হজ ফ্লাইট পরিচালনায় বেসরকারি খাতকে উন্মুক্ত করলে বিমান ভাড়া কমে আসবে বলে মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, মাত্র তিনটি এয়ারলাইন্সের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখায় ইচ্ছেমতো বিমান ভাড়া নিচ্ছে। উন্মুক্ত করে দিলে ৩০-৪০ শতাংশ বিমান ভাড়া কমে আসবে। বিমান ভাড়া বেশি থাকায় চলতি বছরও হজ কোটার অর্ধেকের বেশি পূরণ হচ্ছে না।
জানা গেছে, বর্তমানে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, সৌদিয়া এয়ারলাইন্স ও ফ্লাইনাস এই তিনটি ক্যারিয়ার হজ ফ্লাইট পরিচালনা করে থাকে। এর মধ্যে শুধু বিমান দেশীয় রাষ্ট্রীয় সংস্থা ও বাকি দুটি সৌদি আরবের। ফলে হজ ফ্লাইট পরিচালনায় বৈদেশিক মুদ্রাও খরচ হচ্ছে বেশি। ২০১১ পর্যন্ত হজযাত্রীরা নিজের পছন্দের এয়ারলাইন্সে হজে যেতে পারতেন। এতে কম ভাড়ায় টিকিট পাওয়া যেতো। কিন্তু ২০১২ সাল থেকে বিমান বাংলাদেশ ও সৌদিয়া এয়ারলাইন্স এই দায়িত্ব নিয়ে নেয়। পরে সৌদি আরবের আরেকটি বেসরকারি সংস্থা ফ্লাইনাস যুক্ত হয়। তারাই হজের ভাড়া নির্ধারণ করে। আর এতে হজের ভাড়া বেড়ে যায়।
এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, মাত্র তিন বছরে হজযাত্রীদের বিমান ভাড়া বেড়েছে ৫৫ শতাংশ। অস্বাভাবিক বিমান ভাড়া বৃদ্ধির কারণে মধ্যবিত্তদের জন্য হজ আদায় করা এখন দুঃস্বপ্ন হয়ে উঠেছে। তথ্য মতে, ২০১৯ সালে হজের বিমান ভাড়া ছিল ১ লাখ ২৮ হাজার টাকা। এরপর ২০২২ সালে করোনা মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণ দেখিয়ে ১২ হাজার টাকা বাড়িয়ে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা করা হয়। সে সময় বিমানের জ্বালানি তথা জেড ফুয়েলের দাম বৃদ্ধি পেয়েছিল।
এরপর ২০২৩ সালের জেড ফুয়েলের দাম বৃদ্ধি না পেলেও হজের বিমান ভাড়া এক লাফে প্রায় দুই লাখ টাকা করা হয়। অথচ হজযাত্রীদের বাইরে সাধারণ যাত্রীদের বিমান ভাড়া ৯০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা হয়ে থাকে। ২০২৫ সালেও হজযাত্রীদের বিমান ভাড়া ১ লাখ ৬৭ হাজার ৮২০ টাকা হবে।
এরই মধ্যে ধর্ম উপদেষ্টা
ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন ২৭ হাজার ৮২০ টাকা কমিয়ে এক লাখ ৪০ হাজার টাকা বিমান ভাড়া নির্ধারণ করতে আধা-সরকারি পত্র (ডিও) দিয়েছেন বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফকে।
ওই পত্রে খালিদ হোসেন বলেন, বিমান ভাড়া কমানো হলে বাংলাদেশের হজ কোটা পূরণ সহজ হবে। সৌদি সরকারের কাছে দেশের সম্মান বৃদ্ধি পাবে। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসও বাণিজ্যিকভাবে লাভবান হবে।
এ বিষয়ে ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে জবাব দেয়নি। তারপরও প্রধান উপদেষ্টাকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। বিমান ভাড়া না কমালে আমরা প্রয়োজনে থার্ড ক্যারিয়ার ওপেন করে দেব। অর্থাৎ যেকোনো এয়ারলাইনস হজযাত্রী পরিবহণ করতে পারবে।
বিমান ভাড়া বেশি থাকায় চলতি বছরও হজ কোটার অর্ধেকের বেশি পূরণ হয়নি। আগামী বছর হজে যেতে নিবন্ধনের সময়সীমা শেষ ১৫ ডিসেম্বর। সর্বশেষ ১২ ডিসেম্বর রাত পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি মিলে নিবন্ধন করেছেন ৫৫ হাজার ৬৫২ জন হজযাত্রী। অথচ কোটা অনুযায়ী বাংলাদেশ থেকে হজে যেতে পারবেন এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন। অর্থাৎ এখন পর্যন্ত কোটা খালি আছে ৭১ হাজার ৫৪৫টি।
এজন্য এবারও হজযাত্রী এত কম হওয়ায় হজ কোটা পূরণ করতে বিমান ভাড়া কমিয়ে আনতে বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। বিমান ভাড়া কমানো হলে বাংলাদেশের হজ কোটা পূরণ সহজ হবে। সৌদি সরকারের কাছে দেশের সম্মান বৃদ্ধি পাবে। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসও বাণিজ্যিকভাবে লাভবান হবে বলে ধর্ম মন্ত্রণালয় দাবি করে।
এদিকে গত মাসে আগামী বছরের হজযাত্রীদের জন্য বিমান টিকিটের ওপর আবগারি শুল্ক প্রত্যাহার করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এছাড়া যাত্রী নিরাপত্তা ফি, এম্বারকেশন ফি ও এয়ারপোর্ট নিরাপত্তা ফির ওপর মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাটও প্রত্যাহার করা হয়েছে। ফলে হজের খরচ কমবে বলে মনে করেছিল সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু বাস্তবে এর কোনো প্রভাব নেই।
এভিয়েশন অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এওএবি) সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বলেন, বেসরকারি পর্যায়ে হজ ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি দিলে হজের বিমান ভাড়া ৩০-৪০ শতাংশ কমে আসবে। ২০১১ পর্যন্ত হজযাত্রীরা পছন্দ মতো এয়ারলাইন্সে হজে যেতে পারতেন। তখন কম ভাড়ায় টিকিট পাওয়া যেতো। এরপর ২০১২ সাল থেকে হজ ফ্লাইটের টিকিটের দাম বাড়ছে।
বিমান ভাড়ার বিষয়ে হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব)-এর প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব মাওলানা ইয়াকুব শরাফতি বলেন, হজের বিমান ভাড়া কোনো ভাবেই ১ লাখ ২০ হাজার টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়। যদি টিকিট কালোবাজারি ও সিন্ডিকেশন না করে। কারণ হজ ফ্লাইটের জন্য গেস্নাবাল ডেস্টিনেশন সিস্টেম (জিডিএস) ফি নেই। হজযাত্রী দিয়ে আসার সময় এবং যাত্রী আনতে যাওয়ার সময় শতভাগ সিট খালি থাকে। বিমানে লোড যত কম হবে ফুয়েল খরচও কমে, তখন ক্যাটারিং চার্জ নেই। যাত্রী নামিয়ে সঙ্গে সঙ্গে চলে আসায় গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং চার্জ নেই। প্রত্যেক বছর ফুয়েলের দাম কমছে। তাই ওপেন টেন্ডার করা হউক। বেসরকারি খাত থেকে ফ্লাইট দেওয়া হউক। এতে একদিকে হাজিদের খরচ কমবে অন্যদিকে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে।