রোববার, ০৪ মে ২০২৫, ২০ বৈশাখ ১৪৩২

প্রেম ও দ্রোহের কবি হেলাল হাফিজ আর নেই

যাযাদি ডেস্ক
  ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
প্রেম ও দ্রোহের কবি হেলাল হাফিজ আর নেই
প্রেম ও দ্রোহের কবি হেলাল হাফিজ আর নেই

'যে জলে আগুন জ্বলে' কবিতাগ্রন্থের স্রষ্টা কবি হেলাল হাফিজ পাড়ি জমিয়েছেন অনন্ত কবিতালোকে। পৃথিবীর সব প্রেম আর যুদ্ধ সাঙ্গ করে শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে তিনি মারা যান। অকৃতদার কবির বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর। জীবনের শেষ দিনগুলো তার কেটেছিল ঢাকার শাহবাগের সুপার হোম নামের

এক হোস্টেলে।

'এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়/এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়'- উনিশশ' একাত্তরে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে 'নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়' শিরোনামের এই কবিতা লিখে ব্যাপক পরিচিত ও সমাদৃত হয়েছিলেন কবি হেলাল হাফিজ। ষাটের দশকের অন্যতম কবির কবিতার এ পঙ্‌ক্তি দুটি ঢাকার দেয়ালে দেয়ালে শোভা পেয়েছিল। পরবর্তীতে কবিতাটির ঠাঁই হয় 'যে জলে আগুন জ্বলে' কবিতাগ্রন্থে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার দুপুরে বাথরুমে পড়ে গিয়ে কবির অনেক রক্তক্ষরণ হয়। পরে কবিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

বিএসএমএমইউ পরিচালক (হাসপাতাল) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল রেজাউর রহমান বলেন, 'বেলা ২টা ৩৫ মিনিটে কবিকে হাসপাতালে আনা হয়েছিল। তার আগেই তার মৃতু্য হয়। উনাকে কয়েকজন ব্যক্তি নিয়ে আসেন মৃত অবস্থায়। উনারা পরিবারের সদস্য নন, উনার হোস্টেলের প্রতিবেশী হতে পারেন। বিষয়টি আমি শাহবাগ থানার ওসিকে জানিয়েছি। সে অনুযায়ী উনারা দ্রম্নত এসে প্রয়োজনীয় ফরমালিটিজ সারবেন।'

দ্রোহ আর প্রেমের কবি হেলাল হাফিজের জন্ম ১৯৪৮ সালের ৭ অক্টোবর নেত্রকোনার আটপাড়া উপজেলার বড়তলী গ্রামে। শৈশব, কৈশোর, তারুণ্য কেটেছে নিজের শহরেই। ১৯৬৭ সালে নেত্রকোনা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ভর্তি হন। উত্তাল ষাটের দশক হয়ে ওঠে তার কবিতার উপকরণ। ১৯৬৯ সালে গণ-অভু্যত্থানের সময় রচিত 'নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়' কবিতাটি তাকে কবিখ্যাতি এনে দেয়। তার কবিতা হয়ে ওঠে মিছিলের স্স্নোগান।

কালজয়ী কবিতার এ লাইন দুটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। পরবর্তীতে নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলেন সময়ও কবিতাটি মানুষের মাঝে তুমুল সাড়া জাগায়।

১৯৮৬ সালে প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ 'যে জ্বলে আগুন জ্বলে' কবিকে দিয়েছে অসামান্য খ্যাতি। এরপর বইটির ৩৩টির বেশি সংস্করণ বেরিয়েছে। শুধু কবিতার পাঠকের নিরিখে নয়, যে ব্যক্তি অতটাও সাহিত্যের খোঁজখবর করেন না, এমন অনেকের হৃদয়েও দোলা দিয়েছে হেলাল হাফিজের পঙ্‌?ক্তি। 'যে জলে আগুন জ্বলে' কাব্যগ্রন্থভুক্ত প্রতিটি কবিতার শেষে উলিস্নখিত তারিখ অনুযায়ী কবিতাগুলো লেখা হয়েছে ১৯৬৯ থেকে ১৯৮৫ সালের মধ্যে।

লড়াইয়ে, সংগ্রামে, প্রেমে-বিরহে, দ্রোহে যাপিত জীবনের পরতে পরতে হেলাল হাফিজ স্পর্শ দিয়ে যান। 'নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়'র মতো 'অগ্নু্যৎসব' কবিতাও শরীরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে আগুন জ্বেলে দেয়। এ কবিতায় কবি বলেছেন, 'ছিল তা এক অগ্নু্যৎসব, সেদিন আমি/সবটুকু বুক রেখেছিলাম স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্রে? জীবন বাজি ধরেছিলাম প্রেমের নামে/রক্তঋণে স্বদেশ হলো,/তোমার দিকে চোখ ছিল না/জন্মভূমি সেদিন তোমার সতীন ছিলো।' কেবল মুক্তিযুদ্ধ কিংবা গণ-অভু্যত্থানের মতো প্রেক্ষাপটে নয়, যেকোনো অন্যায়ে-শোষণে-অবিচারে হেলাল হাফিজের এ উচ্চারণ সবার হয়ে ওঠে।

আড়াই দশক পর ২০১২ সালে তিনি পাঠকদের জন্য আনেন দ্বিতীয় বই 'কবিতা ৭১'। তৃতীয় ও সর্বশেষ বই 'বেদনাকে বলেছি কেঁদো না' প্রকাশিত হয় ২০১৯ সালে।

সমালোচকদের বিচারে অবস্থান যেখানেই হোক না কেন, জনপ্রিয়তার বিচারে বাংলাদেশের শীর্ষ কবিদের সারিতেই থাকবে তার নাম।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে