রোববার, ০৪ মে ২০২৫, ২১ বৈশাখ ১৪৩২

মানসিক বিভ্রম ক্যাপগ্রাস সিনড্রোম

ক্যাপগ্রাস সিনড্রোম প্রধানত আলঝেইমার রোগ কিংবা ডিমেনশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত। মানুষের স্মৃতিশক্তি আক্রান্ত হয় ও বাস্তবজ্ঞান প্রভাবিত এবং পরিবর্তিত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়।
সুস্বাস্থ্য ডেস্ক
  ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
মানসিক বিভ্রম ক্যাপগ্রাস সিনড্রোম
মানসিক বিভ্রম ক্যাপগ্রাস সিনড্রোম

'ক্যাপগ্রাস সিনড্রোম'। এক ধরনের মানসিক বিভ্রমে ঘনিষ্ঠতম পরিজনটিকেও অচেনা মনে হয়। পরিচিত কারও ভেক ধরা ছদ্মবেশী। স্বামী-স্ত্রী, মা-বাবার মতো কাছের সম্পর্কেও এমন ঘটতে পারে।

আক্রান্ত ব্যক্তি সবসময় যে কোনো জীবন্ত বস্তুর (মানুষ বা পোষা জন্তু) ব্যাপারেই মতিভ্রমে ভুগবে, তেমনটা না-ও হতে পারে। তার ভ্রমের লক্ষ্য হতে পারে কোনো জড় বস্তু, এমনকি কোনো বিশাল গাড়ি কিংবা বাড়িও!

কারা আক্রান্ত হয়?

আট থেকে আশি, নারী কিংবা পুরুষ, শিক্ষিত কিংবা অশিক্ষিত, সব বয়স-শ্রেণিপেশার মানুষের মাঝেই এই মানসিক ব্যাধির সংক্রমণ দেখা দিতে পারে। তবে পরিসংখ্যান বলছে, নারীরাই সাধারণত এই ব্যাধিতে বেশি আক্রান্ত হয়। তাই বলে কেউ যেন মনে করবেন না যে, এক্ষেত্রে কেবল নারীদের একচেটিয়া আধিপত্যই বিরাজ করে। আজকাল নারীদের পাশাপাশি পুরুষরাও প্রায়শই এই ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে।

ইতিহাস

ক্যাপগ্রাস সিনড্রোমের নামকরণ করা হয়েছে ফরাসি সাইকিয়াট্রিস্ট জোসেফ ক্যাপগ্রাসের (১৮৭৩-১৯৫০) নামের ওপর ভিত্তি করে। তিনিই প্রথম এই রোগটির ব্যাপারে উলেস্নখ করেন। রষষঁংরড়হ ফবং ংড়ংরবং, যার আক্ষরিক বাংলা অর্থ দাঁড়ায় 'একই রকম দেখানোর ভ্রম'। প্রাথমিকভাবে তারা ক্যাপগগ্রাস সিনড্রোমকে একটি বিশুদ্ধ সাইকিয়াট্রিক ডিজঅর্ডার হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন, যা স্কিৎজোফ্রেনিয়া বা হিস্টিরিয়ার উপসর্গ হিসেবে দেখা যায়। ১৯৮০'র দশক পর্যন্ত ক্যাপগ্রাস ও রিবৌল-ল্যাচাওয়ের ধারণাই সর্বজনস্বীকৃত ছিল। কিন্তু বর্তমানে ক্যাপগ্রাস সিনড্রোম একটি নিউরোলজিক্যাল ডিজঅর্ডার হিসেবে বিবেচিত হয়, যেখানে প্রাথমিকভাবে ভ্রমের কারণ হিসেবে মনে করা হয় মস্তিষ্কের ক্ষতকে।

যে কারণে দেখা দেয় ক্যাপগ্রাস সিনড্রোম

ক্যাপগ্রাস সিনড্রোম প্রধানত আলঝেইমার রোগ কিংবা ডিমেনশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত। এই দুই ধরনের রোগেই মানুষের স্মৃতিশক্তি আক্রান্ত হয় এবং বাস্তবজ্ঞান প্রভাবিত ও পরিবর্তিত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়।

স্কিৎজোফ্রেনিয়া, প্রধানত প্যারানয়েড হ্যালুসিনেটরি স্কিৎজোফ্রেনিয়া, ক্যাপগ্রাস সিনড্রোমের কারণ হতে পারে। স্কিৎজোফ্রেনিয়াও মানুষের বাস্তবজ্ঞানকে প্রভাবিত করে এবং ভ্রম সৃষ্টির ক্ষমতা রাখে।

এছাড়া কিছু বিরল ক্ষেত্রে, মস্তিষ্কের আঘাত, যা থেকে মস্তিষ্কে মারাত্মক ক্ষত তৈরি হয়, তা ক্যাপগ্রাস সিনড্রোমের কারণ হতে পারে। এটি সবচেয়ে বেশি হয়ে থাকে যদি আঘাতপ্রাপ্ত স্থানটি হয় ডান হেমিস্ফেয়ারের পেছন দিকটা। কেননা ওখান থেকেই মানব মস্তিষ্কে মৌখিক শনাক্তকরণ প্রক্রিয়া পরিচালিত হয়ে থাকে। মস্তিষ্কের আভ্যন্তরীণ গোলযোগের কারণেই এই সিনড্রোম দেখা দেয়। শারীরিক পরিবর্তনও এখানে একটি মুখ্য ভূমিকা পালন করে থাকে। তথ্য পরিবহণ বা উপলব্ধিগত ত্রম্নটির ফলে মানুষের স্মৃতিশক্তির কিছুটা ধ্বংস হয়ে যায় বা সাময়িকভাবে লোপ পায়, যার ফলে মানুষ তার চেনা মানুষকেও অচেনা বলে ভুল করতে পারে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে