বুধবার, ০৭ মে ২০২৫, ২৪ বৈশাখ ১৪৩২

দুই জেলায় শৈত্যপ্রবাহ শীত বেড়ে যাওয়ার পূর্বাভাস

যাযাদি রিপোর্ট
  ২৫ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
দুই জেলায় শৈত্যপ্রবাহ শীত বেড়ে যাওয়ার পূর্বাভাস
দুই জেলায় শৈত্যপ্রবাহ শীত বেড়ে যাওয়ার পূর্বাভাস

রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে শুক্রবার সকালেও ঘন কুয়াশা ছিল। তারপর ধীরে ধীরে সেই কুয়াশা কমে এসেছে। বৃহস্পতিবার থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থানে শীতের প্রকোপ শুরু হয়েছে। শুক্রবার তাপমাত্রা আরও কমেছে। এদিন দেশের দুই জেলায় বইছে শৈত্যপ্রবাহ। দুটি জেলাই উত্তরবঙ্গের। শীতের তীব্রতা উত্তরের জনপদেই বেশি।

আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, শনিবার তাপমাত্রা মোটামুটি শুক্রবারের মতোই থাকতে পারে। তবে আগামী রোববার থেকে তা আরও কমবে। এমন অবস্থা থাকতে পারে মঙ্গলবার পর্যন্ত। তারপর অবশ্য তাপমাত্রা বাড়তে পারে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের বার্তায় বলা হয়েছে, শুক্রবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ীতে, ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বৃহস্পতিবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল এই বাঘাবাড়ীতেই, ১০ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অর্থাৎ এক দিনের ব্যবধানে প্রায় ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমেছে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। গত বুধবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া ও মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে, ১১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দেখা যাচ্ছে, সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ধারবাহিকভাবে কমে আসছে।

এই অবস্থা কয়দিন চলতে পারে- এমন প্রশ্নে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ শাহানাজ সুলতানা শুক্রবার বলেন, শনিবার দেশের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। তবে এর পরদিন থেকে তাপমাত্রা কমতে শুরু করবে। এ অবস্থা চলতে পারে মঙ্গলবার পর্যন্ত। তবে এরপর তাপমাত্রা আবার বাড়তে পারে।

শুক্রবার দেশের যে দুই জেলায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বইছে, সেগুলো হলো সিরাজগঞ্জ ২

ও পঞ্চগড়। এদিন পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

যদি কোনো এলাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ দশমিক ১ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়, তবে সেই এলাকায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে গেছে বলে ধরা হয়। আর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৬ দশমিক ১ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে তাকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়। তাপমাত্রা ৪ দশমিক ১ থেকে ৬ ডিগ্রি হলে তা তীব্র শৈত্যপ্রবাহ। আর অতি তীব্র শৈত্যপ্রবাহ তখনই হয়, যখন সর্বনিম্ন তাপমাত্রা হয় ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে।

শুক্রবার মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বইছে- এ দফায় কী তীব্র শৈত্যপ্রবাহের কোনো সম্ভাবনা আছে? শাহনাজ সুলতানা বলেন, সেই সম্ভাবনা কম। চলতি মাসে একবারই মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে গেছে। শীতের তীব্রতা এখন পর্যন্ত অপেক্ষাকৃত কম। গত ডিসেম্বর মাসেও তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে শূন্য দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল।

এ দফায় যে শীত পড়তে শুরু করে, তা কী এ মৌসুমের শীতের শেষ স্পর্শ? এর উত্তরে আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশীদ বলেন, দেখা গেছে ফেব্রম্নয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহেও অনেক সময় শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যায়। ফেব্রম্নয়ারির শেষ সপ্তাহে একবার শ্রীমঙ্গলে তাপমাত্রা ২ দশমিক ৮-এর মতো ছিল। তাই নিশ্চিত করে বলা যায় না এবারই শীতের স্পর্শ শেষ।

এদিকে, শুক্রবার দেশের অন্যান্য স্থানের মতো রাজধানীতেও কমেছে তাপমাত্রা। এদিন নগরীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৩ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বৃহস্পতিবার তা ছিল ১৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

নেত্রকোনায় কনকনে শীতে

জনজীবনে চরম দুর্ভোগ

এদিকে, নেত্রকোনায় গত দুই দিন ধরে সূর্যের দেখা মিলছে না। কনকনে মৃদু হিমেল হাওয়া আর কুয়াশায় বেড়েছে শীতের তীব্রতা। কুয়াশার কারণে দিনের বেলাতেও হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছে বিভিন্ন যানবাহন। মোটা জামাকাপড় গায়ে জড়িয়ে এবং খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন শীতার্ত অসহায় লোকজন।

বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া অনেকেই ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। এ অবস্থায় চরম বিপাকে পড়েছে স্কুল-কলেজ, মাদরাসার শিক্ষার্থী ও নিম্ন আয়ের লোকজন। তাদের প্রচন্ড শীত উপেক্ষা করেই ভোরবেলায় নিজ নিজ গন্তব্যে ছুটতে হচ্ছে।

জেলার মোহনগঞ্জ উপজেলা শহরের অটোরিকশাচালক আকবর আলী বলেন, 'কুয়াশা আর ঠান্ডার কারণে ভোরে গাড়ি নিয়ে বের হতে পারি না। বের হলেও দিনের বেলায় লাইট জ্বালিয়ে গাড়ি চালাতে হয়। লোকজন খুব একটা বের হয় না। তাই যাত্রী কম। সারা দিনে আগে যেখানে ৫০০ টাকা পেতাম, সেখানে এখন ৩০০ টাকাও হয় না।'

একই এলাকার কলেজশিক্ষার্থী সাইফুল আলম জানান, 'কোচিং করতে ভোরবেলা ঘর থেকে বের হতে হয়। কিন্তু কুয়াশা ও প্রচন্ড শীতের কারণে চলাচলে খুব কষ্ট করতে হচ্ছে।'

এদিকে, জেলার হাওড়াঞ্চলের মদন, মোহনগঞ্জ ও খালিয়াজুরী উপজেলার সাধারণ মানুষ শীতে ভোগান্তিতে পড়েছেন বেশি। কারণ, পুরো হাওড়াঞ্চলজুড়ে চলছে বছরের প্রধান ও একমাত্র ফসল বোরো ধানের চাষাবাদ। এই বোরো ধান উৎপাদন করেই হাওড় এলাকার কৃষকরা তাদের সারা বছরের খাদ্য মজুত করেন। তাই তারা কনকনে শীতের কারণে শ্রমিক সংকটে পড়েছেন তারা। অতিরিক্ত টাকা দিয়েও মিলছে না প্রয়োজনীয় কৃষিশ্রমিক। এ অবস্থায় তীব্র শীতকে হার মানিয়েই কৃষকরা তাদের বোরো আবাদ চালিয়ে যাচ্ছেন।

জেলার খালিয়াজুরী উপজেলার পাঁচহাট গ্রামের কৃষক আলম মিয়া বলেন, 'বোরো ধানই আমাদের হাওড়াঞ্চলের একমাত্র ফসল। এই ফসল দিয়ে আমাদের সারা বছর চলে। শীতের শুরু থেকেই আমাদের বোরো ধান চাষাবাদ শুরু হয়েছে। আবাদ প্রায় শেষ। এখন চলবে পরিচর্যার কাজ। কিন্তু শীতের কারণে আমাদের খুব দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বেশি টাকা দিয়েও শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। তাই শীতের জ্বালা সহ্য করেই আমরা বোরো চাষাবাদ করছি।'

এ ছাড়া তীব্র শীতে বেড়েছে সর্দি, কাশি, নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্টসহ ঠান্ডাজনিত বিভিন্ন রোগবালাই। স্থানীয় হাসপাতালগুলোতে প্রতিদিনই বাড়ছে ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। বিশেষ করে ছোট শিশুরা সর্দি-কাশি, নিউমোনিয়া এবং বৃদ্ধরা শ্বাসকষ্টজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন বেশি।

নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আবু সাঈদ মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, 'ঠান্ডাজনিত রোগীর চাপ এখন বেশি। এর মধ্যে বেশির ভাগই শিশু। বিশেষ করে নিউমোনিয়া, সর্দি-কাশি, ডায়রিয়া ও শ্বাসকষ্টের রোগী প্রতিদিনই বাড়ছে।'

স্থানীয় আবহাওয়া অধিদফতর সূত্র জানায়, শুক্রবার সকাল ৬টার দিকে জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাস বলেন, 'এরই মধ্যে জেলার ১০টি উপজেলায় সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে শীতার্ত মানুষের মধ্যে প্রয়োজনীয় সরকারি কম্বল বিতরণ করা হয়েছে এবং তা চলমান রয়েছে।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে