতে শুরু করে বাংলাদেশ।

নয় নম্বরে নামা হার্দিক রাজ উইকেটে নেমে আগ্রাসী ব্যাটিং পাল্টা আক্রমণ চালানোর চেষ্টা করেন। ২১ বলে ২৪ রান করেন তিনি। বড় ক্ষতি করার আগে তাকেও ফেরান অধিনায়ক আজিজুল। এলবিডবিস্নউর ফাঁদে ফেলেন তাকে। এরপর চেতন শর্মাকে (১০) ফিরিয়ে ভারতীয় ইনিংসের ইতি টানেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।

লেগস্পিনার দেবাশিস দেবা ছাড়া বাংলাদেশের হয়ে সব বোলারই উইকেট পেয়েছেন। তবে উইকেট না পেলেও দারুণ বোলিং করেন দেবা। ২৪ রানের খরচায় ৩ উইকেট নিয়ে সেরা বোলার ইমন। আজিজুলও নেন ৩টি করে উইকেট। এছাড়া দুটি শিকার আল ফাহাদের।

এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ১৭ রানে কালাম সিদ্দিকীকে হারায় বাংলাদেশ। একাদশ ওভারে ফেরেন থিতু হওয়া আরেক ওপেনার জাওয়াদ আবরার (২০)। অধিনায়ক আজিজুল হাকিম তামিম আগের ম্যাচগুলোতে দারুণ খেললেও এদিন ব্যর্থ। ২৮ বলে ১৬ রান করে তিনি ক্যাচ দিয়ে ফিরলে চাপে পড়ে দল।

এরপর শিহাব-রিজান মিলে গড়েন প্রতিরোধ। চতুর্থ উইকেটে যোগ করেন ৬২ রান। দু'জনেই ফেরেন অসময়ে। আয়ুশ হাটরের বলে ক্যাচ দিয়ে থামেন শিহাব। হার্দিক রাজের বলে বোল্ড হয়ে যান রিজান। দেবাশীষ দেবা, সাইমুন বাসির ব্যর্থ হলে দলকে এরপর টানেন ফরিদ। নবম উইকেটে মারুফ মৃধাকে নিয়ে যোগ করেন ৩১ রান।

দলের হয়ে ৬৫ বলে ৩টি চারের সাহায্যে সর্বোচ্চ ৪৭ রান করেছেন রিজান। ৬৭ বলে ৩টি চারে ৪০ আসে শিহাবের ব্যাট থেকে। ১৬৭ রানে ৮ উইকেট হারানোর পর টেল এন্ডারদের নিয়ে দলকে দুইশ'র কাছে নিতে ৪৯ বলে গুরুত্বপূর্ণ ৩৯ রানের ইনিংস খেলেন ফরিদ। তিনিও চার মারেন ৩টি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে