মূল্যস্ফীতি, আয়বৈষম্য, সরকারি ঋণ বেড়ে যাওয়া, জ্বালানি স্বল্পতা, জিডিপির প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়া ও বেকারত্ব দেশের অর্থনীতিতে নানা সংকট তৈরি করছে। ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের খেলাপি ঋণের লাগামহীন বৃদ্ধি এবং দেশি-বিদেশি বিনিয়োগে চরম স্থবিরতা 'মরার উপর খাড়ার ঘাঁ' হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদিও এর আগেই আওয়ামী লীগের কর্তৃত্ববাদী শাসনকালের ব্যাপক দুর্নীতি, বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে। অর্থনীতিবিদদের আশঙ্কা, সার্বিক পরিস্থিতি দ্রম্নত সামাল দেওয়া না গেলে আর্থিক ব্যবস্থা বড় ঝুঁকিতে পড়বে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, দেশ থেকে পাচার হয়ে যাওয়া অর্থ উদ্ধারে অন্তর্বর্তী সরকার নানা উদ্যোগ গ্রহণ করলেও তাতে সফল হতে দীর্ঘ সময় লাগবে। এমনকি এ ক্ষেত্রে ব্যর্থ হওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে। তাদের ভাষ্য, পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার প্রক্রিয়াটি খুবই জটিল। এছাড়া অর্থ পাচারের নথিপত্র সংগ্রহ, পাচারের গতিপথ নির্ধারণ, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ও পাচার হওয়া দেশের আইনগত প্রক্রিয়া শেষ করার বিষয়টিও সময়সাপেক্ষ। বাংলাদেশে অর্থ পাচারের মতো আর্থিক অপরাধ প্রতিরোধ ও তদন্তের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা হলো বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। দেশ থেকে কোনো অর্থ পাচার হয়েছে কিনা সেটি খুঁজে বের করার প্রাথমিক দায়িত্ব সংস্থাটির। আর্থিক এ গোয়েন্দা সংস্থাটির পক্ষ থেকে পাচারকৃত অর্থের গতিপথ-সংক্রান্ত নথিপত্র চূড়ান্ত হতে হবে। এরপর সে নথিপত্রের ভিত্তিতে তদন্ত করবে দুদক, এনবিআর বা সিআইডি। তদন্ত প্রক্রিয়া শেষ হলে অর্থ পাচারকারীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হবে। মামলার বিচার প্রক্রিয়া শেষে আদালতের রায় পাওয়ার পরই বিদেশ থেকে পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার সুযোগ তৈরি হয়। কিন্তু প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত অর্থ পাচার ঠেকাতে খুব একটা সাফল্য দেখাতে পারেনি সংস্থাটি। বরং সংস্থাটির কিছু কর্মকর্তার যোগসাজশে গত দেড় দশকে দেশ থেকে অর্থ পাচার হওয়ার অভিযোগ রয়েছে। বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার হলেও এখন পর্যন্ত পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার উলেস্নখযোগ্য কোনো নজির নেই।
তবে আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে দেশের আইনি প্রক্রিয়া সহজীকরণ করতে সরকার উদ্যোগ নিতে পারে। এ ক্ষেত্রে সরকার চাইলে অধ্যাদেশ জারি করে মামলা ছাড়াই বিএফআইইউ কিংবা সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার পদক্ষেপ নিতে পারে। প্রয়োজনে পাচারকৃত অর্থ উদ্ধারে পৃথক আইনও প্রণয়ন করা যেতে পারে। এটি করা সম্ভব হলে দেশের অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়া শেষ করতে সময় কম
লাগবে। পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধার প্রক্রিয়া সহজ হবে।
যদিও এ ধরনের কোনো উদ্যোগ এখনো নেওয়া হয়নি। ফলে পাচারকৃত অর্থ সহজেই উদ্ধার করা সম্ভব হবে এমনটা প্রত্যাশা করতে পারছেন না অর্থনীতিবিদরা। সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, অর্থ পাচার এখন সাময়িকভাবে বন্ধ হলেও আর্থিক নানা খাতের দুর্নীতি এখনো গুটিয়ে আনা সম্ভব হয়নি। ফলে এ ইসু্যতে আর্থিক ব্যবস্থায় ঝুঁকির শঙ্কা রয়ে গেছে বলে মনে করেন তারা।
এদিকে বহুল আলোচিত ব্যাংকিং খাতের খেলাপি ঋণ দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি বলে মনে করেন গবেষকরা। অথচ ঋণ প্রদানে অনিয়ম, ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার শিথিলতার কারণে ব্যাংকিং খাত খেলাপি ঋণের ভারে জর্জরিত। যদিও এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংক নতুন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সে অনুযায়ী, নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে কোনো ঋণ পরিশোধ না করলে তা মেয়াদোত্তীর্ণ হিসেবে গণ্য হবে। এরপর অনাদায়ী হিসেবে ওই ঋণ ৯০ দিন অতিক্রম করলে খেলাপি হয়ে যাবে। এই নীতিমালা আগামী বছরের এপ্রিল মাস থেকে কার্যকর হবে।
তবে ব্যাংকারদের আশঙ্কা, নতুন নিয়ম কার্যকর করার পর খেলাপি ঋণের পরিমাণ দ্বিগুণের বেশি বেড়ে যেতে পারে। পাশাপাশি নিয়মিত ও খেলাপি ঋণের বিপরীতে অতিরিক্ত নিরাপত্তা সঞ্চিতি রাখার কারণে ব্যাংকের মুনাফাতেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তবে এতে দেশের ব্যাংকগুলোর সম্পদের প্রকৃত চিত্র ফুটে উঠবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
সংশ্লিষ্টরা জানান, অন্তর্র্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর এখন ব্যাংকের খেলাপি ঋণের প্রকৃত চিত্র বেরিয়ে আসছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, মালিকানা বদল হওয়া ইসলামী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি। আওয়ামী লীগ-ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীগোষ্ঠী বেক্সিমকো, এস আলম, বসুন্ধরা গ্রম্নপসহ অনেকের ঋণ খেলাপি হয়ে পড়েছে। ফলে গত জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে সব মিলিয়ে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৭৩ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা। এতে সেপ্টেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ বেড়ে হয়েছে ২ লাখ ৮৪ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা, যা ব্যাংক খাতের মোট ঋণের ১৬ দশমিক ৯৩ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে সরকারি ব্যাংকগুলোয় খেলাপি ঋণ যত বেড়েছে, তার চেয়ে বেশি বেড়েছে বেসরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ। সরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২৩ হাজার ৬২৮ কোটি টাকা, আর বেসরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৪৯ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রুপালী- রাষ্ট্রমালিকানাধীন এই চার ব্যাংকের খেলাপি ঋণ লাগামহীনভাবে বাড়ছে। নতুন ঋণ বিতরণ কমিয়ে আনলেও এসব ব্যাংকের পুরানো ঋণ দফায় দফায় খেলাপি হচ্ছে। আবার ছাত্র-জনতার অভু্যত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এসব ব্যাংকে থাকা প্রভাবশালী অনেক ব্যবসায়ীর ঋণ নতুন করে খেলাপি হয়ে পড়েছে। এতে গত জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে সরকারি চার ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২৩ হাজার ৪৫৯ কোটি টাকা। এ সময়ে পুরো ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৭৩ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা।
ব্যাংক চারটির কর্মকর্তারা বলছেন, অনিয়ম-দুর্নীতির ঋণ অনেক ক্ষেত্রে বাইরে পাচার হয়ে গেছে। আবার ব্যবসায় লোকসানের কারণেও কোনো কোনো ঋণ আদায় হচ্ছে না। এখন রাজনৈতিক কারণেও নতুন করে আরও অনেক ঋণ খেলাপি হয়ে পড়বে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ সরকারের ১৬ বছরে যেসব ঋণ বিতরণ হয়েছে, এই ঋণগুলো ঝুঁকিতে পড়েছে। এতেই বাড়তে শুরু করেছে খেলাপি ঋণ। সামনে যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
এদিকে জ্বালানি স্বল্পতাই আগামীতে বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য সবচেয়ে বড় ঝুঁকির কারণ হতে পারে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। তাদের ভাষ্য, এ কারণে শিল্পোৎপাদন আগামীতে আরও ব্যাহত হবে। সেই সঙ্গে চলমান উচ্চ মূল্যস্ফীতিও অর্থনীতির জন্য ঝুঁকি তৈরি করবে বলে আশঙ্কা করেন তারা।
শিল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, জ্বালানি-সংকটের কারণে কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এতে গ্যাসনির্ভর শিল্প বিশেষ করে সিরামিক, ইস্পাত, টেক্সটাইল- এসব খাতে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। যা শীত পরবর্তী সময়ে উদ্বেগজনক হারে বাড়তে পারে- এমন শঙ্কায় রয়েছেন শিল্প মালিকরা।
অন্যদিকে ব্যবসায়ীদের জন্য দ্বিতীয় ঝুঁকি মূল্যস্ফীতি। উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে ব্যবসায়ীরা দীর্ঘ মেয়াদে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তায় পড়েছেন। এ ছাড়া উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে লেনদেনে ভারসাম্য থাকছে না এবং ঋণপত্র (এলসি) খুলতেও সমস্যা হচ্ছে। পাশাপাশি রপ্তানিকারকদের প্রতিযোগিতার সক্ষমতাও কমে গেছে।
এদিকে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের স্থবিরতা দেশের অর্থনীতিকে বেকায়দায় ফেলবে বলে আশঙ্কা করছেন অর্থনীতিবিদরা। তাদের ভাষ্য, উচ্চ সুদের হার, শিল্পাঞ্চলে অস্থিরতা, বিদু্যৎ-জ্বালানি সংকটসহ নানা কারণে দেশে বিনিয়োগ স্থবিরতা চলছে। এর ফলে বাড়ছে না কর্মসংস্থান। আর তলানিতে এসে ঠেকেছে শিল্পোৎপাদন। ছাত্র-জনতার অভু্যত্থানের পর বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের যাত্রায় তরুণদের ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টির চাহিদার মধ্যে নানামুখী সংকটে জর্জরিত উদ্যোক্তারা।
তারা বলছেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া এবং বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নত না হওয়ায় নতুন বিনিয়োগে আস্থা পাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা। অন্যদিকে নীতি সুদহার বাড়ানোয় পালস্না দিয়ে বাড়ছে ব্যাংকঋণের সুদহারও। এতে নতুন বিনিয়োগ নিয়ে উদ্বেগে ব্যবসায়ীরা।
উদ্যোক্তারা বলছেন, ভয়াবহ করোনা মহামারির ধকল কাটিয়ে সোজা করে দাঁড়াতে না দাঁড়াতেই আসে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্বজুড়ে জ্বালানি তেলের দামে উলস্নম্ফনে উচ্চ মূল্যস্ফীতির বোঝা এখনো বয়ে চলেছে বাংলাদেশসহ অনেক দেশ। গত বছরের প্রথম দিকে যুদ্ধের প্রভাবে কাঁচামাল আমদানিতে সংকট দেখা দেয়। এরপর ডলার সাশ্রয়ে আসে আমদানিতে কড়াকড়ি। সময়মতো এলসি করতে না পারা, জ্বালানি সংকটসহ নানা কারণে কারখানার উৎপাদন নামে শূন্যের কোঠায়। জ্বালানি সংকটে উৎপাদন ২৫ থেকে ৪০ শতাংশ বন্ধ ছিল। কারখানায় বিক্ষোভ, হামলা-মামলার কারণে ভারী শিল্প, পোশাক ও টেক্সটাইল খাত মারাত্মক সংকটের মধ্যে পড়ে, যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে রপ্তানি প্রবৃদ্ধিতে। এসব সংকটের কারণে অর্থনীতিতে বহুমুখী নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। বৈদেশিক দায়-দেনার পরিমাণ বেড়ে গেছে, বেড়েছে আমদানি খরচও।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিগত সরকারের শেষ দিকে নানা কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির ছিল, নতুন সরকার আসার পর প্রত্যাশা ছিল ব্যবসায় গতি আসবে। কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিরতা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসায় এবং ব্যবসায়ীদের নামে হত্যা মামলা হওয়ায় ব্যবসায়ীরা আশাহত হয়েছেন। নতুন বিনিয়োগ থেকে পিছু হটতে বাধ্য হয়েছেন। অনেকের মধ্যে ভীতি কাজ করছে।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সাবেক সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, কেউ যখন একটি দেশে বিনিয়োগ করতে যায়, তখন তিনি প্রথমেই নিরাপত্তার কথা চিন্তা করেন। যখন কেউ নিরাপদ মনে করবেন না, তখন কেন তিনি অর্থ বিনিয়োগ করবেন। অতি দ্রম্নত আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে সর্বোচ্চ ক্ষমতা দিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা উচিত।
শিল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, আগস্ট-সেপ্টেম্বর টানা দুই মাস সাভার, আশুলিয়া, টঙ্গী ও গাজীপুরের পুরো শিল্পাঞ্চলে চরম অস্থিরতা ছিল। অক্টোবরে এসে বড় পরিসরের অস্থিরতা থামলেও মাঝেমধ্যেই ঘটছে সহিংসতা। বিদেশি ক্রেতারা উদ্বেগ জানাচ্ছে, ঝুঁকিপূর্ণ মনে হওয়ায় বাংলাদেশ থেকে নতুন রপ্তানি আদেশ অন্য দেশে সরিয়ে নিচ্ছেন। বাংলাদেশে অস্থিরতার সুযোগ নিয়ে রপ্তানি বাড়ছে প্রতিযোগী দেশগুলোর।
এদিকে দেশি বিনিয়োগের পাশাপাশি সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগেও ভাটা পড়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরের তুলনায় পরের অর্থবছরে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে ৮.৮০ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছর শেষে নিট বিদেশি বিনিয়োগ হয়েছে ১.৪৭ বিলিয়ন ডলার, ২০২৩ অর্থবছর শেষে যা ছিল ১.৬১ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে কমেছে ১৪২ মিলিয়ন ডলার।
রাজনৈতিক অস্থিরতা না কমলে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি না হলে বিদেশি বিনিয়োগ আরও কমে দেশের অর্থনীতি গভীর খাদে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন অর্থনীতিবিদরা।
এদিকে গবেষকরা বলছেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতি দেশের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের ভাষ্য, গত আড়াই বছরের বেশি সময় ধরে উচ্চ মূল্যস্ফীতি দেশের সাধারণ জনগণের জীবনযাত্রার ওপর ভীষণ চাপ সৃষ্টি করেছে। আগস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর আশা করা হয়েছিল, এ পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে। অথচ মূল্যস্ফীতি এখন এক অসহনীয় অবস্থায় পৌঁছেছে।
তারা এই উচ্চ মূল্যস্ফীতির জন্য ছয়টি প্রধান কারণ চিহ্নিত করেছে। এগুলো হচ্ছে- সরবরাহ সংকট, চাহিদা ও সরবরাহের তথ্যের ঘাটতি, বাজারে প্রতিযোগিতার অভাব ও ব্যবসায়ীদের কারসাজি, সঠিক মুদ্রা ও রাজস্ব নীতি গ্রহণে ব্যর্থতা, মুদ্রার অবমূল্যায়ন এবং জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি।
সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য, দীর্ঘায়িত উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বিগত সরকারের আমলেও যেমন সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া হয়নি, তেমনি অন্তর্র্বর্তী সরকারের সময়ে কোনো সমন্বিত উদ্যোগের লক্ষণ নেই। যা দেশের আর্থিক ব্যবস্থায় ঝুঁকির শঙ্কা সৃষ্টি করেছে।