শেষ হেমন্তের হিম হাওয়ার সঙ্গে ঝরছে টিপটিপ বৃষ্টি। দেখা নেই সূর্যের। এমন পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে জেঁকে বসেছে শীত। এতে জবুথবু হয়ে পড়ছে জনজীবন। আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের তথ্য অনুযায়ী, এ অঞ্চলের তাপমাত্রার পারদ নিম্নমুখী। প্রতিদিনই একটু একটু কমছে। সেইসঙ্গে বাড়ছে কুয়াশার পরিধি। কুয়াশার কারণে দৃষ্টিসীমা কমে আসায় দিনেও আলো জ্বালিয়ে চলাচল করছে যানবাহনগুলো। এদিকে মঙ্গলবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৩ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে নওগাঁর বদলগাছীতে। এদিন রাজশাহীতে ১২ দশমিক ৩ ডিগ্রি, সর্বউত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে ১৩ দশমিক ৭ ডিগ্রি এবং বগুড়ার তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, তাপমাত্রা আরও কমে আসবে।
এদিকে, এ অঞ্চলের জেলাগুলোতে শীত জেঁকে বসায় কষ্টে দিনযাপন করছেন দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষ। শীতবস্ত্রও অপ্রতুল। ঠান্ডা ও কুয়াশার কারণে কাজে যেতে পারছেন না শ্রমিকরা। সেইসঙ্গে হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা।
নওগাঁ :দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের জনপদ নওগাঁয় জেঁকে বসেছে শীত। মঙ্গলবার সকাল ৯টায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৩ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে জেলার বদলগাছীতে। সোমবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে নওগাঁ পৌরসভার উকিলপাড়া, জগৎসিংহপুর, দয়ালের মোড় ও সদর উপজেলার বোয়ালিয়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, চারদিক কুয়াশায় ঢেকে আছে। রাস্তায় মানুষের চলাচল কম। রাস্তায় চলাচলকারী যানবাহনগুলোকে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলতে দেখা যায়।
বদলগাছী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের পর্যবেক্ষক মিজানুর রহমান বলেন, 'আকাশে মেঘ আছে। কুয়াশাও আছে। সোমবার আবহাওয়া পরিস্থিতি যে রকম ছিল, আজকেও তেমনই থাকবে। বৃষ্টিও হতে পারে। আকাশে মেঘ থাকার কারণে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা আজকে কিছুটা বেড়েছে। তবে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার ব্যবধান কমে এসেছে।'
হঠাৎ তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশায় নিম্ন আয়ের মানুষ বিপাকে পড়েছেন। রোদ না ওঠায় শহরে মানুষের আনাগোনাও কমেছে। যারা বের হয়েছেন, তারা মোটা ও গরম কাপড় পরে এসেছেন।
সকাল ৯টায় পৌরসভার জগৎপুরসিংহ এলাকায় কথা হয় ভ্যানচালক আবদুল হামিদের (৬০) সঙ্গে। তিনি বলেন, 'এত দিন ঠান্ডা পড়লেও দিনের বেলা সূর্যের দেখা মিলছিল। কালকা (গতকাল) থ্যাকে তো সূর্যের দেখাই নাই। কুয়াশাত রাস্তা ঠিকমতো দেখা যাওছে না। বড় গাড়ি সামনত থ্যাকে লাইট দিলে তো আরও কিছু দেখা যাওছে না। জান হাতত লিয়ে রাস্তাত ভাড়া মারোছি।'
রাজশাহী : জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বেড়েছে। কিন্তু শীতের তীব্রতা আগের দিনের চেয়ে বেশি। মঙ্গলবার রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার জানিয়েছে, সোমবার ভোর ৬টায় রাজশাহীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এদিন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল ১৯ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। মঙ্গলবার ভোরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
মঙ্গলবার সকালে কুয়াশার চাদরে মোড়া ছিল প্রকৃতি। দুপুরে এক ফালি রোদ্দুরের দেখা মিললেও কিছুক্ষণ পরেই মিয়ে যায় তা। এর আগে সোমবার সারাদিনেও রাজশাহীতে সূর্যের দেখা মেলেনি। দুপুরের পর হয় হালকা বৃষ্টি। সন্ধ্যার পর থেকেই কুয়াশায় ঢেকে যায় প্রকৃতি। রাত ১০টার পর দৃষ্টিসীমা কমে ২০ মিটারের নিচে নেমে যায়। সড়ক-মহাসড়কে গতি কমিয়ে চলাচল করে যানবাহন।
রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের আবহাওয়া সহকারী আনোয়ারা খাতুন বলেন, 'এখন তাপমাত্রা এ রকমই থাকবে। কিছুটা কমতেও পারে।'
এদিকে শীত নামলেও রাজশাহীতে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য সরকারিভাবে শীতবস্ত্রের ব্যবস্থা হয়নি। এখনো কোনো বরাদ্দ আসেনি বলে জানিয়েছেন জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা সালাহ উদ্দীন আল ওয়াদুদ। তিনি বলেন, 'এখনো শীতবস্ত্র বরাদ্দ আসেনি। বরাদ্দ এলে বিতরণ করা হবে।'
বগুড়া : মঙ্গলবার দুপুরের ঘন কুয়াশায় সূর্যের দেখা মেলেনি বগুড়ায়। সকাল থেকে সড়ক-মহাসড়কে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলছে যানবাহন। এদিন জেলায় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯২ শতাংশ। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। উত্তরের হিমেল বাতাস আর কনকনে শীতে জবুথবু এ জেলার জনজীবন।
আবহাওয়া অফিস বলছে, আগামী দুই-তিন দিনে তাপমাত্রা আরও কমে যেতে পারে। এমনকি বগুড়ার তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে আসতে পারে।
বগুড়া আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ আবদুর রহমান জানান, উত্তরের হিমেল বাতাসে শীত বেড়েছে। মঙ্গলবার বগুড়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগামী দুই থেকে তিন দিনে তাপমাত্রা আরও কমে যেতে পারে।
পঞ্চগড় প্রতিনিধি জানান, শীত প্রবণ জেলা পঞ্চগড়ে একদিনের ব্যবধানে তাপমাত্রার পারদ বেড়ে ১০ ডিগ্রি থেকে ১৩ ডিগ্রি হয়েছে। তবে তাপমাত্রা বাড়লেও, বেড়েছে কুয়াশার তীব্রতা। আর রাত থেকে সকাল পর্যন্ত অনুভূত হচ্ছে কনকনে শীত।
মঙ্গলবার সকাল ৯টায় তেঁতুলিয়ায় জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৩ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে সোমবার একই সময়ে রেকর্ড করা হয় ১০ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
দিন দিন শীতের দাপট বাড়ায় বিপাকে পড়েছেন জেলার নিম্ন আয়ের সাধারণ মানুষ। একই সঙ্গে ছিন্নমূল মানুষের দুর্ভোগ আরও বেড়েছে।
আবহাওয়া অফিসের তথ্য মতে, ৩০ নভেম্বর সকাল ৯টায় জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১০ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ১ ডিসেম্বর সকাল ৯টায় ১০ দশমিক ৫ ডিগ্রি, ২ ডিসেম্বর সকাল ৯টায় ১০ দশমিক ৯ ডিগ্রি, ৩ ডিসেম্বর সকাল ৯টায় ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। ৪ ডিসেম্বর সকাল ৯টায় তাপমাত্রা ছিল ১১ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ৫ ডিসেম্বর সকাল ৯টায় জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এদিকে ৬ ডিসেম্বর সকাল ৯টায় ১২ দশমিক ৩ ডিগ্রি, ৭ ডিসেম্বর ১২ দশমিক ৫ ডিগ্রি, ৮ ডিসেম্বর ১১ দশমিক ৫ ডিগ্রি, ৯ ডিসেম্বর ১০ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়।
তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের পর্যবেক্ষক রোকনুজ্জামান রোকন বলেন, সোমবার দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ২৪ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সন্ধ্যার পর থেকে সকাল পর্যন্ত তাপমাত্রার পারদ আরও কমে আসছে। সবচেয়ে বেশি ঠান্ডা অনুভূত হচ্ছে রাতে ও সকালে।