রোববার, ০৪ মে ২০২৫, ২০ বৈশাখ ১৪৩২
তাপমাত্রা ৮ ডিগ্রির ঘরে

৩ জেলায় বইছে মৌসুমের প্রথম মৃদু শৈত্যপ্রবাহ

যাযাদি ডেস্ক
  ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
৩ জেলায় বইছে মৌসুমের প্রথম মৃদু শৈত্যপ্রবাহ
সীমান্তবর্তী জেলা কুড়িগ্রামে জেঁকে বসেছে শীত। কনকনে হিমেল হাওয়ায় বিপর্যস্ত জনজীবন। সকাল থেকে সূর্যের দেখা না পাওয়া আর বৃষ্টির মতো কুয়াশা ঝরায় চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন মানুষ। ছবিটি শুক্রবার তোলা -স্টার মেইল

পৌষ ছুঁইছুঁই দিনে দেশের তিন জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। জেলা তিনটি হচ্ছে- পঞ্চগড়, রাজশাহী ও চুয়াডাঙ্গা। আবহাওয়া অফিস আভাস দিয়েছে, শৈত্যপ্রবাহ আরও বিস্তৃত হয়ে দুই-তিন দিন চলতে পারে বলে। শুক্রবার সকালে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় তাপমাত্রার পারদ নেমে ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড হয়েছে। একই সময় রাজশাহীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৯ দশমিক ৭ এবং চুয়াডাঙ্গায় ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এদিন ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর দেশের সর্বোচ্চ ২৯ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় কক্সবাজারের টেকনাফে।

এদিকে, গভীর রাত থেকে সকাল পর্যন্ত কুয়াশায় ঢাকা থাকছে দেশের বেশিরভাগ জনপদ। কোথাও কোথাও সূর্যের দেখাও মিলছে না দুপুর পর্যন্ত। ঘন কুয়াশার কারণে দৃষ্টিসীমা কমে যাওয়ায় যানবাহনগুলোকে দিনেও হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। সেইসঙ্গে বিমান ওঠানামা ব্যাহতসহ দীর্ঘসময় ধরে বন্ধ থাকছে ফেরি চলাচল।

অন্যদিকে, শীতজনিত রোগের প্রকোপ শুরু হয়েছে বিভিন্ন জেলায়। বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশু বয়স্করা। সেইসঙ্গে হাসপাতালে বাড়ছে রোগীর ভিড়। কোনো কোনো এলাকায় শীতবস্ত্রের জন্য হাজাকার করছেন দরিদ্র ও ছিন্নমূল মানুষ। কেউ কেউ খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। শীতের কারণে কাজে যেতে না পারায় দুর্ভোগ নেমে এসেছে শ্রমজীবী পরিবারে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডবিস্নউটিসি) আরিচা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, কয়েক দিন ধরে ঘন কুয়াশায় এ নৌপথে ফেরি চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে। গত তিন দিনের মতো বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে পদ্মা ও যমুনা নদী অববাহিকায় ঘন কুয়াশার সঙ্গে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মতো শিশির পড়তে থাকে। রাত বাড়ার সঙ্গে কুয়াশার ঘনত্ব বাড়তে থাকে। এমন অবস্থায় ফেরি চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। একপর্যায়ে সামনে সামান্য দূরের কিছুই যখন দেখা যাচ্ছিল না, তখন ফেরিসহ সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ করা হয়।

পরে কুয়াশা কেটে গেলে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা পর সকাল সাড়ে ৭টার দিকে নৌপথটিতে ফেরিসহ অন্য নৌযান চলাচল স্বাভাবিক হয়। কয়েক দিন ধরেই তীব্র শীত ও কুয়াশায় ভোগান্তি পোহাচ্ছেন ঘাটে আটকাপড়া যানবাহনের যাত্রী-চালক-পরিবহন শ্রমিকরা।

পঞ্চগড় প্রতিনিধি জানান, দেশের উত্তরের সীমান্ত জেলা পঞ্চগড়ে শুরু হয়েছে মৌসুমের প্রথম শৈত্যপ্রবাহ। শুক্রবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করেছে আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার।

আবহাওয়া অফিসের হিসেবে এটি মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। বৃহস্পতিবার এখানে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ১২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। হঠাৎ করে শৈত্যপ্রবাহ শুরু হওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন ছিন্নমূল ও খেটে খাওয়া মানুষগুলো। সকালে তীব্র শীত উপেক্ষা করে পেটের তাগিদে ঘর থেকে বের হতে হচ্ছে শ্রমজীবী মানুষদের। রয়েছে শীতবস্ত্রের তীব্র সংকট। সরকারিভাবে এখন পর্যন্ত খুব কম সংখ্যক শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। তবে বেসরকারি পর্যায়ে শীতবস্ত্র বিতরণ শুরু করেছে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান।

শুক্রবার ভোররাত থেকে এ জনপদে শুরু হয় ভারী কুয়াশা। যা অব্যাহত থাকে সকাল পর্যন্ত। তবে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে কুয়াশা সরে যায়। বেলা যত বেড়েছে ততই বেড়েছে সূর্যের তাপ। দুপুরে প্রখর রোদে ফাঁকা জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকাটাই দায় হয়ে পড়ে। বিকাল ৩টায় দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২৬.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয় তেঁতুলিয়ায়।

এদিকে শীতের তীব্রতা বাড়ায় সঙ্গে সঙ্গে শীতবস্ত্রের অভাবে চরম ভোগান্তিতের রয়েছে পঞ্চগড়ের শীতার্ত মানুষগুলো। নিম্ন আয়ের মানুষ একটি কম্বলের জন্য তাকিয়ে আছে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগের দিকে। কিন্তু সে হিসেবে এখনও শীতবস্ত্র বিতরণ শুরু হয়নি। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে এখন পর্যন্ত দুই হাজার শীতবস্ত্র ও নগদ ১৫ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। বেসরকারিভাবে এ পর্যন্ত চার হাজারের মতো শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে।

পাঁচ ঘণ্টা পর নৌযান চলাচল স্বাভাবিক

দৌলতদিয়া ফেরিঘাট এলাকার বাসিন্দা ও ঘাটশ্রমিক আলাউদ্দিন খান বলেন, 'টানা চার দিন ধরে ঘন কুয়াশার কারণে মধ্যরাত থেকে পরদিন সকাল পর্যন্ত ফেরি চলাচল বন্ধ থাকায় দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে ঘাটে অপেক্ষায় থাকা যানবাহনের যাত্রীদের। বিশেষ করে দূরপালস্নার যাত্রীবাহী পরিবহনের নারী ও শিশু যাত্রীদের বিপাকে পড়তে হয়। প্রকৃতির কাজ সারতে তাদের ঘাট এলাকার এ বাড়ি থেকে সে বাড়িতে ছুটতে হয়। আবার গভীর রাতে পরিবহণ থেকে নেমে যাওয়ায় ছিনতাই-চুরির ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।'

জরুরি কাজে রাজধানী ঢাকার রামপুরা এলাকায় যাচ্ছিলেন রাজবাড়ীর হৃদয় সূত্রধর। তিনি ভোরে রওনা হলেও কুয়াশায় ফেরিসহ লঞ্চ বন্ধ থাকায় উপায় না পেয়ে ঘাটে অন্য যাত্রীদের মতো ফেরি ছাড়ার অপেক্ষায় থাকেন। তিনি বলেন, 'রাতে জরুরি ফোন পেয়ে এখন ঢাকা যেতে হচ্ছে। সকাল ১০টায় তার রামপুরায় পৌঁছানোর কথা। আগেভাগে রওনা করেও কোনো লাভ হলো না।'

দৌলতদিয়া লঞ্চঘাট এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত আরিচা লঞ্চ মালিক সমিতির ব্যবস্থাপক নুরুল আনোয়ার মিলন বলেন, 'প্রায় প্রতিদিনই মধ্যরাত থেকে লঞ্চ বন্ধ থাকছে। দুর্ঘটনার ঝুঁকি এড়াতে কর্তৃপক্ষের নির্দেশে আমরা প্রতিদিন মধ্যরাত থেকে লঞ্চ চালানো বন্ধ রাখছি। আর এ সময় জরুরি কাজে ছুটে চলা যাত্রীদের লঞ্চের পরিবর্তে ফেরিতে নদী পাড়ি দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকি।'

বিআইডবিস্নউটিসি আরিচা কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) নাসির মোহাম্মদ চৌধুরী বলেন, ঘন কুয়াশার কারণে ফেরির মাস্টাররা (চালক) পথ দেখতে না পাওয়ায় দুর্ঘটনা এড়াতে ফেরি চলাচল বন্ধ রাখতে হচ্ছে। এতে যানবাহন পারাপার ব্যাহত হওয়ায় সরকারিভাবে রাজস্ব আদায়ও কম হচ্ছে।'

স্পিডবোট বন্ধ, কুমিরা ঘাটে যাত্রীদের ভিড়

এদিকে, শুক্রবার চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডের কুমিরা নৌঘাটে টিকিট কাউন্টারের সামনে সন্দ্বীপগামী যাত্রীদের দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে। কুমিরা জেটির মালামাল তোলার ঘাটেও মানুষের ভিড়, কিন্তু টিকিট পাওয়া যাচ্ছে না।

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সাগরে ঘন কুয়াশা থাকায় স্পিডবোট ছাড়ছে না তারা। জোয়ার খালে প্রবেশ করলে মালবাহী ও যাত্রীবাহী ট্রলার ছাড়া হবে। পর্যাপ্ত নৌযান ছাড়তে না পারায় মানুষের চাপ বেড়েছে।

স্কুল-কলেজে শীতকালীন ছুটি শুরু হয়েছে। ফলে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সন্দ্বীপ বেড়াতে যাচ্ছেন অনেকে। চট্টগ্রাম নগরের হালিশহর থেকে এসে ঘাটে অপেক্ষা করছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া শিক্ষার্থী মিনহাজ উদ্দিন। তিনি জানান, বৃহস্পতিবার বিকালে তিন বন্ধুকে নিয়ে ঘাটে এসেছিলেন তিনি। প্রচুর যাত্রী ছিল। ফলে রাত ৯টা পর্যন্ত অপেক্ষা করেও সন্দ্বীপ যেতে পারেননি। শুক্রবার সকাল ৭টায় এসে দেখেন অবস্থা গতকালের চেয়েও বেগতিক। কোনো নৌযান ছাড়ছে না। মালবাহী ট্রলারের টিকিট পেয়েছেন।

মালবাহী ট্রলারের মাস্টার কুতুব উদ্দিন সুজন জানান, যে কয়টি ট্রলার রয়েছে, তার ধারণক্ষমতার নির্ধারিত টিকিট বিক্রি করেছেন তারা। যাত্রীদের প্রচুর চাপ। মালবাহী ট্রলারে টিকিট ছাড়াও জোর করে উঠে যেতে চাচ্ছেন যাত্রীরা।

ঘাটের ইজারাদার জগলুল হোসাইন নয়ন বলেন, স্কুল-কলেজের শীতকালীন ছুটি হওয়ায় যাত্রীদের কিছুটা চাপ রয়েছে। কিন্তু সমস্যা হয়েছে কুয়াশার কারণে নৌযান ছাড়তে না পারা। নৌযান চলাচল শুরু হলে যাত্রীদের দ্রম্নত পারাপার করা সম্ভব হবে।

ঘন কুয়াশায় বাড়ছে দুর্ঘটনা, রবিশস্যের ক্ষতি

অন্যদিকে, ঘন কুয়াশায় বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে সড়ক, বেড়েছে দুর্ঘটনা। সেই সঙ্গে তীব্র শীতের প্রভাব পড়েছে রবি ফসলের মাঠে- ধানের বীজতলায়। ভোর থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত এবং সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাতও ঘন কুয়াশায় ঢেকে থাকছে নওগাঁ জেলার জনপদ। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কুয়াশা কমলেও আকাশে হালকা মেঘ থাকার কারণে সূর্যের দেখা মিলছে না। দুপুরে তাপমাত্রা কিছু বাড়লেও বিকালের দিকে আবারও শীত অনুভূত হতে শুরু করে।

বদলগাছী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের উচ্চ পর্যবেক্ষক মিজানুর রহমান বলেন, 'শুক্রবার সকালে জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত এক সপ্তাহে জেলার তাপমাত্রা উঠানামা করছে ৯ থেকে ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘরে। এর মধ্যে দুই দিন দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এর আগে শনিবার মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস।'

তিনি বলেন, 'ঘন কুয়াশার সঙ্গে উত্তরের হিমেল বাতাস প্রবাহিত হওয়ায় তাপমাত্রা নিম্নমুখী হতে শুরু করেছে। তাপমাত্রার ব্যবধান কমে যাওয়ায় তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে এখানে।'

এদিকে ঘন কুয়াশায় দিনের বেলায়ও যানবাহনে লাইট জ্বালিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে। জেলার সড়কে দুর্ঘটনার হারও বেড়েছে। এর মধ্যে মান্দা উপজেলায় সোমবার নওগাঁ-রাজশাহী মহাসড়কে বাস-প্রাইভেট কার সংঘর্ষে দুইজন, পরদিন মঙ্গলবার দেলুয়াবাড়ী-চৌবাড়ীয়াহাট আঞ্চলিক সড়কে ট্রাক-মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে তিন জন প্রাণ হারিয়েছেন।

বুধবার সকালে পোরশা উপজেলায় বাস উল্টে এক নারী, রানীনগরে ভটভটি উল্টে এক ব্যবসায়ীর মৃতু্য হয়েছে। এর আগে ৩ ডিসেম্বর ভোরে মহাদেবপুর উপজেলায় ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে প্রাণ হারিয়েছেন চালক ও সহকারী।

এ পরিস্থিতিতে সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়ে জেলা প্রশাসক আব্দুল আউয়াল বলেন, 'সাতদিন ধরে ঘন কুয়াশার কারণে জেলার জনজীবনে দুর্ভোগের পাশাপাশি সড়কে দুর্ঘটনাও বেড়েছে। তা কমাতে এর মধ্যেই সতর্কতামূলক মাইকিং করা হয়েছে, বিভিন্নভাবে প্রচার চালানো হচ্ছে। এছাড়া ট্রাফিক বিভাগের মাধ্যমে চালকদের সচেতন করতেও বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।'

এদিকে চরম শীত কষ্টে পড়েছেন কৃষি শ্রমিক ও রিকশা ভ্যান চালকসহ জেলার খেটে খাওয়া দিনমজুররা। তীব্র শীতে তাদের ঘর থেকে বের হওয়া কষ্টকর হয়ে পড়েছে। শীতবস্ত্রের অভাবে দারুণ কষ্টে আছেন দরিদ্র ছিন্নমূল মানুষজন।

শহরতলীর রামভদ্রপুর গ্রামের ব্যাটারিচালিত রিকশার চালক টুকু মিয়া বলেন, 'অনেক বেলা পর্যন্ত ঘন কুয়াশায় সব কিছু ঢেকে থাকছে। দিনের বেলাতেও লাইট জ্বালিয়ে গাড়ি চালাতে হচ্ছে। কনকনে শীতে লোকজন ঘরের বাইরে খুব কম আসায় আয় অর্ধেকে নেমেছে।'

এদিকে শীতের প্রভাব পড়েছে ফসলের ক্ষেতেও। কনকনে ঠান্ডায় ব্যাহত হচ্ছে চলতি মৌসুমের আলু, সরিষা, পেঁয়াজ, গমসহ বিভিন্ন শাকসবজির চাষাবাদ।

আত্রাইয়ের কৃষক মোস্তাক আহমেদ বলেন, 'ঘন কুয়াশার কারণে রোপা আমনের কাটা-মাড়াই অনেকটা ধীর গতিতে চলছে। তীব্র শীতের কারণে শ্রমিকরা মাঠে নামতে চান না। এছাড়া ঘন কুয়াশা ও রৌদ্র না থাকায় জমিতে কেটে রাখা ধান শুকাতেও বিলম্ব হচ্ছে।'

এ অবস্থায় ফসল রক্ষায় আলু, সরিষা, পেঁয়াজসহ রবি শস্য রক্ষায় ছত্রাকনাশক স্প্রে করা এবং ইরি-বোরো বীজতলা ঘন কুয়াশার জন্য পলিথিনে মুড়িয়ে রাখাসহ বীজতলা পানি দিয়ে ডুবিয়ে রাখার পরামর্শ দেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, নওগাঁর উপ-পরিচালক আবুল কালাম আজাদ।

কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, জেলায় ১ লাখ ৯৩ হাজার হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো চাষের জন্য ১০ হাজার হেক্টর জমিতে ইরি-বোরোর বীজতলা এবং আলু, সরিষা, পেঁয়াজ, গম, ভুট্টা ১ লাখ ১১ হাজার হেক্টর জমিতে রবিশস্য চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৯০ ভাগ রবিশস্যের রোপণ সম্পন্ন হয়েছে।

এদিকে জেলার ৯৯ ইউনিয়ন ও ৩ পৌরসভার দরিদ্র শীতার্ত মানুষের জন্য ১ লাখ শীতবস্ত্র চেয়ে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। শীতবস্ত্র পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা বিতরণ করা হবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক আব্দুল আউয়াল।

শৈত্যপ্রবাহ চলতে পারে আরও দুই-তিন দিন

আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ বলেন, 'শৈত্যপ্রবাহ আরও বিস্তার হবে। কাল, পরশু তাপমাত্রা কমবে। এরপর তিন থেকে চার দিন বাড়ার পর আবার কমবে। কুয়াশার কারণে শীত বেশি লাগবে।'

আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, পঞ্চগড়, রাজশাহী, চুয়াডাঙ্গা জেলার ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে; তা অব্যাহত থাকতে পারে। শুক্রবার সকাল ৬টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে সর্বনিম্ন ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ছিল পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায়।'

এর আগে ডিসেম্বর মাসের দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে বলা হয়েছিল, চলতি মাসে দেশের পশ্চিম ও উত্তরাঞ্চলে এক থেকে দুটি মৃদু বা মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। বড় এলাকাজুড়ে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে গেলে তাকে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ ধরা হয়; ৬ থেকে ৮ ডিগ্রির মধ্যে থাকলে মাঝারি এবং ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে তাকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে