বৃহস্পতিবার, ০১ মে ২০২৫, ১৮ বৈশাখ ১৪৩২
কর্মবিরতিতে অনড় রেলকর্মীরা

সারাদেশে ট্রেন বন্ধ :যাত্রীদের ভোগান্তি

রাজশাহী স্টেশনে ক্ষুব্ধ যাত্রীদের ভাঙচুর ময়মনসিংহে তোপের মুখে স্টেশন সুপার
যাযাদি ডেস্ক
  ২৯ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
সারাদেশে ট্রেন বন্ধ :যাত্রীদের ভোগান্তি
রেলওয়ের কর্মীদের ধর্মঘটে মঙ্গলবার ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় ঢাকার কমলাপুর স্টেশনে আসা যাত্রীদের বাসে চড়ে গন্তব্যে যেতে ভোগান্তি পোহাতে হয় -সংগৃহীত

মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার অগ্নিবীণা এক্সপ্রেস ধরে জামালপুরে যাওয়ার কথা হাসান আলীর। কিন্তু কর্মীদের ধর্মঘটে ট্রেন চলাচল যে বন্ধ, সেটা তিনি জানতে পেরেছেন ঢাকার কমলাপুর স্টেশনে আসার পর। এদিন সকালে কমলাপুরের পস্ন্যাটফর্মে যখন হাসান আলীর সঙ্গে কথা হয়, তার চোখেমুখে তখন রাজ্যের বিরক্তি। তিনি বলেন, 'আমি জানতাম না ট্রেন চলাচল বন্ধ। সোমবার বিকেলেই টিকিট কাটলাম। পরিস্থিতি একদম বাজে। কথাবার্তা নাই, সবাই আন্দোলনে নেমে যাচ্ছে।'

হাসান আলী বলেন, 'আজ (মঙ্গলবার) আমার বন্ধুকে মেয়েপক্ষ দেখতে আসবে। দুপুর ১টায় সেখানে যাওয়ার কথা। না হয় একদিন পরে গেলেও সমস্যা হত না। এখন বেকাদায় পড়লাম। এখন ডবল ভাড়া দিয়ে বাসে যেতে হবে।'

একইরকম ভোগান্তিতে পড়েছেন দিনাজপুরের যাত্রী সোহরাব হোসেন। স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে সকালে কমলাপুর থেকে রওনা হওয়ার কথা ছিল তার। কিন্তু ট্রেন চলাচল বন্ধের ঘোষণায় তিনিও বিপাকে পড়েছেন।

ঢাকা থেকে মঙ্গলবার কুষ্টিয়া যাওয়ার কথা শামীমা খাতুনের। ট্রেন ছাড়ার কথা ছিল সকাল ৯টায়। ১৮ দিন আগে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সন্তানের জন্ম দিয়েছেন তিনি। সাতসকালেই নবজাতক, আরেক শিশু ও ভাইয়ের বউয়ের সঙ্গে কমলাপুরে এসেছেন। কিন্তু এসে জানতে পারেন ট্রেন চলবে না।

রাজধানীর বিমানবন্দর থেকে কমলাপুরে এসেছেন শামীমা। ট্রেন চলবে না জানতে পেরে তার এখন চিন্তার শেষ নেই। কিছুদিন আগেই অস্ত্রোপচার হওয়ায় বাসে যেতে পারবেন না বলে জানালেন। এখন গাড়ি ভাড়া করে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। তবে ভাড়া অনেক বেশি চাইছে।

শামীমা খাতুন বলেন, হুট করে এভাবে ট্রেন চলাচল বন্ধের খবরে তাঁর বিপদের শেষ নেই। তার সঙ্গে কথা বলার সময় আরেক স্বজন নবজাতককে নিয়ে টিকিট কাউন্টারে টিকিট ফেরতের চেষ্টা করছিলেন।

কমলাপুর স্টেশনে শামীমা খাতুনের মতো আরও অনেক যাত্রীর এমন ভোগান্তি দেখা যাচ্ছে। স্টেশনে এসে ট্রেন না চলার খবর জানতে পেরে ফিরে যাচ্ছেন অনেকে।

কক্সবাজারে যেতে কিশোরগঞ্জ থেকে ঢাকায় এসেছিলেন ৯ কিশোর। তাদের একজন মো. নাদিম বলেন, 'সকাল ৬টা ১৫ মিনিটে পর্যটন এক্সপ্রেসে কক্সবাজার যাওয়ার কথা ছিল। এখন এখানে এসে শুনি ট্রেন যাবে না। আগে জানলে আমরা টিকেট কাটতাম না।'

বেসরকারি চাকুরে শফিকুল ইসলাম বলেন, 'বেনাপোল যাওয়ার জন্য গত ২৪ তারিখে টিকেট কেটেছিলাম। ১০টা ৪৫ মিনিটে রূপসী বাংলা ট্রেনে বেনাপোল যাওয়ার কথা ছিল। আমি বাসে যাতায়াত করতে পারব না। ট্রেন যদি নাই যাবে, তাহলে টিকেট বিক্রি করল কেন? আমি তো মহাপবিপদে পড়লাম।'

মঙ্গলবার সকালে কমলাপুর স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, আন্দোলনরত রেলকর্মীরা ফাঁকা পস্ন্যাটফর্মে ঘুরে-ঘুরে স্স্নোগান দিচ্ছেন। পাশেই রেলের লাইনের কাজ করছেন কয়েকজন। লাইনের উপর অন্তত তিনটি ট্রেন দাঁড়ানো রয়েছে।

আশপাশে কিছু যাত্রী ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছেন। কেউ কেউ টিকেটের টাকা ফেরত নেওয়ার খোঁজ করছেন, কেউ আবার বিআরটিসির বাসে করে গন্তব্যে যাচ্ছেন। বন্ধ থাকা ট্রেনের যাত্রীদের বিভিন্ন গন্তব্যে পৌঁছে দিতে বিআরটিসির এসব বাসের ব্যবস্থা করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।

এদিকে, রেলওয়ের রানিং স্টাফদের কর্মবিরতির কারণে কেন্দ্রীয় স্টেশন কমলাপুরে পড়ে আছে পার্সেল। মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা গেছে, কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের ১ নম্বর পস্ন্যাটফর্মে পার্সেল শাখার সামনে সোফা, চেয়ার, ফ্রিজসহ নানা পণ্য পড়ে আছে। পণ্যের সঙ্গে আসা কেউ কেউ আবার ক্লান্ত হয়ে সেখানেই ঘুমিয়ে পড়েছেন।

পার্সেল শাখার দায়িত্বরত এক কর্মচারী বলেন, 'ট্রেন চলাচল না করায় এই পণ্যগুলো পাঠানো যায়নি। ফলে স্টেশনে পড়ে আছে। ট্রেন চলাচল শুরু হওয়ার পরই এগুলো পাঠানো হবে।'

রেলপথ মন্ত্রণালয় মঙ্গলবার সকালে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, এসব বাস ঢাকার কমলাপুর এবং বিমানবন্দর স্টেশন থেকে চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেট, খুলনা, কুমিলস্না, বগুড়া ও ময়মনসিংহে যাত্রী পৌঁছে দেবে। যাত্রীরা তাদের রেলের টিকেট ব্যবহার করে এসব বাসে চড়তে পারবেন। আর যাত্রী চাইলে টিকেটের টাকা রেলের কাউন্টার থেকে ফেরত নিতে পারবেন।

মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে আসেন রেলপথ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। রেল সচিব মো. ফাহিমুল ইসলাম, রেলওয়ে ঢাকা বিভাগীয় ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মহিউদ্দিন আরিফ, বিআরটিসি চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন। এ সময় উপদেষ্টাকে সামনে পেয়ে ক্ষোভ ঝাড়েন যাত্রীরা।

উপদেষ্টা বলেন, 'যাত্রীদের ইমিডিয়েট রিলিফের জন্য বিআরটিসির বাস দেওয়া হয়েছে। বিআরটিসি বাস রেলের ভাড়ায় যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছে দেবে।'

মূল বেতনের সঙ্গে রানিং অ্যালাউন্স যোগ করে পেনশন এবং আনুতোষিকের দাবি পূরণ না হওয়ায় বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী সমিতি সোমবার মধ্যরাত থেকে এই কর্মবিরতি শুরু করেছে।

বাংলাদেশ রেলওয়ের ট্রেন পরিচালকদের সংগঠন রেলওয়ে গার্ডস কাউন্সিল কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. আফজাল হোসেন বলেন, দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন তারা।

কর্মবিরতিতে অনড় রেলকর্মীরা

এদিকে, আন্দোলনরত রানিং স্টাফদের সঙ্গে প্রায় দুই ঘণ্টা বৈঠক করেও কোনো সমঝোতায় আসতে পারেনি রেল কর্তৃপক্ষ। রানিং স্টাফ নেতারা বৈঠক শেষে বেরিয়ে এসে বলেছেন, বিষয়টি নিয়ে তারা আরো আলোচনা করবেন, তবে কর্মবিরতিও চলবে।

মূল বেতনের সঙ্গে রানিং অ্যালাউন্স যোগ করে পেনশন এবং আনুতোষিকের দাবি পূরণ না হওয়ায় সোমবার মধ্যরাত থেকে বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী সমিতির এই কর্মবিরতি শুরু হয়। এর ফলে মঙ্গলবার সকাল থেকে সারাদেশে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। আগাম টিকেট কাটা যাত্রীরা স্টেশনে এসে পড়ছেন ভোগান্তিতে।

এ সমস্যার সমাধানে আন্দোলনরত রানিং স্টাফদের নিয়ে মঙ্গলবার দুপুরে বৈঠকে বসেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ মো. ফাহিমুল ইসলাম। বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী ও জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

দুপুর দেড়টার দিকে ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনের ভিআইপি রুমে ওই বৈঠক শুরু হয়। কিন্তু কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে না পেরে দুপুর ২টা ৪৫ মিনিটের দিকে বেরিয়ে আসেন রানিং স্টাফ প্রতিনিধিরা।

বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের কার্যকরী সভাপতি মো. সাইদুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, 'আমরা দীর্ঘক্ষণ রেল সচিব ও মহাপরিচালকের সঙ্গে বৈঠক করেছি। তবে কোনো সিদ্ধান্তে আমরা পৌঁছাতে পারিনি বলে চলে এসেছি। আমাদের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ যারা আছেন, বিষয়টি নিয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনা করব। তবে আমরা আমাদের কর্মবিরতিতে অনড় আছি।'

পরে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে রেলসচিব ফাহিমুল ইসলামকেও স্টেশন থেকে বেরিয়ে যেতে দেখা যায়। যাওয়ার সময় তিনি বলেন, রেলভবনে আরেক দফা বৈঠক হবে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে।

রাজশাহীতে ক্ষুব্ধ যাত্রীদের ভাঙচুর

এদিকে, রাজশাহী অফিস জানায়, রেলওয়ের রানিং স্টাফদের কর্মবিরতিতে ট্রেন বন্ধ থাকায় রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে ভাঙচুর চালিয়েছেন ক্ষুব্ধ যাত্রীরা। পরে তারা টিকিটের টাকা ফেরত নিয়ে রেলস্টেশন ছাড়েন।

মঙ্গলবার সকাল সাতটা থেকে আটটা পর্যন্ত স্টেশনে বিক্ষোভ ও ভাঙচুর করেন কয়েক শ যাত্রী। ক্ষুব্ধ যাত্রীরা টিকিট পরিদর্শকদের (টিটিই) একটি কক্ষের চেয়ার-টেবিল এবং স্টেশনে রাখা কিছু চেয়ার ভাঙচুর করেন। অন্য কক্ষগুলোর দরজা তালাবদ্ধ ছিল। পরে সেনাবাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে। টিকিটের টাকা ফেরত নিয়ে যাত্রীরা চলে যান।

রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনের ব্যবস্থাপক ময়েন উদ্দিন সকাল ৯টার দিকে বলেন, 'যারা কাউন্টার থেকে টিকিট কেটেছিলেন, তাদের কাউন্টার থেকেই টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে। আর যারা অনলাইনে টিকিট কাটেন, তাদের টাকা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ফেরত দেওয়া হয়েছে। এখন স্টেশনে সেনাবাহিনীর সদস্যরা অবস্থান করছেন। পরিস্থিতি শান্ত আছে।'

ময়েন উদ্দিন আরও বলেন, সোমবার মধ্যরাত থেকে কর্মবিরতির কারণে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। মধ্যরাত থেকে মঙ্গলবার ভোর পর্যন্ত রাজশাহী থেকে কোনো ট্রেন ছেড়ে যাওয়ার মতো ছিল না। তবে ভোর থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত বিভিন্ন গন্তব্যের ছয়টি ট্রেন ছিল। এসব ট্রেন ছেড়ে যায়নি। সোমবার দিবাগত রাতে ঢাকা থেকে যাত্রা শুরু করা পদ্মা এক্সপ্রেস ট্রেন মঙ্গলবার ভোরে রাজশাহী এসেছে।

রাজশাহী রানিং স্টাফ ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক আমিনুল ইসলাম বলেন, 'কেন্দ্রীয় কমিটির অংশ হিসেবে রাজশাহীতেও ট্রেন চলাচল বন্ধ আছে। আমাদের অধিকার ফিরে না পাওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। কেন্দ্রীয় কমিটি যখন কর্মবিরতি প্রত্যাহার করবে, তখন ট্রেন চলবে।'

মঙ্গলবার সকাল ১০টা নাগাদ কিছু যাত্রী স্টেশন ছেড়ে যাননি। তারা স্টেশনে অপেক্ষা করছিলেন। কী মীমাংসা হয়, তা দেখার জন্য বসে ছিলেন। দর্শনা থেকে নার্গিস বেগম (৪০) তার স্বামী ও সন্তানদের নিয়ে রাজশাহীতে চিকিৎসার জন্য এসেছিলেন। সকাল থেকে ট্রেনের জন্য তারা অপেক্ষা করছিলেন। তারা সাগরদাঁড়ি এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট কেটেছিলেন।

আবদুল মান্নান (৬৪) নামে রাজবাড়ীর একজন যাত্রী বলেন, তিনি আগের দিন এসেছিলেন রাজশাহী শহরে ব্যক্তিগত কাজে। মঙ্গলবার সকাল থেকে তিনি স্টেশনে অপেক্ষা করছিলেন। তিনি মধুমতি এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট কেটেছিলেন।

চুয়াডাঙ্গার মনিরুদ্দিন (৭৫) তার স্ত্রীসহ ভোর পাঁচটা থেকে স্টেশনে বসে ছিলেন। তিনি বলেন, রাজশাহী শহরে চিকিৎসক দেখাতে এসেছিলেন। আসার সময় ফেরত টিকিট কেটে এসেছিলেন। এখন নিরুপায় হয়ে স্টেশনে বসে আছেন।

ময়মনসিংহে তোপের মুখে স্টেশন সুপার

এদিকে, ময়মনসিংহ বু্যরো জানায়, ময়মনসিংহ রেলওয়ে জংশনে যাত্রীদের তোপের মুখে পড়েছেন স্টেশন সুপার। নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী হাওর এক্সপ্রেস ট্রেনটি সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ময়মনসিংহ জংশন স্টেশনে এসে পৌঁছায়। এরপরই ট্রেন বন্ধ করে চালক পালিয়ে যান। পরে যাত্রীরা স্টেশন সুপারের কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

ট্রেনের যাত্রী শফিকুল ইসলাম বলেন, 'ময়মনসিংহ জংশনে আসার পর হাওর এক্সপ্রেস ট্রেনটি আর চলছে না। বিমানবন্দর স্টেশন পর্যন্ত আমার টিকিট। ট্রেন বন্ধ থাকায় বাচ্চাদের নিয়ে সমস্যায় পড়েছি। স্টেশনের লোকজন বলছে, ট্রেন আর যাবে না, চালক চলে গেছেন। আমাদের তো আগে থেকে জানানো হয়নি। মোহনগঞ্জ থেকে বিকল্প পথে যেতাম। এখানে কেন এনে আমাদের বিপদে ফেলা হলো।'

হাওর এক্সপ্রেস ট্রেন ঢাকায় যাবে না শোনার পর যাত্রীরা বিক্ষোভ করেন। ঢাকায় যেতে না পারলে কেন ময়মনসিংহ পর্যন্ত আনা হলো, তারা এমন প্রশ্ন করেন স্টেশন সুপারের কাছে। এ সময় টাকা ফেরতের দাবি জানান কয়েকজন যাত্রী।

ময়মনসিংহ রেলস্টেশনের সুপারিনটেনডেন্ট এস এম নাজমুল হক খান বলেন, আন্দোলনের কারণে ২৮ জোড়া ট্রেন বন্ধ। এতে যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী বিআরটিসি বাসে তাঁদের গন্তব্যে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

কুমিলস্না রেল স্টেশন থেকে চলছে বিআরটিসির বাস

এদিকে, কুমিলস্নার স্টাফ রিপোর্টার জানান, রানিং স্টাফদের কর্মবিরতিতে সারাদেশে বন্ধ আছে ট্রেন চলাচল। যাত্রীদের ভোগান্তি কমাতে ট্রেনের টিকিট ব্যবহার করে গন্তব্যে পৌঁছে দিতে শুরু হয়েছে বিআরটিসি বাসের সার্ভিস।

মঙ্গলবার বেলা ১২টায় এই সার্ভিস ব্যবহার করে কুমিলস্না রেল স্টেশন থেকে বাসে সিলেটে রওয়ানা হয়েছেন যাত্রীরা। তবে অনেকেই বিষয়টি জানেন না বলে, অতিরিক্ত বাস ভাড়া দিয়ে যেতে হচ্ছে গন্তব্যে।

বিআরটিসি কুমিলস্নার ম্যানেজার (অপারেশন) মো. মোশারফ হোসেন সিদ্দিকী বলেন, যারা অনলাইনে টিকিট কেটে ফেলেছেন তারা বিনামূল্যে বাসে যেতে পারবেন। এর মধ্যে কুমিলস্না থেকে সিলেটগামী পাহাড়িকা এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকেটে ১৫ যাত্রী বাসে সিলেটে রওনা হয়েছেন।

ট্রেনের টিকেট কেটে বাসে রওনা হওয়া যাত্রী রেহানা আফসার বলেন, 'ট্রেনের টিকেটে বাসে সিলেট যাচ্ছি। তবে সকাল ১০টায় রওনা হবার কথা ছিলো- দুই ঘণ্টা দেরিতে যেতে হচ্ছে।'

আরেক যাত্রী মনিরুল ইসলাম জানান, 'যারা টিকেট ফেরত দিতে আসছে তারা বিষয়টি জানছে- অনেকে জানেন না এভাবে যাওয়া যায়। যাই হোক, দ্রম্নত ট্রেন না চললে দুর্ভোগ বাড়বে।'

তবে বাস না পাওয়া আরেক যাত্রী সাইদুর মোলস্না বলেন, 'আমি জানতাম না ট্রেনের টিকেট দিয়ে বাসে যাওয়া যায়। দুইবার টাকা খরচ করে সিলেট যেতে হচ্ছে।'

প্রসঙ্গত, মূল বেতনের সঙ্গে রানিং অ্যালাউন্স যোগ করে পেনশন দেওয়া এবং আনুতোষিক সুবিধা দেওয়ার দাবি পূরণ না হওয়ায় সোমবার রাত ১২টার পর থেকে কর্মবিরতি পালন করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী সমিতি। এতে সারাদেশে ট্রেন চলাচল বন্ধ আছে।

কুমিলস্না রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার শেখ মো. আনোয়ার হোসেন জানান, 'যারা স্টেশনের টিকেট রিফান্ড করতে আসছেন তারাই বিষয়টি জানতে পারছেন। যাদের কাছে টিকেট আছে তারা চাইলে বিআরটিসি বাসের সেবাটি ব্যবহার করে যেতে পারবেন।'

বিআরটিসি ম্যানেজার মোশারফ হোসেন বলেন, 'পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত এ সুবিধা চালু থাকবে। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ যেখানে চাইবেন আমরা বাস দিতে পারব। কোনো অসুবিধা নাই।'

প্রসঙ্গত, মূল বেতনের সঙ্গে রানিং অ্যালাউন্স যোগ করে পেনশন এবং আনুতোষিকের দাবি পূরণ না হওয়ায় মঙ্গলবার থেকে কর্মবিরতি পালন করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী সমিতি। তাতে সারাদেশে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে।

গার্ড, লোকোমাস্টার, সহকারী লোকোমাস্টার, সাব লোকো মাস্টার এবং টিটিইরা রেলের রানিং স্টাফ। ট্রেন চালানোর সঙ্গে সরাসরি জড়িত এসব কর্মীর সংখ্যা ১৭ শর বেশি।

দৈনিক কর্মঘণ্টা ৮ ঘণ্টা হলেও রানিং স্টাফদের গড়ে ১৫-১৮ ঘণ্টা কাজ করতে হয়। সেজন্য তাদের আগে দেওয়া হত বিশেষ আর্থিক সুবিধা, যাকে রেলওয়ের ভাষায় বলা হয় মাইলেজ। মাইলেজ রানিং স্টাফদের বেতনেরই অংশ।

প্রতি ১০০ কিলোমিটার ট্রেন চালালে রানিং স্টাফরা মূল বেতনের এক দিনের বেসিকের সমপরিমাণ টাকা অতিরিক্ত পেতেন। ৮ ঘণ্টায় এক দিনের কর্মদিবস ধরলে রানিং স্টাফদের প্রতি মাসে কাজ দাঁড়ায় আড়াই বা তিন মাসের সমপরিমাণ। তাদের বেতনও সেভাবেই দেওয়া হত।

এ ছাড়া মূল বেতনের হিসাবে অবসরকালীন ভাতা যা হয়, তার সঙ্গে অতিরিক্ত আরও ৭৫ শতাংশ টাকা বেশি দিয়ে তাদের পেনশন দেওয়া হত।

২০২২ সালের জানুয়ারিতে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে রানিং স্টাফদের সেই সুবিধা বাতিল করা হয়। এরপর থেকে বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ঐক্য পরিষদে ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন করছে।##

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে