রোববার, ১৮ মে ২০২৫, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

নিরাপদ মাতৃত্ব : গর্ভবতী মায়ের বিপদ চিহ্ন ও প্রতিরোধে করণীয়

যেসব লক্ষণ গর্ভবতী মায়ের এবং গর্ভের সন্তানের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। এসব লক্ষণ দেখা গেলে তাৎক্ষণিকভাবে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। এ লক্ষণগুলোকে গর্ভাবস্থায় বিপদ চিহ্ন বলা হয়। লক্ষণগুলো জানা থাকলে ক্ষতিকর অবস্থায় পৌঁছানোর আগেই চিকিৎসা নেওয়া সম্ভব হবে এবং গর্ভবতী মা ও গর্ভের শিশু দুজনেরই সুস্থতা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে
  ১৫ মে ২০২৪, ০০:০০
নিরাপদ মাতৃত্ব : গর্ভবতী মায়ের বিপদ চিহ্ন ও প্রতিরোধে করণীয়
নিরাপদ মাতৃত্ব : গর্ভবতী মায়ের বিপদ চিহ্ন ও প্রতিরোধে করণীয়

নিরাপদ ও কাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ একজন মায়ের জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গর্ভাবস্থায় স্বাভাবিক কিছু শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন ছাড়া গর্ভবতী মায়েদের খুব কম ক্ষেত্রেই জটিলতা দেখা দেয়। তবে বিশেষ বিশেষ কিছু লক্ষণ আগে থেকেই সবার জেনে রাখা দরকার। কারণ এসব লক্ষণ গর্ভবতী মায়ের এবং গর্ভের সন্তানের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। এসব লক্ষণ দেখা গেলে তাৎক্ষণিকভাবে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। এ লক্ষণগুলোকে গর্ভাবস্থার বিপদ চিহ্ন বলা হয়। লক্ষণগুলো জানা থাকলে ক্ষতিকর অবস্থায় পৌঁছানোর আগেই চিকিৎসা নেওয়া সম্ভব হবে এবং গর্ভবতী মা ও গর্ভের শিশু দুজনেরই সুস্থতা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

বিপদ চিহ্নসমূহ

1

গর্ভাবস্থার পাঁচটি প্রধান বিপদ চিহ্ন রয়েছে:

রক্তস্রাব

গর্ভাবস্থায় যে কোনো সময়ে যোনিপথে রক্তপাত হওয়া, বিপদচিহ্ন নির্দেশ করে। গর্ভাবস্থার প্রথম বারো সপ্তাহের মধ্যে যোনিপথে রক্তপাতের পাশাপাশি পেটে তীব্রভাবে ব্যথা অনুভূত হলে এবং জ্ঞান হারিয়ে ফেললে, সেটিকে অ্যাক্টোপিক প্রেগন্যান্সি বা জরায়ুর বাইরের গর্ভধারণের লক্ষণ হিসেবে প্রাথমিকভাবে মনে করা হয়। চৌদ্দ থেকে সাতাশ সপ্তাহের মধ্যে পেট ব্যথাসহ রক্তপাত হলে গর্ভপাতের লক্ষণ হতে পারে।

খিঁচুনি

গর্ভাবস্থা, প্রসবের সময় কিংবা প্রসবের পর খিঁচুনি হওয়া গর্ভবতী মায়ের জন্য দ্বিতীয় বিপদ চিহ্ন। খিঁচুনি এক্লাম্পসিয়ার প্রধান লক্ষণ। এক্লাম্পসিয়া গর্ভাবস্থার মারাত্মক জটিলতা এবং সঠিক সময়ে চিকিৎসা না নিলে এতে মা ও শিশু উভয়েরই ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

মাথা ব্যথা ও চোখে ঝাপসা দেখা

গর্ভাবস্থায় যে কোনো সময় খুব তীব্র মাথাব্যথা হলে এবং চিকিৎসা নেওয়ার পরও যদি তা সেরে না যায় কিংবা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরও খারাপ হতে থাকে, তাহলে এটিও একটি বিপজ্জনক অবস্থা নির্দেশ করে। মাথাব্যথার পাশাপাশি চোখে ঝাপসা দেখা, মাথা ঘুরানো ও শরীরে পানি আসার মতো সমস্যা প্রি-এক্লাম্পসিয়ার অন্যতম লক্ষণ। সময়মতো সঠিক চিকিৎসা মারাত্মক ক্ষতিকর পরিণতি থেকে বাঁচাতে পারে।

ভীষণ জ্বর

গর্ভাবস্থায় জ্বরও একটি বিপদ চিহ্ন। গর্ভাবস্থায় বা প্রসবের পর পর একটানা তিন দিনের বেশি জ্বর থাকলে কিংবা যোনিপথে দুর্গন্ধযুক্ত স্রাব নিঃসৃত হলে তা সাধারণত শরীরে কোনো ধরনের ইনফেকশনের ইঙ্গিত দেয়। গর্ভাবস্থায় জ্বর হলে মা ও শিশু উভয়ের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

বিলম্বিত প্রসব

প্রসব বেদনা ১২ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে থাকলে একে বিলম্বিত প্রসব বলে এবং এটিও একটি বিপদ চিহ্ন। বিলম্বিত প্রসবে জন্মের পর সাধারণত শিশুর শ্বাসকষ্ট ও খিঁচুনি হয়।

\হ

অন্যান্য লক্ষণসমূহ

বিপদ চিহ্নগুলোর পাশাপাশি আরও কিছু উপসর্গের ব্যাপারেও সতর্ক থাকতে হবে, যেমন: মাথা ঘোরা, প্রসবের সম্ভাব্য দিনের আগেই পানি ভেঙে যাওয়া, অতিরিক্ত বমি হওয়া বা একদমই খেতে না পারা, গর্ভের শিশুর নড়াচড়া কমে যাওয়া বা একদমই নড়াচড়া না করা, হাত, পা বা মুখমন্ডল অত্যধিক ফুলে যাওয়া বা শরীরে পানি আসা, শ্বাসকষ্ট হওয়া, বুকে ব্যথা কিংবা বুক ধড়ফড় করা, অতিরিক্ত ক্লান্তি ইত্যাদি।

সন্তান প্রসবের পরও মায়ের শারীরিক অবস্থার দিকে নজর রাখতে হবে। কেননা, এসময় বেশ কিছু উপসর্গ দেখা দিতে পারে, যেমন : প্রসবের পর যোনি থেকে অতিরিক্ত রক্তপাত বা স্রাব নিঃসরণ হওয়া, ডিপ্রেশন, স্তনের বোঁটায় ফাটল ধরা বা লাল হয়ে যাওয়া ইত্যাদি।

প্রতিরোধে করণীয়

গর্ভাবস্থার বিপদ চিহ্নগুলো সব সময় আগে থেকেই টের পাওয়া সম্ভব নয়। তবে গর্ভাবস্থায় কিছু সহজ নিয়ম মেনে চললে এসব বিপদ চিহ্ন থেকে অনেকটাই নিরাপদে থাকা যায়, যেমন : নিয়মিত শারীরিক পরীক্ষা করাতে হবে, নিয়মিত বিরতিতে সুষম ও পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করতে হবে, চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ভিটামিন, আয়রন, ফলিক এসিড, প্রোটিন ও ক্যালসিয়ামের সাপিস্নমেন্ট গ্রহণ করতে হবে, সময়মতো ধনুস্টংকার বা টিটেনাসের টিকা গ্রহণ করতে হবে (আগে থেকে টিটেনাসের ৫টি টিকার ডোজ সম্পন্ন করা থাকলে গর্ভাবস্থায় এই টিকা নেওয়ার প্রয়োজন নেই), পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে, পূর্বের কোনো স্বাস্থ্য সমস্যা বা রোগ (উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, এইডস অথবা যৌনবাহিত অন্য কোনো রোগ, অটোইমিউন রোগ ইত্যাদি) নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে, প্রসবকালীন খরচের জন্য সঞ্চয় করতে হবে এবং হাসপাতালে যাওয়ার জন্য পূর্বে থেকেই যানবাহনের ব্যবস্থা করে রাখতে হবে।

\হডা. আবু হেনা মোস্তফা কামাল

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, নীলফামারী সদর, নীলফামারী।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে