ঢাকা বিশ্ববিদ্যায়ের (ঢাবি) ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্যর হত্যাকাণ্ড নিয়ে ‘লাশের রাজনীতি’ না করে, হত্যার প্রেক্ষাপট ও কারণ বিশ্লেষণের আহ্বান জানিয়েছেন শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি এস এম ফরহাদ।
তিনি বলেন, ‘ক্যাম্পাসে এক শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন, তাকে নিয়ে অপরাজনীতি করার কোন সুযোগ নেই। এখানে আমাদের সচেতন শিক্ষার্থী ও পলিটিক্যাল এক্টিভিস্টদের দায়িত্ব হলো- এ খুন কেন হয়েছে?
কোন কারণে এ খুনের প্রেক্ষাপটের সুযোগ তৈরি হয়েছে সেটার বিশ্লেষণ করা। এই জায়গায় লাশের রাজনীতি, একেকজন একেক রাজনীতি করছে যেটা উচিত নয়।’
আজ বুধবার (১৪ মে) দুপুরে সাম্য হত্যার প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে ফরহাদ আরও বলেন, ‘অধিকাংশ শিক্ষার্থীর দাবি ছিল ক্যাম্পাস নিরাপদ করার, সে কারণে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গেট সহ কয়েকটি গেট লক করে দেয়া হয়েছিল।
কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ব্যর্থতা হচ্ছে কিছু শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের বিরোধীতার মুখে সেই উদ্যোগ থেকে সড়ে আসা, সোহরাওয়ার্দীর গেট খুলে দেয়া।
চারপাশে যে রাস্তায় যে ব্লকেড সিস্টেম ছিল, শিক্ষার্থীদের বাইরে বহিরাগত ঢুকতে পারবে না। সে সিস্টেমটা বাতিল করে দেয়াটাই প্রশাসনের বড় ব্যর্থতা, চরম ব্যর্থতা।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাজ হবে প্রথমত, সাম্য হত্যাকাণ্ডে যারা জড়িত তাদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসা, কঠিন শাস্তির মুখোমুখি করা। দ্বিতীয়ত, পুরো ঘটনা উন্মুক্ত করা, এটা কোন প্রেক্ষিতে হয়েছে ও কোন কোন চক্র এখানে দায়ি।
তৃতীয়ত, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যত মাদক কিংবা চোরাকারিবারি অথবা অসামাজিক কাজের ব্যবসা প্রচলিত। যারা এখানে সিন্ডিকেট পরিচালিত করে তাদের শাস্তির আওতায় নিয়ে এস এটি পারমান্টেটলি বন্ধ করে দেয়া।
চতুর্থ হচ্ছে, এখানে যেটা জরুরি, ক্যাম্পাসটা স্থায়ীভাবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের চারপাশটা, যে যেখানে অথোরিটি আছেন তাদের সাথে কথা বলে পুরোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ন্ত্রণে এনে বহিরাগত মুক্ত করার চেষ্টা করা এবং সেটি নিশ্চিত করা।
এখানে যদি কোন শিক্ষার্থী বা শিক্ষক রাজনৈতিক হীন উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য এটি বাধাগ্রস্ত করে সেটি আমলে না নিয়ে শিক্ষার্থীদের পক্ষে অবস্থান করা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম এবং প্রধান কাজ বলে মনে করি।’
ফরহাদ বলেন, ‘এর আগেও তোফাজ্জল হত্যাকাণ্ডে ৮ জনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছিল।
বিচারিক প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। এরপর ক্যাম্পাসে একটা শৃঙ্খলা ফিরে এসেছিল। সোহরাওয়ার্দীর গেট বন্ধ ও বহিরাগত নিয়ন্ত্রণে রাখার যে উদ্যোগ ছিল, তা কার্যকর হয়েছিল।
কিন্তু দুঃখজনকভাবে, শিক্ষকদের একটি বিশেষ অংশ ও কিছু শিক্ষার্থী প্রশাসনকে চাপ দিয়ে সেই গেটগুলো খুলে নিতে বাধ্য করে। এমনকি কিছু শিক্ষার্থী তালাবদ্ধ গেটের তালা ভেঙে দেয় এবং ক্যাম্পাসে ‘অবরোধের’ বিরুদ্ধে আন্দোলন করে।’
ফরহাদ আরও বলেন, ‘আমরা দেখেছি এর আগে যে খুনটা হয়েছে, তোফাজ্জল হত্যাকাণ্ড, সে ঘটনায় ৮ জন আসামি কারাগারে আছেন। তারা বিচারের মুখোমুখি হয়েছেন।
এরপরে ক্যাম্পাস মোটামুটি শৃঙ্খলায় আসছে বলে আমাদের কাছে মনে হয়েছিল এবং ক্যাম্পাস চারদিকে লক করে দেয়া হয়েছিল।
বহিরাগত মোটামুটি আসা বন্ধ হয়েছিল। এই যে সোহরাওয়ার্দীর গেটগুলো বন্ধ করা হয়েছিল, মাদক চোরাকারবারি বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল।
কিন্তু দুঃখজনক হচ্ছে, শিক্ষকদের বিশেষ একটি চক্র ও শিক্ষার্থীদের বিশেষ একটি চক্রের চাপে পড়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বাধ্য হয়েছে গেটগুলো খুলে দিতে।
শুধু তাই নয়, শিক্ষার্থীদের একটি চক্র তালা লাগানো গেটগুলোর তালা ভেঙ্গে ফেলেছিল। সেই সাথে ক্যাম্পাস যে আটকে দেয়া হয়েছিল সেটির বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে।’
প্রসঙ্গত, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ভেতর দিয়ে মোটরসাইকেল চালিয়ে আসার সময় মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে ছুরিকাঘাতে আহত হন ঢাবি শাখা ছাত্রদল নেতা সাম্য। রাত ১২টার দিকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।