সোমবার, ১২ মে ২০২৫, ২৯ বৈশাখ ১৪৩২
ফল পুনঃপ্রকাশের দাবি

মেডিকেল ভর্তি :কোটার ১৯৩ জনের ফল স্থগিত

৩৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির জন্য প্রাথমিকভাবে ৫,৩৭২ জন নির্বাচিত হয়, যাদের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কোটার ১৯৩ জন রয়েছেন
যাযাদি রিপোর্ট
  ২১ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
মেডিকেল ভর্তি :কোটার ১৯৩ জনের ফল স্থগিত
মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় কোটা বাতিলের দাবিতে সোমবার শহীদ মিনারে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা -স্টার মেইল

মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কোটায় মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় নির্বাচিত ১৯৩ জনের ফল স্থগিত করেছে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর। সংস্থার অতিরিক্ত মহাপরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা) অধ্যাপক রুবীনা ইয়াসমীন বলেছেন, প্রয়োজনীয় যাচাই-বাছাই শেষে তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

রোববার ২০২৪-২০২৫ শিক্ষাবর্ষের মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর। দেশের ৩৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির জন্য প্রাথমিকভাবে ৫,৩৭২ জন নির্বাচিত হয়, যাদের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কোটার ১৯৩ জন রয়েছেন।

কম নম্বর পেয়েও ভর্তির জন্য নির্বাচিত হয়েছেন-এমন যুক্তি দিয়ে সমালোচনা করছেন কেউ কেউ। প্রকাশিত ফলকে 'বৈষম্যমূলক' দাবি করে রোববার রাতেই কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিক্ষোভ দেখান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা মেডিকেল কলেজের একদল শিক্ষার্থী। তারা ফল বাতিলের দাবিও তোলেন। অধ্যাপক রুবীনা ইয়াসমীন সোমবার বলেন, তাদের ফলাফল আপাতত স্থগিত থাকবে।

তিনি আরও বলেন, 'আমরা তাদের কাগজপত্র যাচাই করব। সেজন্য তিনটা কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। ২৭, ২৮ ও ২৯ জানুয়ারি- এই তিনদিন তারা সমস্ত কাগজপত্র নিয়ে মন্ত্রণালয়ে আসবে। সন্তান ছাড়া অন্য কেউ এই তালিকায় রয়ে গেছে কি না তা আমরা যাচাই করব। যদি সন্তান ছাড়া অন্য কেউ লিস্টে থাকে, তাহলে তার স্থান পাওয়ার কোনো সুযোগই না।'

অধ্যাপক রুবীনা বলেন, 'এটা প্রাথমিক ফলাফল। সবকিছু ফাইনাল হবে কাগজপত্র দেখার পর। অন্য সময় মুক্তিযোদ্ধা কোটার কাগজপত্র যাচাইবাছাই হয় সংশ্লিষ্ট কলেজে, এবার কলেজে যাওয়ার সুযোগ নেই। স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিদপ্তরে আসেন, সেখানে কমিটি করে দিয়েছি। তারা তিনদিন বসবে, বসে সবকিছু যাচাই করবে।'

এর আগে দুপুরে ঢাকার একটি হোটেলে এ প্রসঙ্গে কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ডা. সায়েদুর রহমান। তিনি বলেন, 'কোটা বাতিলের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে আদালত থেকে যে রায় দেওয়া হয়েছিল, সেখানে মূল পরিবর্তন হলো- নাতি-নাতনির পরিবর্তে সন্তানের কথা বলা হয়েছে। অতএব কোটার বিষয়টিতে ভর্তি হওয়ার ক্ষেত্রে এটা একটা নীতিগত সিদ্ধান্ত। এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষাও প্রচলিত আইন ও বিধি অনুযায়ী হয়েছে। তার পরও এটা স্ক্রুটিনি করা হবে।'

বিশেষ সহকারী সায়েদুর বলেন, 'ভর্তির জন্য নির্বাচিতদের মধ্যে ১৯৩ জনের মধ্যে খুবই আনইউজুয়াল হবে, যাদের বয়স ৬৭-৬৮ এবং যাদের সন্তান থাকার সম্ভাবনা খুবই কম। সেখানে যদি কোনো ত্রম্নটি ধরা পড়ে তাহলে সেটা দেখা হবে। এমবিবিএস পরীক্ষায় মূল কোটা থাকবে কি থাকবে না- এই নীতিগত সিদ্ধান্তটি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নয়, এটি রাষ্ট্রের। আগামী ২৭, ২৮ ও ২৯ জানুয়ারি বিষয়টি যাচাই করা হবে।'

কোটা বাতিলের দাবিতে সমাবেশ

এদিকে, মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষায় থাকা কোটা বাতিল, এমবিবিএস ভর্তিতে রোববার প্রকাশিত ফলাফল বাতিল করে আবার প্রকাশের দাবিতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজসহ কয়েকটি মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এ কর্মসূচি পালন করেন।

রোববার রাতের পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী সোমবার সকাল থেকে শহীদ মিনারে জড়ো হতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সেখানে একটি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। পরে দুপুরের দিকে তারা শহীদ মিনার ছেড়ে যান। বেলা তিনটার দিকে শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধিদল প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বরাবর একটি স্মারকলিপি প্রদান করে।

এর আগে সমাবেশে অবিলম্বে মেডিকেল ভর্তিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা, পোষ্য কোটাসহ সব ধরনের বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল এবং মেডিকেলের এই ফলাফল বাতিল ও ফল পুনঃ প্রকাশের দাবি জানান শিক্ষার্থীরা। আজকের মধ্যে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার ফল বাতিলসহ পুনঃ প্রকাশের দাবিও জানানো হয় সমাবেশে। সমাবেশে তাঁরা 'অবিলম্বে ফলাফল বাতিল করো, করতে হবে', 'কোটা না মেধা, মেধা মেধা', 'মেডিকেলের ফলাফল, পুনঃ প্রকাশ করতে হবে' ইত্যাদি স্স্নোগান দেন।

শহীদ মিনারে অবস্থান নেওয়া ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী ফেরদৌস আহমেদ তানিম বলেন, 'গতকাল ভর্তি পরীক্ষার যে ফলাফল দিয়েছে, এতে কোটার কারণে অনেক অযোগ্যরাও ভর্তির সুযোগ পেয়েছে, এমনকি অনেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজেও ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। এই কোটাপ্রাপ্ত যত শিক্ষার্থী আছে, তাদের অবিলম্বে ভর্তি বাতিল করতে হবে। আগামী বছরগুলোতে যেন কোটাপ্রথা সম্পূর্ণরূপে বিলুপ্ত হয়, এই দাবিতে আজ আমরা রাজপথে নেমেছি।' তিনি প্রশ্ন করেন, 'কোটা নিয়ে এত বড় আন্দোলনের পরও ফের আবার আমাদের আন্দোলনে নামতে হলো কেন?'

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে নিটোরের সহযোগী অধ্যাপক ইদ্রিস আলীর ভাষ্য, 'আমার একজন ছেলে বা মেয়ে ৭৩ পেয়েও মেডিকেলে চান্স পাচ্ছে না অথচ মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৩৬ বা ৩৭ পেয়েও চান্স পেয়ে যাচ্ছে। পরিবর্তিত বাংলাদেশে এই বৈষম্য থাকবে কেন? আমরা এই ফল মানি না।'

সমাবেশে স্যার সলিমুলস্নাহ মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী আবির হোসেন বলেন, 'এ বছর নাতি-নাতনি কোটায় কাট মার্কের চেয়ে ৩০ থেকে ৩৫ নম্বর কম পেয়েও সরকারি মেডিকেলে চান্স পেয়েছে, যা আমরা মেনে নিতে পারি না। আমরা মুক্তিযোদ্ধা কোটাসহ সব ধরনের কোটার বিলুপ্তি চাই। আজকের মধ্যে কোটাবৈষম্য বাতিল করে আবার ফলাফল প্রকাশ করার দাবি জানাচ্ছি।'

মেডিকেলের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক মাহিন সরকার বলেন, 'গণ-অভু্যত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে আমরা এখনো দেখতে পাচ্ছি মেডিকেলে অযৌক্তিক বৈষম্যমূলক কোটা চালু রয়েছে। অনেকে ৭২ নম্বর পেয়েও প্রকাশিত ফলাফলে টেকেনি। অথচ অনেকে ৪০ পেয়েও ফলাফলে জায়গা পেয়েছে।' তিনি বলেন, 'ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনো পোষ্য কোটাসহ অযৌক্তিক কিছু কোটা রয়ে গেছে। আমরা চাই অতি দ্রম্নত সময়ের মধ্যে যেন মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল পুনঃ প্রকাশ করা হয় এবং সব ধরনের বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করা হয়।'

এর আগে রোববার রাতেও একই দাবিতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা। তাঁদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও উপস্থিত ছিলেন।

সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল রোববার প্রকাশিত হয়েছে। ফলাফলে ৫ হাজার ৩৭২ পরীক্ষার্থী ৩৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির জন্য প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হয়েছেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে