ভারতীয় আগ্রাসন ও বাংলাদেশের বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য সন্ত্রাসের প্রতিবাদে আজ বুধবার ঢাকা থেকে আগরতলা অভিমুখে আখাউড়া সীমান্ত পর্যন্ত লংমার্চ করবে বিএনপির ৩ অঙ্গসংগঠন যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল।
এ প্রসঙ্গে যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন বলেন, এই লংমার্চে তিনটি সমাবেশ হবে। সকাল ৮টায় নয়া পল্টনে সমাবেশ করে লংমার্চের বহর আখাউড়া অভিমুখে যাত্রা শুরু করবে। কাঁচপুর-নরসিংদী হয়ে ভৈরবে অনুষ্ঠিত হবে দ্বিতীয় সমাবেশ এবং সর্বশেষ সমাবেশ হবে আখাউড়া সীমান্তে। শান্তিপূর্ণ এই কর্মসূচিতে ব্যাপক উপস্থিতি ঘটবে বলে জানান নয়ন।
জানা গেছে, ছাত্র-জনতার অভু্যত্থানে শেখ হাসিনা
সরকারের পতনের পরও ভারত তাদের অবস্থান না বদলানোয় বিস্মিত হয়েছে বিএনপি। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে দেশটির বক্তব্য-বিবৃতি দলটির ভেতরে বেশ ক্ষোভ তৈরি করেছে। ফলে বিএনপিতে ভারতবিরোধী অবস্থান জোরালো হয়েছে, যার পরিপ্রেক্ষিতে কর্মসূচি দিয়েছে দলটি।
জানা গেছে, গত সংসদ নির্বাচনের আগ থেকে বিএনপির ভারতবিরোধী মনোভাব বাড়তে থাকে। কিন্তু এই ইসু্যতে কোনো কর্মসূচিতে যায়নি দলটি। ৫ আগস্টের পর পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে দুই পক্ষের এক ধরনের সমঝোতা হতে পারে- এমন গুঞ্জন শোনা গেলেও বাস্তবিক অর্থে সে ধরনের কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি।
বিএনপির দায়িত্বশীল একজন নেতা বলেন, প্রাথমিকভাবে তাদের তিন সংগঠন ভারতবিরোধী কর্মসূচি দিয়েছে। এ ধরনের কর্মসূচি সামনে আরও আসবে। এক পর্যায়ে বিএনপির পক্ষ থেকেও একই ধরনের কর্মসূচি পালন করা হতে পারে।
তিন সংগঠনের নেতাকর্মীরা জানান, সকাল আটটায় নেতাকর্মীরা নয়াপল্টন থেকে লংমার্চ শুরু করে মতিঝিল শাপলা চত্বর হয়ে কাঁচপুর ব্রিজ দিয়ে ভুলতা গাউছিয়া হয়ে পাঁচদোনা হয়ে ভৈরব বাজারে সমাবেশ করবেন তিন সংগঠনের নেতাকর্মীরা। সেখান থেকে বি-বাড়িয়ার স্থলবন্দর আখাউড়া সীমান্তে পৌঁছানোর কথা রয়েছে। এই কর্মসূচির মাধ্যমে জাতীয় স্বার্থে দেশের জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বানের পাশাপাশি ভারতের নানান ষড়যন্ত্র এবং উসকানির বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানা গেছে।
এদিকে এই লংমার্চ ঘিরে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে বিএনপির তিন সংগঠন। শত শত গাড়ি, খোলা ট্রাক আর মোটর সাইকেল যোগে নেতাকর্মীরা এই কর্মসূচিতে অংশ নেবেন। ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন থানা, ওয়ার্ড কমিটির নেতাকর্মী আর সমর্থকরা স্বতঃস্ফূতভাবে এই কর্মসূচিতে অংশ নেবেন। এছাড়া পথে পথে বিভিন্ন জেলার অন্তর্গত বিভিন্ন সাংগঠনিক ইউনিটের নেতাকর্মীরা এই বহরে যোগদান করবেন। এ জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে দেশের পক্ষে, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নেওয়া সাধারণ ছাত্র-যুবরাও এই কর্মসূচিতে অংশ নিতে পারবেন বলে জানা গেছে। এছাড়া সার্বিক প্রস্তুতি হিসেবে ব্যানার. পোস্টার, ফেস্টুন, পস্নাকার্ডে ভারতের বাংলাদেশ বিরোধী বিভিন্ন অপতৎপরতার বিষয়গুলো ফুটিয়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েরেছ। যেখানে বিগত দিনে তিনটি জাতীয় নির্বাচনে ভারতের নগ্ন হস্তক্ষেপ, সীমান্ত হত্যা, বাংলাদেশের জনগণের পরিবর্তে একটি দলের পক্ষে অবস্থান নিয়ে বাংলাদেশ বিরোধী বিভিন্ন গুজব ছড়ানো, ভারতের সংবাদ মাধ্যমে বাংলাদেশকে নিয়ে অপপ্রচার, ন্যায্য পানির হিস্যা না দেওয়া, বাংলাদেশে থাকা অবৈধ ভারত অভিবাসী, ভারতে ফ্যাসিবাদ শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়া, সেখানে আওয়ামী অপতৎপরতা চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দেওয়ার প্রতিবাদ জানানো হবে। এছাড়া আগরতলায় বাংলাদেশের হাইকমিশনে হামলা, ভাঙচুর ও পতাকা অবমাননা করার প্রতিবাদও থাকবে এই লংমাচ কর্মসূচিতে।
এদিকে ঢাকায় ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রির সফরের ঠিক আগে গত সোমবার ভারতীয় দূতাবাস অভিমুখে পদযাত্রা করে বিএনপি দেশটিকে এক ধরনের সতর্কবার্তা দিয়েছে। বিএনপির উচ্চ পর্যায়ের নেতারা বলেছেন, পতিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভারতের সমর্থনের কড়া জবাব এবং স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব প্রশ্নে বিএনপি দল-মত-নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ এ দুটি বিষয়ে বার্তা দেওয়া হয়েছে। এসব কর্মসূচির মাধ্যমে বিএনপির ভারতবিরোধী দৃঢ় অবস্থান জনগণ ও বিদেশিদের কাছে স্পষ্ট হয়েছে।