সোমবার, ১২ মে ২০২৫, ২৯ বৈশাখ ১৪৩২
জিয়া স্মৃতি পাঠাগারের অনুষ্ঠানে ফখরুল

নির্বাচিত সরকার, অনির্বাচিত সরকারের চেয়ে ভালো

যাযাদি রিপোর্ট
  ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
নির্বাচিত সরকার, অনির্বাচিত সরকারের চেয়ে ভালো
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে জিয়া স্মৃতি পাঠাগারের আয়োজিত গ্রন্থ আড্ডায় বক্তব্য রাখেন -ফোকাস বাংলা

যে কোনো নির্বাচিত সরকারকে অনির্বাচিত সরকারের চেয়ে ভালো বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, আমাকে কেউ ভুল বুঝবেন না। অনেকের প্রশ্ন, আপনি এত নির্বাচন নির্বাচন করেন কেন? বিশেষত ছাত্ররা তো বলেনই। নির্বাচনের কথা বারবার বলার কারণ একটাই। যে কোনো নির্বাচিত সরকার কিন্তু একটি অনির্বাচিত সরকারের চেয়ে ভালো।

মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে জিয়া স্মৃতি পাঠাগারের উদ্যোগে 'শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৮৯তম জন্মবার্ষিকী ও জিয়া স্মৃতি পাঠাগারের ১২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী' উপলক্ষে আয়োজিত গ্রন্থ আড্ডায় তিনি এসব কথা বলেন।

বিএনপি মহাসচিব বারবার নির্বাচনের কথা বলার কারণ ব্যাখ্যা করে বলেন, 'আমি বিশ্বাস করি, আমি জানি না আমার এই বিশ্বাসটা ভুল কি না? নির্বাচিত সরকার হলে আমার এক্সেস থাকে, আমি যেতে পারি, কথা বলতে পারি।'

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এই পরিবর্তনের (৫ আগস্ট) পরে যখন আমরা দুই-একটা জায়গায় খোঁজখবর নিই, অফিস আদালতে খোঁজখবর নিই- ভয়াবহ কান্ড, ভয়াবহ দুর্নীতি, চুরি, ব্যক্তিগত স্বার্থ ছাড়া সরকারি আমলাদের মধ্যে আর কোনো চিন্তা নেই। এটা বলতে আমি বাধ্য হলাম।'

সাম্প্রতিক সময়ে সড়কে যান চলাচল বন্ধ করে আন্দোলন ও বিভিন্ন দাবিদাওয়া প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, 'কখনো ধৈর্য হারাবেন না, আশা হারাবেন না। আমি কেন জানি না, আমাদের প্রত্যাশা অনেক কিন্তু আমাদের ধৈর্য একেবারেই কম। এই তো মাত্র কয়েকটা মাস হয়েছে। এরমধ্যেই আমরা পাগল হয়ে গেছি সব। আমাদের সরকার অনেক ভুলত্রম্নটি করছে। ভুল তো করবেই, তারা তো আর সরকারে ছিল না, রাজনীতি করেনি, রাজনীতি বিষয়টা তারা জানে না; করেনি, ঠিক না? তাদের তো সে সময়টা দিতে হবে।'

তিনি বলেন, 'আওয়ামী লীগ আমলে তো কেউ একটা কথা বলারও সুযোগ পায়নি, সাহসও কেউ পায়নি। আর এখন যেহেতু একটা অবস্থা তৈরি হয়েছে, সবাই ঝাঁপিয়ে পড়ছে।'

সরকারের সমালোচনা প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'এটাতে লাভটা কার? এটাতে এই দেশের, এই সমাজের, এই মানুষের কোনো লাভ হবে না। ধৈর্য ধরে সামনের দিকে যাই, অনেক ত্রম্নটি আছে, ত্রম্নটি তো তারা নিয়েই এসেছে, একেবারে ধ্বংসপ্রাপ্ত জঞ্জাল। আমার চিন্তায়ও ছিল না এটা এত খারাপ হয়ে যাবে।'

তিনি বলেন, 'এটার পরিবর্তন তো আপনার একদিনে হবে না, এত দ্রম্নত হবে না। ধৈর্য ধরেন, একটা গণতান্ত্রিক স্ট্রাকচার খাড়া হোক, সেই স্ট্রাকচার হলে নিশ্চয় আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারবো। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মধ্যে ধৈর্য ব্যাপারটা ছিল। দূরদৃষ্টি-সম্পন্ন চিন্তাভাবনাগুলোকে তিনি কীভাবে বাস্তবায়ন করবেন, প্রথমেই তিনি যুদ্ধ শুরু করে দেননি। প্রথমে শুনেছেন, সব বিজ্ঞ বিজ্ঞ মানুষদের নিয়ে বসেছেন।'

বিএনপির শীর্ষ স্থানীয় এই নেতা বলেন, 'একটা কথা মনে রাখতে হবে সবসময়, হটকারিতা করা যাবে না। অতি বিপস্নবী কোনো চিন্তা-ভাবনা নিয়ে সমাজে আরো অস্থিরতা, চরম একটা অবস্থা সৃষ্টি করা হয়ত কোনোভাবেই কাম্য হবে না। নৈরাজ্য সৃষ্টি করাটা বোধহয় ঠিক হবে না, এই কথাটা আমাদের মাথায় রাখতে হবে।'

মির্জা ফখরুল বলেন, 'আমাদের মাহবুব উলস্নাহ (অধ্যাপক মাহবুব উলস্নাহ) ভাইয়েরা থিওরি পড়াতেন, তার মধ্যে একটা কথা ছিল রোমান্টিসিজম। রোমান্টিসিজম মানে শুধু প্রেম নয় বিপস্নবের প্রতি প্রেম। অর্থাৎ এই মুহূর্তে আমি সব পালটে দেবো, এই মুহূর্তে আমি সব দখল করবো, অন্যায় রোধ করবো, এটা হয় না। আপনাকে ধাপে ধাপে করতে হবে।'

সবাইকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'আমাদের এখানে এখন যে অস্থিরতা চলছে, এই অবস্থা যদি নিয়ন্ত্রণ করতে চাই, আমাদেরকে ধৈর্য ধরে পা ফেলতে হবে। এমন কিছু আমরা করবো না, যাতে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে আরও বিপদ যেন আমরা ডেকে না আনি। এই বিষয়গুলো আমাদের মনে রাখতে হবে।'

বাংলাদেশের প্রধান সমস্যা আমাদের পড়ালেখা উলেস্নখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'একদম শেষ হয়ে গেছে। শিক্ষা ব্যবস্থা একদম শেষ। সেটার মধ্যে কোনো কিছু অবশিষ্ট আছে বলে মনে হয় না। প্রাইমারি স্কুল থেকে শুরু করে একদম ইউনিভার্সিটি পর্যন্ত সব জায়গায় দেখবেন যে, এত নিচে চলে গেছে তার মান, এটা বলে বুঝানো যাবে না। একেবারে কুড়িগ্রামের চরের মধ্যে যে প্রাইমারি স্কুল বা হাই স্কুলে কী শিক্ষা পাচ্ছে, সেটার খবর আমরা অনেকেই রাখি না।'

জিয়া স্মৃতি পাঠাগারের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আবদুস সালামের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক জহির দিপ্তীর সঞ্চালনায় এসময় আরও বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক ড. মাহবুব উলস্নাহ, নরসিংদী জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মনজুরে এলাহী, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহদী আমিন প্রমুখ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে