মঙ্গলবার নতুন ট্রেন 'জাহানাবাদ এক্সপ্রেস' সকাল ছয়টায় মোট ৫৫৩ জন যাত্রী নিয়ে খুলনা থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে, সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছায়। ট্রেনটি আবার রাত আটটায় ঢাকা থেকে ছেড়ে খুলনায় পৌঁছায় রাত ১১টা ৪৫ মিনিটে।
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান এ রেলসেবা উদ্বোধনকালে মঙ্গলবার সকালে বলেন, 'পদ্মা রেল সেতু সংযোগের মাধ্যমে খুলনা ও ঢাকার মধ্যে একটা দ্রম্নত যাতায়াতের ব্যবস্থা হয়েছে। পৌনে চার ঘণ্টায় এটি পৌঁছে যাবে। খুব অল্প খরচে এই মাধ্যমে যাতায়াত করা যায়। কিন্তু আমাদের রেলের নানান রকম সংকট আছে। আপনারা অনেকেই অসন্তোষ ব্যক্ত করেন।'
তিনি বলেন, 'আপনাদের জানতে হবে যে রেল কেন আপনাদের প্রাপ্য সুবিধা দিতে পারে না। আমাদের লোকোমোটিভ সংকট আছে, কোচ সংকট আছে, লোকবলের সংকট আছে। সীমিত জনবল দিয়ে রেলের কর্মীরা একটি বড় দায়িত্ব পালন করেন। তারা রেলের আনসাং হিরো'- বলেন তিনি।
নড়াইল প্রতিনিধি জানান, সব জল্পনা-কল্পনা পাশ কাটিয়ে অবশেষে নড়াইলের ওপর দিয়ে চললো ট্রেন। মঙ্গলবার 'জাহানাবাদ একপ্রেস' খুলনা থেকে ভোরে এসে নড়াইলে পৌঁছায়। প্রথমবার যাত্রীবাহী ট্রেন নড়াইল রেলস্টেশনে পৌঁছালে নড়াইল পৌরসভার, দূর্গাপুর ও ভওয়াখালিসহ আশপাশের মানুষ উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠে।
নড়াইলবাসী দীর্ঘদিনের স্বপ্ন ছিল রেলপথে যোগাযোগ স্থাপন। এবার সেই স্বপ্ন পূরণ হল। ১৮৬২ সালে রেলপথ বাংলদেশে স্থাপনের পর পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের মাধ্যমে প্রথম বার রেলপথ ব্যবহারের সুযোগ পেল নড়াইলবাসী।
শিক্ষক ওবায়দুলস্নাহ তুহিন জানান, তারা প্রথমবার ট্রেনের সুবিধা পাচ্ছেন, এটা আনন্দের তবে টিকিট বরাদ্দ অনেক কম, ফলে তারা টিকিট বাড়ানোর জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছেন।
নড়াইল স্টেশন মাস্টার উজ্জ্বল কুমার বিশ্বাস জানান, দিনে দুইবার ঢাকা-খুলনা ও ঢাকা-বেনাপোল পথে চলাচল করবে ট্রেন দুটি। ইতোমধ্যে সব টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। এখন থেকে নড়াইলের মানুষ ট্রেনে মাত্র ২ ঘণ্টা ৩০ মিনিটে ঢাকা যেতে পারবে।
ভাঙ্গা (ফরিদপুর) প্রতিনিধি জানান, খুলনা থেকে ছেড়ে আসা 'জাহানাবাদ এক্সপ্রেস' ট্রেন সকাল ৮টা ১৩ মিনিটে ভাঙ্গা জংশন স্টেশনে পৌছানোর কথা থাকলেও সকাল ৮ টা ৫৫ মিনিটে সুসজ্জিত ট্রেনটি এসে পৌছায়। তিন মিনিটে বিরতি দিয়ে ট্রেনটি ভাঙ্গা জংশন ত্যাগ করে ঢাকার উদ্দেশ্যে। ট্রেনটি যাত্রীপূর্ণ ছিল। ট্রেন দেখতে স্থানীয় জনতা ভিড় করেন স্টেশনে। যাত্রীরা হাত নেড়ে স্থানীয়দের অভিনন্দন জানান।
রেলওয়ে জংশন স্টেশনের পাশের ভাঙ্গার বামনকান্দা গ্রামের বাসিন্দা মাসুদ মোলস্না (৫২) জানান, ইতিহাসের সাক্ষী হতেই স্টেশনে এসেছি। খুব ভালো লাগছে।
ভাঙ্গার হামিরদী ইউনিয়নের বাসিন্দা খুলনা জজ কোর্টের আইনজীবী নজরুল ইসলাম লিটন বলেন, 'ঢাকা-খুলনা নতুন লাইনে রেল চালু হলে আমরা উপকৃত হব। কারণ আমাদের ফ্যামিলির অনেকে খুলনায় থাকে। আমাদের এলাকার অনেক লোক খুলনায় পাটের ব্যবসা করে। আমরা কম সময়ে ও নিরাপদে খুলনায় যেতে পারবো।'