স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সদ্য সাবেক সচিব মোহাম্মদ আবদুল মোমেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পেয়েছেন। মঙ্গলবার মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আব্দুর রশীদ স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়, দুদক আইন অনুযায়ী চেয়ারম্যানের বেতন, ভাতা, অন্যান্য সুবিধা ও পদমর্যাদা সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের একজন বিচারকের এবং কমিশনারের বেতন, ভাতা, অন্যান্য সুবিধা ও পদমর্যাদা সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের একজন বিচারকের সমরূপ নির্ধারণ করা হলো।
কমিশনের দুই সদস্য হচ্ছেন- অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মিঞা মুহাম্মদ আলি আকবার আজিজী ও অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হাফিজ আহ্সান ফরিদ।
বিসিএস '৮২ ব্যাচের প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা মোমেনের লেখক নাম আন্দালিব রাশদী। কথাসাহিত্যিক, অনুবাদক, গবেষক, কলামিস্ট হিসেবে তিনি পাঠকপ্রিয় ও নন্দিত। ড. মোমেন ২০০১ সালের বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় কৃষি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব, বিআরটিএ'র চেয়ারম্যান ও বিমানের এমডি ছিলেন। তার আগে নব্বইয়ের দশকে তিনি ছিলেন তখনকার প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার এপিএস। এছাড়াও তিনি
\হসাবেক প্রেসিডেন্ট একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী ও ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের ব্যক্তিগত সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৯ সালে যুগ্ম সচিব থাকা অবস্থায় তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠিয়েছিল তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার।
পটপরিবর্তনের পর ১৭ আগস্ট 'বঞ্চিত' কর্মকর্তাদের মধ্যে আব্দুল মোমেনকেও সচিব পদমর্যাদায় ফিরিয়ে আনা হয়। ১৮ আগস্ট জ্যেষ্ঠ সচিব করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পান তিনি।
আর চুক্তিভিত্তিক এ নিয়োগ ১০ ডিসেম্বর বাতিল করে দুদক চেয়ারম্যান করা হলো মোমেনকে। এর আগে সোমবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিবের দায়িত্ব থেকে ইস্তফা দেন তিনি।
ড. মোমেনের জন্ম হয় ৩১ ডিসেম্বর ১৯৫৭ সালে, ঢাকায়। বিজ্ঞানের ছাত্র ড. মোমেন স্নাতকোত্তর পাঠ নিয়েছেন রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও অর্থনীতিতে। পরে আইনও পড়েছেন, পিএইচডি করেছেন লন্ডনে। এ পর্যন্ত তার শতাধিক বই প্রকাশিত হয়েছে।
ক্ষমতার পালাবদলের মধ্যে গত ২৯ অক্টোবর দুদক চেয়ারম্যান মুহাম্মদ মইনুউদ্দীন আব্দুলস্নাহ, কমিশনার আছিয়া খাতুন ও কমিশনার জহুরুল হক 'ব্যক্তিগত' কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেন। মঈনউদ্দীন আবদুলস্নাহ একসময় ছিলেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব। ২০২১ সালের ৩ মার্চ রাষ্ট্রপতি তাকে দুদক চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেন।
পাঁচ বছর মেয়াদের জন্য তারা দুদকের দায়িত্ব পেলেও পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দেড় বছর আগেই তাদের বিদায় নিতে হয়।
১০ নভেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান ও কমিশনার নিয়োগে সুপারিশ করতে সার্চ কমিটি গঠন করে সরকার। এ কমিটির সভাপতি করা হয় সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. রেজাউল হককে।
সদ্য সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন ছাড়া কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- হাইকোর্ট বিভাগের বিচারক বিচারপতি ফারাহ মাহবুব, বাংলাদেশের মহা হিসাব-নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক মো. নূরুল ইসলাম, বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের চেয়ারম্যান মোবাশ্বের মোনেম ও সবশেষ অবসরপ্রাপ্ত মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন।
বাছাই কমিটি, চেয়ারম্যান ও কমিশনার নিয়োগে প্রতিটি শূন্য পদের বিপরীতে ২ জন ব্যক্তির নামের তালিকা প্রণয়ন করে রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানোর বিধান রয়েছে।
নতুন দুদক কমিশন গঠনে বাছাই কমিটি গঠনের এক মাসের মধ্যে নতুন চেয়ারম্যান ও দুই কমিশনার নিয়োগ হলো।