শুক্রবার, ০২ মে ২০২৫, ১৮ বৈশাখ ১৪৩২

দিলিস্নতে বাংলাদেশ হাইকমিশন ঘিরে আরএসএসের বিক্ষোভ

যাযাদি ডেস্ক
  ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
দিলিস্নতে বাংলাদেশ হাইকমিশন ঘিরে আরএসএসের বিক্ষোভ
নয়াদিলিস্নতে অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশন অভিমুখে পদযাত্রা করে কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠন আরএসএস -সংগৃহীত

কথিত 'হিন্দু নিপীড়নের' অভিযোগে ভারতের রাজধানী নয়াদিলিস্নতে অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশন অভিমুখে প্রতিবাদী পদযাত্রা ও মিছিল করেছে দেশটির কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠন আরএসএস-সমর্থিত সিভিল সোসাইটি অব দিলিস্ন।

মঙ্গলবার দুপুর ১২টার পর দিলিস্নর চাণক্যপুরী থানার তিন মূর্তি চক থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি শুরু হয়।

ভারতের ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) আদর্শিক গুরু আরএসএস গত শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলন করে এই কর্মসূচি ঘোষণা করে।

দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থা প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়া জানিয়েছে, সুশীল সমাজের সদস্যদের প্রতিবাদ মিছিলকে কেন্দ্র করে দিলিস্নতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের সামনে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। দিলিস্ন পুলিশের জ্যেষ্ঠ এক কর্মকর্তা বলেছেন, 'বিক্ষোভ মিছিলকে কেন্দ্র করে আমরা বাংলাদেশ হাইকমিশনের বাইরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছি। কাউকে আইনশৃঙ্খলা লঙ্ঘন করতে দেওয়া হবে না।'

এদিকে বিবিসি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, মিছিলে বিভিন্ন বয়সি পুরুষদের পাশাপাশি উলেস্নখযোগ্য সংখ্যক নারীসহ তিন থেকে চার হাজার মানুষ অংশ নেন। বিক্ষোভ মিছিলে প্রায় সবার হাতেই পস্ন্যাকার্ড ছিল। পস্ন্যাকার্ডে 'বাংলা বাঁচাও, বাঙালি বাঁচাও, বাঁচাও সনাতন!', 'বাংলাদেশ, একাত্তর মনে করো, জুলুমবাজি বন্ধ করো! সেভ বাংলাদেশি হিন্দুজ' লেখা কিছু স্স্নোগান দেখা গেছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, অন্তত গত এক যুগে দিলিস্নর বাংলাদেশ দূতাবাসের সামনে ভারতীয়দের কোনো বিক্ষোভ করতে দেখা যায়নি। এই বিক্ষোভ বহু বহু বছরের মধ্যে প্রথমবার। এই বিক্ষোভ কর্মসূচিতে আরএসএস নেতা রজনীশ জিন্দাল, ভারতের সাবেক ইন্টেলিজেন্স বু্যরো চিফ রাজীব জৈনসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।

গত শুক্রবার আরএসএসের দিলিস্ন শাখার গণমাধ্যম ও যোগাযোগ বিভাগের সহ-প্রধান রজনীশ জিন্দাল সংবাদ সম্মেলন করে বাংলাদেশ হাইকমিশন ঘেরাও কর্মসূচি ঘোষণা করেন। ওইদিন তিনি বলেছিলেন, 'আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসের দিন আগামী ১০ ডিসেম্বর "দিলিস্নর নাগরিক সমাজের" ব্যানারে বাংলাদেশ দূতাবাসে পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে।'

তিনি বলেছিলেন, 'বাংলাদেশে হিন্দু এবং অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্যদের বিরুদ্ধে চলমান নিপীড়নের ঘটনায় সমগ্র দেশ (ভারতের জনগণ) ক্ষুব্ধ এবং উদ্বিগ্ন। জিন্দাল বলেন, ''বাংলাদেশে হিন্দু ও অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্যদের বিরুদ্ধে নৃশংসতার ঘটনায় আমরা ১০ ডিসেম্বর দিলিস্নতে বাংলাদেশ দূতাবাসে একটি প্রতিবাদ মিছিল করব।''

দেশটির কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠন আরএসএসের এই নেতা তখন বলেন, 'আমরা বাংলাদেশে হিন্দুদের বিরুদ্ধে চলমান নৃশংসতা ও সহিংসতা বন্ধে অবিলম্বে হস্তক্ষেপ করার দাবি জানিয়ে জাতিসংঘ, ইউএনএইচআরসি, ডবিস্নউএইচও, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এবং এডিবিসহ সব আন্তর্জাতিক সংস্থার কাছেও স্মারকলিপি জমা দেব।'

এদিকে, বাংলাদেশি নাগরিকদের হোটেলের ঘর ভাড়া না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়ি শহরের হোটেল মালিকরা। তবে এখনো বাংলাদেশিদের জন্য হোটেল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেননি শৈল শহর দার্জিলিংয়ের হোটেল মালিকরা।

এর আগে ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলা এবং পশ্চিমবঙ্গের মালদার হোটেল মালিকরা ঘোষণা করেছিলেন যে বাংলাদেশি নাগরিকদের তারা ঘর দেবেন না। যদিও পরে আগরতলার হোটেল মালিকরা সেই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করেন।

শিলিগুড়ি শহর ও আশপাশের অঞ্চলের হোটেল মালিকদের সংগঠন গ্রেটার শিলিগুড়ি হোটেলিয়ার ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সচিব উজ্জ্বল ঘোষ বিবিসিকে বলেছেন, 'ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে সাম্প্রতিক যে সংঘাতের আবহাওয়া চলছে, বিশেষত সেদেশে ভারতের জাতীয় পতাকাকে অবমাননা এবং বাংলাদেশের নাগরিকদের একাংশের উসকানিমূলক বক্তব্যের প্রেক্ষিতে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে বাংলাদেশের নাগরিকদের আমাদের কোনো হোটেলে থাকতে দেওয়া হবে না।'

তিনি আরও বলছিলেন, 'শিলিগুড়ি ছাড়াও আমরা কোচবিহার এবং আলিপুরদুয়ারের হোটেল মালিকদের সংগঠনের সঙ্গেও যোগাযোগ করেছি। তারাও দ্রম্নত সিদ্ধান্ত নেবে এই ব্যাপারে। আর দার্জিলিংয়ের হোটেল মালিকদের সংগঠনও আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। তবে দার্জিলিংয়ের হোটেল মালিকরা এখনই এই সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন না বলেই আমাদের জানিয়েছেন।'

পর্যটন মৌসুমে দার্জিলিংয়ে প্রায় তিরিশ হাজারের মতো বাংলাদেশি পর্যটক আসেন বলে পর্যটন শিল্পের সূত্রগুলো জানিয়েছে। শিলিগুড়ি ও বাংলাদেশের মধ্যে সরাসরি রেল যোগাযোগ স্থাপিত হওয়ার ফলে বাংলাদেশি পর্যটকরা বেশি সংখ্যায় আসছিলেন।

এদের একটা বড় অংশ শৈল শহরগুলোতে যাওয়ার আগে শিলিগুড়ির হোটেলে ঘর নেন এক বা দুদিনের জন্য। আবার শিলিগুড়ি বৃহৎ ব্যবসায়িক কেন্দ্রও, তাই বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরাও শিলিগুড়িতে কাজে আসেন।

তবে শিলিগুড়ি এলাকার হোটেল মালিকরা বাংলাদেশিদের ঘর না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও তার প্রভাব খুব বেশি পড়ার কথা নয়, কারণ এমনিতেই এখন ভারতীয় ভিসা দেওয়ার কড়াকড়ি থাকায় ভ্রমণের জন্য বাংলাদেশিরা ভারতে প্রায় আসছেনই না।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে