শুক্রবার, ০২ মে ২০২৫, ১৮ বৈশাখ ১৪৩২

ঠান্ডাজনিত রোগের প্রকোপ বাড়ছে

বেশিরভাগই শ্বাসতন্ত্রের জটিলতায় ভুগছে, সপ্তাহের ব্যবধানে রোগী বেড়েছে ৩ গুণ
রেজা মাহমুদ
  ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
ঠান্ডাজনিত রোগের প্রকোপ বাড়ছে
সারাদেশে শীতের প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, সর্দি-কাশি ও জ্বরে শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছে। কয়েক দিনের ব্যবধানে রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে বেড়েছে শিশু রোগীর সংখ্যা। ছবিটি ঢাকা শিশু হাসপাতাল থেকে তোলা -নাজমুল ইসলাম

শীতের শুরুতেই রাজধানীসহ সারা দেশে বেড়েছে ঠান্ডাজনিত রোগের প্রকোপ। বিশেষ করে বয়স্ক ও শিশুদের আক্রান্তের হার আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। চিকিৎসকরা বলছেন এসব রোগীর বড় একটি অংশই শ্বাসতন্ত্রের নানা জটিলতা নিয়ে হাসপাতালে আসছেন। ঠান্ডা আবহাওয়ার পাশাপাশি বায়ুমন্ডলের অস্বাস্থ্যকর পরিস্থিতি এজন্য দায়ী।

এ ছাড়া রোগীদের আরেকটি অংশ আসছে জ্বর নিয়ে। যাদের বেশিরভাগই শীতকালীন ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত। যেমন এডিনোভাইরাস, রাইনোভাইরাস ও ইনফ্লুয়েঞ্জাসহ আধুনা কোভিড-১৯। কিন্তু একই সময় ডেঙ্গুর প্রকোপ থাকায় রোগীরা চিকিৎসা নিতে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভুগছেন। ফলে হাসপাতালে আসছেন দেরি করে। এতে রোগীর ঝুঁকি বাড়ছে।

মঙ্গলবার রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রায় ৩গুণ বেড়েছে ঠান্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা। পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে রাজধানীর ফার্মেসিগুলোতে শ্বাসতন্ত্রের চিকিৎসায় ব্যবহৃত নেবুলাইজারের ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে না। যেমন নেবুলাইজারে জন্য বহুলব্যবহৃত সাল্টারিন বা সলুয়েশন নেই অধিকাংশ ফার্মেসিতে।

চিকিৎসকার জানিয়েছে এ সময়পরিবেশে তাপমাত্রা কমে যাওয়ার পাশাপাশি বায়ুমন্ডলের আর্দ্রতাও কমে যাচ্ছে এবং ধুলাবালি বাড়ছে। ফলে বিভিন্ন অ্যালার্জিজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। এ ছাড়া শীতে কিছু কিছু ভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ে। সব মিলিয়ে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।

রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, সর্দি-কাশি, জ্বর, নিউমোনিয়া, টনসিলাইটিস, ব্রঙ্কিওলাইটিস, সাইনোসাইটিস, অ্যাজমা, চর্মরোগ, হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট ও ডায়রিয়াসহ শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিতে এসেছেন। যাদের অনেকেই জরুরিভিত্তিতে হাসপাতালে ভর্তি করতে হচ্ছে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, প্রতিদিন প্রায় শতাধিক শিশু শিতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে এখানে চিকিৎসা নিতে আসছে। বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটেও (ঢাকা শিশু হাসপাতাল) একই পরিস্থিতি। গত এক সপ্তাহে এখানে চিকিৎসা নিতে আসা ৮০ শতাংশই এ জাতীয় রোগে আক্রান্ত।

রাজধানীর শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের কর্তব্যরত চিকিৎসকরা জানিয়েছেন ঠান্ডা বাড়ায় বর্তমানে রোগীর সংখ্যা অনেক বেড়েছে। বিশেষ গত কয়েকদিনে প্রায় ৪ গুণ বেড়েছে ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা।

ঢাকা শিশু হাসপাতালের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. সৈয়দ শফি আহমেদ বলেন, শীতে সর্দি, কাশি, ব্রঙ্কিওলাইটিস ও এজমার প্রকোপ বাড়ছে। চর্মরোগ ও ডায়রিয়াও বাড়ছে। শিশুদের ঠান্ডা থেকে দূরে রাখতে হবে। গরমের কাপড় পরিধান করাতে হবে। বিশুদ্ধ পানি খেতে হবে। নাক দিয়ে পানি এলে নরমাল স্যালাইন দিয়ে নাক পরিষ্কার করতে হবে। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া এন্টিহিস্টামিন ও এন্টিবায়োটিক না খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, শ্বাসকষ্ট হলে ডাক্তারের পরামর্শ

অনুযায়ী ওষুধ খাওয়াতে হবে।

চর্ম ও যৌন রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মোড়ল নজরুল ইসলাম বলেন, শীতের সময় ধুলাবালি ও বাতাসের শুষ্কতা কমে যায়। এ কারণে শিশুদের চর্মরোগের পাশাপাশি চুলকানি বেশি হয়। বাচ্চাদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা ও ধুলাবালি থেকে দূরে রাখতে হবে। বেশি চুলকানি হলে রাতে এক চামচ এন্ট্রি হিস্টাসিন সিরাপ খাওয়ানো যাবে। এরপরও না করলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। শিশুদের প্রতিকার নিশ্চিত করতে হবে।

স্যার সলিমুলস্নাহ মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক ডা. মো. মাজহারুল শাহীন বলেন, এ সময় আমাদের শরীরের হেমোস্ট্যাসিস সিস্টেম অর্থাৎ শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখার সিস্টেম তাপমাত্রার হঠাৎ এ পরিবর্তনে চট করে মানিয়ে নিতে পারে না। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্করা এজন্য স্বাস্থ্যজনিত এসব সমস্যায় বেশি আক্রান্ত হন। যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, অর্থাৎ ইমিউনো সাপ্রেসিড যারা, তারাও অসুখে বেশি আক্রান্ত হন।

এ ছাড়া এই চিকিৎসক জানান, আমাদের শরীরের কোষের পাতলা ঝিলিস্ন মিউকোমাতে ভাইরাস সহজেই সংক্রমণ সৃষ্টি করে রোগ সৃষ্টি করে। এ আবরণী ক্ষতিগ্রস্ত হলে ব্যাকটেরিয়াও সহজে শরীরে ঢুকে পড়ে আমাদের রোগাক্রান্ত করে। সামান্য সর্দি, হাঁচি, নাক বন্ধ, কাশি থেকে সমস্যা সৃষ্টি করে। জটিলতাস্বরূপ সাইনোসাইটিস এমনকি প্রাণঘাতী নিউমোনিয়াও কারও কারও হয়ে থাকে।

\হ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে