মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

দাকোপে সেচ সংকটে বোরো চাষ চরমভাবে ব্যাহত

দাকোপ (খুলনা) প্রতিনিধি
  ২৪ মার্চ ২০২৩, ০০:০০
খুলনার দাকোপে মাজরা পোকার আক্রমণে পরিত্যক্ত বোরো ধান ক্ষেত -যাযাদি

মিষ্টি পানির সেচসহ নানা সংকটে খুলনার দাকোপে বোরো চাষ চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর অধিক জমিতে বোরো ধানের চাষ হয়েছে। কিন্তু পচন রোগ ও মাজড়া পোকার আক্রমণ থেকে ধান ক্ষেত রক্ষা করতে না পারায় অধিকাংশ ক্ষেত এখন পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। ফলে হাজারো কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় তারা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। তবে কৃষকরা পচন রোগ মাজড়া পোকা দমনে মাঠপর্যায়ে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের কোনো সহযোগিতা, পরামর্শ পাচ্ছে না বলে অভিযোগ তুলেছেন।

উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ উপজেলায় ২০ হাজার ৮৮৩ হেক্টর চাষাবাদ যোগ্য জমি রয়েছে। এর মধ্যে চলতি মৌসুমে উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় ২৩৫ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। কিন্তু ওই লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ৩৪০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। গতবছর চাষ হয়েছিল মাত্র ২১৫ হেক্টর জমিতে। এ ছাড়া এ বছর ৫ হাজার ১৬৮ হেক্টর জমিতে তরমুজ, বাঙ্গিসহ অন্যান্য রবিশস্যর চাষ করা হয়েছে। এ বছর বিরিধান-৬৭. ৭৬ হিরা-২, আফতাব ৭০ ও সুপার হাইব্রিড ধানের চাষ বেশি হয়েছে বলে এলাকার কৃষকরা জানান। আমনের পর বিভিন্ন এলাকার প্রায় হাজারো কৃষক এ ধানের আবাদ করেছেন। কিন্তু শুধু মিষ্টি পানির সেচের অভাবে এবং একই সঙ্গে মাজড়া পোকার আক্রমণে অধিকাংশ ধান ক্ষেত এখন পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে।

চালনা পৌরসভার পারখলিসা এলাকার কৃষক নরেশ রায় জানান, তিনি এক একর জমিতে বোরো ধানের চাষ করেছিলেন। এতে তার সব মিলে প্রায় ২৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। প্রথম দিকে ধান ক্ষেত ভালো দেখা গেলেও খাল-বিল শুকিয়ে যাওয়ায় সেচের পানি সংকট দেখা দেয়। একই সঙ্গে ধান ক্ষেতে মাজড়া আক্রমণ করে। এ সময়ে তিনি মাঠপর্যায়ে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তার কোনো সহযোগিতা, পরামর্শ না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েন। পরে তিনি প্রতিকারের জন্য উপজেলা কৃষি অধিদপ্তরে গিয়ে পরামর্শ নিয়ে সে মোতাবেক সার, কীটনাশক স্প্রে করেও কোনো ফল পাননি। যার কারণে এখন তার ক্ষেত পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে বলে জানান। তার মতো একই এলাকার অসিম মন্ডল, প্রতাপ বিশ্বাস, সুশান্ত সরদারসহ একাধিক কৃষক একই অভিমত ব্যক্ত করেন।

কৈলাশগঞ্জ এলাকার সাবেক ইউপি সদস্য কৃষক সিন্ধু রায় বলেন, তিনি পৌনে ২ বিঘা জমিতে বোরো ধানের চাষ করেছেন। এতে তার এ পর্যন্ত প্রায় ১৮ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। প্রথমে ধানের চারা রোপণের পর তার ক্ষেত ভালো হয়েছিল। পরে সেচের পানি সংকট হয়ে পড়ে। একই সঙ্গে ক্ষেতে মাজড়া পোকা আক্রমণ করে। তখন তিনি মুঠো ফোনের মাধ্যমে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ নিয়ে প্রতিকারের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। এ ছাড়া তার আশপাশে একাধিক ক্ষেত পরিত্যক্ত অবস্থয়া পড়ে আছে বলে জানান।

এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কেএম মাকসুদুন্নবী জানান, 'প্রতি মৌসুমে এ অঞ্চলে বোরো চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু মিষ্টি পানি সংরক্ষণ ও সেচের অভাবে এবং পানিতে লবণাক্ততার কারণে বোরো চাষ ব্যাহত হচ্ছে। এ ছাড়া দীর্ঘদিন বৃষ্টি না হওয়ায় কৃষকদের ধানক্ষেত এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। আর আমাদের জনবলের অনেক সংকট রয়েছে। ২৮ জনের স্থলে রয়েছে মাত্র ৭ জন। একজনের দুই থেকে তিনটি ইউনিয়নের দায়িত্ব পড়েছে। যে কারণে কৃষকদের সময়মতো পরামর্শ দিতে পারছি না। তারপরও আমরা কৃষকদের যতটুকু পারি পরামর্শ এবং সহযোগিতা করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে