রোববার, ০৪ মে ২০২৫, ২০ বৈশাখ ১৪৩২
গভীর হচ্ছে সঙ্কট

অনিশ্চয়তার চক্করে দেশের অর্থনীতি!

যাযাদি ডেস্ক
  ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
অনিশ্চয়তার চক্করে দেশের অর্থনীতি!
অনিশ্চয়তার চক্করে দেশের অর্থনীতি!

জাতীয় রপ্তানি ট্রফি পাওয়া পোশাক খাতের রপ্তানিমুখী কোম্পানি শাশা ডেনিমস নতুন কারখানা খোলার পাশাপাশি ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য ৬০০ কোটি টাকা বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ২০২৪ সালের শুরুতে। কিন্তু পরিবর্তিত বাস্তবতায় সেখান থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানালেন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামস মাহমুদ। এর কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বললেন, 'ঋণ নিয়ে তারপর উচ্চ হারে সুদ দিয়ে ব্যবসা ভায়াবল করা সম্ভব না।'

শাশা ডেনিমসের তিনটি ডাইং ইউনিটে বর্তমানে ১ হাজার ৬০০ কর্মী কাজ করছেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে এ কোম্পানির বার্ষিক আয় ছিল ৭৮৮ কোটি টাকা।

ব্যবসা বাড়াতে ঢাকা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে ২১০টি নতুন লুমের একটি কারখানা তৈরির চেষ্টা করছিল তারা; পরিকল্পনা ছিল এর মাধ্যমে আরও প্রায় সোয়া কোটি ডলারের আয় বাড়ানো। পাশাপাশি আরও একটি পোশাক কারখানায় বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কর্তৃপক্ষ।

এর মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার টার্নওভার বাড়বে এবং দুই হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে বলে তাদের আশা ছিল। তবে ১৪ শতাংশ পেরিয়ে যাওয়া সুদহার বাদ সেধেছে শতভাগ রপ্তানিমুখী ও পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত এ কোম্পানির পরিকল্পনায়।

ওই পরিকল্পনা কাটছাঁট করে এখন শুধু ১৬০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করার সিদ্ধান্ত জানিয়ে শামস মাহমুদ বলেন, 'যেটা না করলেই নয়, করতেই হবে। আমরা কেবল সেই বিনিয়োগটাই করছি।'

শামস মাহমুদের কথায় এটা স্পষ্ট, দেশের অর্থনীতি যে দশার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে, তাতে ব্যবসা বাড়ানোর চেয়ে টিকে থাকার দিকেই তাদের গুরুত্ব দিতে হচ্ছে।

গত জুনে আওয়ামী লীগ সরকার যখন নতুন অর্থবছরের বাজেট দিল, তখনো অর্থনীতি খুব একটা ভালো অবস্থায় ছিল না। কিন্তু এরপর জুলাই-অগাস্টের আন্দোলন, নজিরবিহীন অস্থিরতা, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ব্যবসায়ীদের মধ্যে আস্থার যে সঙ্কট আর অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে, অন্তর্বর্তী সরকারের পাঁচমাসে সেখান থেকে সামলে ওঠা যায়নি।

রপ্তানি খাত বাদ দিলে কোভিডকালীন সময়ের পর এবারই প্রথম অর্থনীতির প্রায় সব সূচক নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি নিয়ে চলছে। ফলে অর্থনীতির সংকট আরও গভীর হচ্ছে কি না, সেই প্রশ্ন উঠছে স্বাভাবিকভাবেই।

এ কে খান অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেডের ভাইস-চেয়ারম্যান আবুল কাসেম খান বললেন, 'ব্যবসায়ী ও ব্যবসার বাইরে যারা আছে, সবার মাঝেই অনিশ্চয়তা কাজ করছে। ব্যবসা তো র্নিভর করে প্রেডিক্টেবলিটির ওপর। রিস্ক যতটা কম হয় নিশ্চয়তা তত বাড়ে। এখন অনেক বেশি অনিশ্চয়তার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি সবাই।'

তার ভাষায়, সবাইকেই এখন 'নতুন পরিস্থিতির' মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে। অনেক রক্ত ঝরার পরও যাতে নতুন করে শুরু করা যায়, সেজন্য সবাই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দিকে তাকিয়ে আছে।

আবুল কাসেম খান বলেন, 'গতি ফিরছে একটু একটু করে, তবে প্রশ্ন আছে অনেক। নির্বাচন কবে হবে? এখনও রোডম্যাপ আসেনি। নতুন সরকার এলে পলিসি যদি বদলে যায়? এমন অনিশ্চয়তায় দেশি-বিদেশি কোনো বিনিয়োগই বাড়ে না।'

তিনি আরো বলেন, 'সরকার পলিটিক্যাল না নন-পলিটিক্যাল আমরা (ব্যবসায়ীরা) বুঝি না। আমরা বুঝি আইনশৃঙ্খলার উন্নতি করতে হবে। এখন প্রধান চ্যালেঞ্জ আমরা ফিল করছি আইনশৃঙ্খলার অবনতি। বিশৃঙ্খলা কাটেনি। ফলে ব্যবসায়ীরা ভয়ে থাকে। যেখানে বিশৃঙ্খলা হবে, শক্ত হাতে দমন করতে হবে।'

কেবল আইনশৃঙ্খলা নয়, নীতি নিয়ে অনিশ্চয়তা, গ্যাসের সংকট, সুদের উচ্চ হার, ব্যাংকের তারল্য সঙ্কট এবং করের বোঝা ও হয়রানির মত বাধার কথা তুলে ধরে ব্যবসায়ীরা বলছেন, অর্থনীতিতে গতি তুলতে যে বিনিয়োগ দরকার, সেই সাহস তারা পাচ্ছেন না।

টিএডি গ্রম্নপের কারখানাগুলোতে প্রতিদিন তিন লাখ থেকে সাড়ে তিন লাখ পোশাক উৎপাদন হয়। প্রতি মাসে ৬০ থেকে ৭০ লাখ পোশাক তারা আন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানি করে। সেই কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আশিকুর রহমান তুহিনও বললেন অনিশ্চয়তায় ভোগার কথা।

তিনি বলেন, 'দেশের এই পরিস্থিতিতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা সবাই ভাবছে, "আরেকটু বুঝেশুনে নিই।" রপ্তানি খাতে যে ইমেজ সংকট তৈরি হয়েছিল তার পর আস্থা ফিরে আসছে না- তা বলব না। তবে ইকোনমি এবং পাওয়ার সেক্টরে সমস্যা রয়ে গেছে। বিশেষ করে গ্যাসের সঙ্কট। ব্যাংকে লিকুইডিটি ক্রাইসিস রয়েছে। অনেক ফ্যাক্টরি তাই ব্যাক টু ব্যাক এলসি খুলতে পারছে না। এ অবস্থায় নতুন ইনভেস্টর যারা তারা ইনভেস্ট করছে না বা অলরেডি যাদের ব্যবসা আছে তারা লাইন বড় করছে না। সবাই ভাবছে, আরেকটু বুঝেশুনে নেই।'

সুসংবাদ নেই বিদেশি বিনিয়োগেও

জুলাই-অগাস্টের অস্থিরতার প্রভাব ফুটে উঠেছে দেশের বাইরে থেকে আসা বিনিয়োগের পরিসংখ্যানেও। ওই সময়ের তিন মাসে সরাসারি বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে ৭১ শতাংশ।

নতুন সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ বা এফডিআই হ্রাস 'অপ্রত্যাশিত নয়' মন্তব্য করে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নাসের এজাজ বিজয় বলেন, 'বিনিয়োগ করা হয় বহু-বছরের পরিকল্পনার ভিত্তিতে। ফলে নতুন বিদেশি বিনিয়োগ আসার ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীদের সামনে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং ব্যবসায়িক পরিবেশ দৃশ্যমান হতে হয়।'

বর্তমানে ব্যবসার জন্য সেই 'কমফোর্টেবল' অবস্থা না থাকায় বেশিরভাগ বিনিয়োগকারী বিনিয়োগ করছে না বলে মনে করছেন ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফআইসিসিআই) সাবেক সভাপতি নাসের এজাজ বিজয়।

সাম্প্রতিক সময়ে শতাধিক পণ্যে শুল্ক-কর বাড়ানোর সিদ্ধান্তে 'গভীর উদ্বেগ' প্রকাশ করে সংগঠনটি বলেছে, 'পর্যাপ্ত গবেষণা বা অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা না করে নীতি প্রণয়ন করায় তা বিনিয়োগকারীদের আস্থায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের ধারাকেও বাধাগ্রস্ত করবে।'

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন বলছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিক জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে দেশে নিট এফডিআই গত অর্থবছরের একই প্রান্তিকের তুলনায় প্রায় ৭১ শতাংশ কমেছে।

জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে বিদেশ থেকে সরাসরি বিনিয়োগ এসেছে ৯৬ কোটি ৯০ লাখ ডলার। আর এ সময় বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ৮৬ কোটি ৫০ লাখ ডলার নিয়ে গেছেন। তাতে নিট বিনিয়োগ দাঁড়ায় ১০ কোটি ৪০ লাখ ডলার।

এর আগে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে বিদেশ থেকে সরাসরি বিনিয়োগ আসে ৯০ কোটি ৭০ লাখ ডলার। সে সময় আগের বিনিয়োগের অর্থ পরিশোধ হয় ৫৪ কোটি ৬০ লাখ ডলার। সে হিসাবে তখন নিট বিনিয়োগ ছিল প্রায় ৩৬ কোটি ডলার।

আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে বিদেশি বিনিয়োগ যেমন কমেছে, তেমনি আগের প্রান্তিকের চেয়েও সেটি অনেক কমেছে।

গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের শেষ প্রান্তিক এপ্রিল-জুন সময়ে নিট বিনিয়োগ ছিল ২৭ কোটি ২২ লাখ ডলার। সেসময় ১০৮ কোটি ডলার দেশে এলেও আগের বিনিয়োগের ক্ষেত্রে পরিশোধ হয় ৮১ কোটি ১০ লাখ ডলার। সেই হিসাবে আগের প্রান্তিকের চেয়ে জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে নিট বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে ৬১ দশমিক ৭৪ শতাংশ।

বিশ্ব ব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, সে সময় দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ 'অস্থিতিশীল' ছিল। এ কারণে বিদেশি বিনিয়োগ কম এসেছে। তিনি আরো বলেন, '১৫ বছরের মধ্যে তো এমন রাজনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি। তাই এদেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করছেন বিদেশিরা।'

কোথায় দাঁড়িয়ে অর্থনীতি?

জুলাইয়ে শুরু হওয়া আন্দোলন, নৈরাজ্য ও ক্ষমতার পালাবদলের পর আইনশৃঙ্খলা অবনতির 'অস্থির' সময়ে রেমিটেন্স ও রপ্তানি আয়ের তথ্যে উন্নতি দেখা গেলেও অর্থনীতির অন্য সূচকগুলো ভালো অবস্থায় নেই। রাজস্ব আদায়, উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন ও বিদেশি ঋণের ছাড় কমেছে।

চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধের তথ্য আমলে নিলে দেখা যায়, বারবার নীতি সুদহার বাড়ালেও মূল্যস্ফীতি বাগে আনা যায়নি। রপ্তানি আয় ও মূল্যস্ফীতির প্রবাহ ইতিবাচক থাকলেও বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ এখনো ২০ বিলিয়ন ডলারের নিচে।

এর মধ্যেই বেড়েছে বিদেশ থেকে নেওয়া ঋণের বোঝা। পালস্না দিয়ে বেড়েছে ঋণ পরিশোধের চাপ। আমদানি ব্যয় মেটাতেও খরচ বেড়েছে। কমেছে জনশক্তি রপ্তানি। সঙ্কোচনমূলক মুদ্রানীতির ফলে বেসরকারি খাতে ব্যাংক ঋণের প্রবাহ কমে ৪২ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থায় দাঁড়িয়েছে।

রাজনৈতিক পটপরিবর্তন ঘিরে সহিংসতা ও নৈরাজ্যকর পরিস্থিতিতে দেশের সামগ্রিক উৎপাদনও ব্যাহত হয়েছে। প্রথম প্রান্তিকে মোট দেশজ উৎপাদনে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১.৮১ শতাংশ। এত কম প্রবৃদ্ধি মহামারী পরবর্তী সময়ে আর দেখা যায়নি। এমন পরিস্থিতিতে বিনিয়োগ না এলে কর্মসংস্থান তৈরি হবে না। তাতে বেকারত্ব বাড়বে।

'কস্ট অব ডুয়িং বিজনেস' এর ক্ষেত্রে বাধাগুলো কমার যে সম্ভাবনা বর্তমান সরকারের সময়ে ছিল, তা হয়নি মন্তব্য করে আবুল কাসেম খান বলেন, 'ব্যবসার ক্ষেত্রে ইকুয়াল অপরচুনিটি তৈরি করে দেন। ইজিলি লাইসেন্স করে দেন। এখানে গতি ফেরেনি এখনও। এনবিআরের ট্যাক্স অডিট, কর দেওয়ার ক্ষেত্রে হয়রানি এখনও আছে। অনেকেই বলেন, ব্যবসা করব নাকি অডিট প্রবলেম সলভ করব। অডিট সামাল দিতে আর ভ্যাট দিতে দিতেই সময় যাচ্ছে।'

'যেহেতু নতুন পদ্ধতিতে নতুন বাংলাদেশ' বলা হচ্ছে, তাহলে এখনও কেন কর নিয়ে ব্যবসায়ীদের ভয়ভীতি থাকবেু সেই প্রশ্ন রাখেন ঢাকা চেম্বারের সাবেক এই সভাপতি।

তার ভাষ্য, 'ব্যবসায়ীরা কিন্তু চোর না। ব্যবসায়ীরাই কিন্তু কর্মসংস্থান তৈরি করছে। ট্যাক্স দিচ্ছে। বাংলাদেশেই ব্যবসা করছে। সিএসআরের মাধ্যমে সোশাল ওয়েলফেয়ারে অবদান রাখছে। দেশে ৪-৫ কোটি মানুষ ব্যবসা করে। তারা কিন্তু দেশেই আছে। অপরাধী হয়ত ১ হাজার আছে; তারা কিন্তু দেশে নাই। বাকিরা আছে, ফলে তাদের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করা না গেলে সঙ্কট আরও গভীর হবে।'

ক্ষমতার পালাবদলের পর আইনশৃঙ্খলার অবনতির কারণে যে অস্থিরতা তৈরি হয়েছিল, তার প্রভাব যে এখনও কাটেনি, সরকারি পরিসংখ্যানেই তা স্পষ্ট।

চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর সময়ে রাজস্ব আহরণ গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় কমেছে ৩ হাজার ৪০৮ কোটি টাকা বা ২ দশমিক ৬২ শতাংশ।

একমাস বিবেচনায় নিলেও গত অর্থবছরের নভেম্বরের চেয়ে চলতি অর্থবছরের নভেম্বরে রাজস্ব আদায় ৮ দশমিক ৯৫ শতাংশ কমে যাওয়ার তথ্য মিলেছে।

এদিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ধীরে চলো নীতিতে ছয় মাসে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) এক পঞ্চমাংশও বাস্তবায়িত হয়নি। জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে ১৭ দশমিক ৯৭ শতাংশ; যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ২২ দশমিক ৪৮ শতাংশ ছিল।

বেসরকারি খাতে ব্যাংক ঋণের নিম্নমুখী প্রবণতা আগে থেকেই যা ছিল, তা আরও কমে ৪২ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থায় নেমেছে; নভেম্বরে এ হার দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ৬৬ শতাংশ। এর আগে ২০২১ সালের মে মাসে কোভিড মহামারীর মধ্যে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবাহের প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৫৫ শতাংশে নেমেছিল।

চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে বিদেশি ঋণের প্রতিশ্রুতি আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৯১ শতাংশ কমে গেছে; আর ২৭ শতাংশ কমেছে অর্থছাড়ের পরিমাণ।

ইআরডি বলছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বরে ৫৮৫ কোটি ৯১ লাখ ডলারের ঋণ ও অনুদানের প্রতিশ্রুতি পায় সরকার। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে প্রতিশ্রুতি মিলেছে ৫২ কোটি ২৬ লাখ ডলারের; যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৯১ শতাংশ কম।

গত পাঁচ মাসে সুদ ও আসল মিলিয়ে ১৭১ কোটি ১০ লাখ ডলারের ঋণ পরিশোধ করতে হয়েছে সরকারকে। অর্থাৎ এই পাঁচ মাসে সরকার ঋণছাড়ের মাধ্যমে যে অর্থ পেয়েছে, তারচেয়ে ১৬ কোটি ডলার (১১ শতাংশ) বেশি খরচ করেছে ঋণ পরিশোধে।

২০২৩-২৪ অর্থবছরে মোট ৯৮৬ কোটি ডলার ঋণ পায় বাংলাদেশ। এসময় বিদেশি ঋণের সুদ ও আসল মিলিয়ে বাংলাদেশকে পরিশোধ করতে হয় প্রায় ৩৩৬ কোটি ডলার।

সাধারণত অর্থছাড়ের তুলনায় ঋণ পরিশোধের পরিমাণ কমই থাকে। আগের দুই অর্থবছরের চিত্রও তেমনটাই ছিল। এতে দেশে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ এক মাসের মাথায় আবার ২০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সবশেষ যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বিপিএম-৬ পদ্ধতি অনুযায়ী রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ১৯ দশমিক ৯৩ বিলিয়ন ডলার।

এর মধ্যেই আমদানি ব্যয় বাড়ার তথ্য মিলেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিসংখ্যানে। দেখা যাচ্ছে, গত অক্টোবরে আমদানিতে খরচ হয়েছে এর আগের বছরের অক্টোবরের চেয়ে ৯ দশমিক ৩২ শতাংশ বা ৫০ কোটি ডলার বেশি।

করার কী আছে?

আবুল কাসেম খান বলেন, 'নাগরিককে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে এবং নাগরিকের নিশ্চয়তা দিতে হবে।' স্বল্প মেয়াদে 'বিশৃঙ্খলা হলে শক্ত হাতে দমন' করার পাশাপাশি প্রতি ৩০ দিন বা ৬০ দিন পরপর ব্যবসায়ীদের সঙ্গে অন্তর্র্ব‌তীকালীন সরকারকে বসার এবং তাদের কথা শোনার অনুরোধ জানাচ্ছেন এ ব্যবসায়ী।

২০০৭-০৮ সময়ের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অনেক কিছুকে সমর্থন করতে না পারলেও সে সময় 'বেটার বিজনেস ফোরাম' নামে যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, সে বিষয়টিতে মনে করিয়ে দিতে চান এ কে খান অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেডের ভাইস-চেয়ারম্যান আবুল কাসেম।

তিনি বলেন, 'উনারা দেখছিলেন, ব্যবসায় যদি এনগেজমেন্ট না বাড়াতে পারি, অর্থনীতি গতিশীল থাকবে না। বর্তমান সরকারেও যারা আছে, তারা আমাদের সঙ্গে বসে ব্যবসা পরিস্থিতি বুঝতে পারলে এখনকারও সমাধান মিলবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে