খুলনার দাকোপে বিভিন্ন খাল ও জলাশয়ে আড়াআড়ি টোনাজাল এবং পাটাতন নেটের বেড়া দিয়ে চলছে মাছ শিকার। এতে পানি নিষ্কাশনসহ নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির ফলে উপজেলার বাজুয়া ও চড়া নদী, পূর্ব বাজুয়া, কচাসহ অসংখ্য খালের দিন দিন কমে আসছে গভীরতা। এ ছাড়া এলাকার বহু মানুষের আমিষের চাহিদা পূরণেও পড়ছে নেতিবাচক প্রভাব। এভাবে চলতে থাকলে আগামীতে কৃষিকাজ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হতে পারে বলে এলাকার হাজারও কৃষক আশঙ্কা করছেন।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, সুন্দরবন উপকূল ঘেঁষা এই উপজেলায় বিভিন্ন নামে ২২৮টি বেশি খাল ও জলাশয় রয়েছে। এসব অধিকাংশ সরকারি খাস খালগুলো নামমাত্র ইজারা নিয়ে ইজারাদার অথবা গায়ের জোরে কতিপয় অসাধু ব্যক্তি স্থানীয় প্রভাবশালী নেতাদের ছত্রছায়ায় দখলে রেখেছেন। তারা নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে আড়াআড়ি অবৈধভাবে বাঁধ, খন্ড খন্ড টোনাজাল, নেটজাল, পাটাজাল, চাকজাল, কারেন্ট জাল ও পাটাতন নেটের বেড়া দিয়ে মাছ শিকার করছেন। তাছাড়া খালের ওপর গড়ে উঠেছে বসতঘরসহ নানা স্থাপনা এমনকি পাকা প্রাচীরও। এতে বর্ষা মৌসুমে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা দুর্বলে ব্যাপক জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে অধিকাংশ কৃষকের বীজতলা ও রোপা আমনের ক্ষয়ক্ষতি বেড়ে চলেছে। আর শুকনো মৌসুমে খালে পানি ধারণক্ষমতা না থাকায় সেচ সংকটের কারণে প্রধান অর্থকরী ফসল তরমুজ, রবিশস্য ও বোরো চাষ চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
এসব কারণে এক সময়কার জলাশয়ে ভরা এই উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মানুষের চলাচলের একমাত্র মাধ্যম নৌকা যেমন হারিয়ে যাচ্ছে, তেমনি কৃষিকাজেও দেখা দিচ্ছে চরম বিপর্যয়। অন্যদিকে পলিমিশ্রিত পানি ওইসব জালে বাধাগ্রস্ত হয়ে খালের গভীরতা দিন দিন কমে আসছে। এতে অসংখ্য দেশি প্রজাতির মাছের পোনা নিধন হচ্ছে বলে কৃষকদের অভিযোগ। ফলে উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার ১০৬টি গ্রামের প্রায় দুই লাখ মানুষের আমিষের চাহিদা পূরণেও পড়েছে নেতিবাচক প্রভাব।
চুনকুড়ি এলাকার সাবেক ইউপি সদস্য জীবননান্দ মন্ডল জানান, তার জানামতে মৎস্য সংরক্ষণ নামক একটি আইন আছে। আইনটি শুধু খাতা-কলমে সীমাবদ্ধ। বাস্তবে কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ নেই। যার প্রমাণ দাকোপের প্রতিটি খাল বা নদীতে তাকালেই দেখা যায়। খালগুলোয় ১০০ থেকে ৫০০ গজের মধ্যে ঘন ঘন জাল দিয়ে মাছ শিকারের ফলে পানি সরবরাহের ব্যাপক প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হচ্ছে। কৃষকরা সেচ সংকটে রবিশস্যসহ বোরো চাষ করতে পারে না।
তিনি আরও বলেন, কিছু ইজারাদার বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত থেকেও ভুয়া মৎস্যজীবী সেজে সমিতির নামে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো ম্যানেজ করে নদী ও খাল ইজারা নেয়। পরে সাধারণ জনগণের মধ্যে প্রতিযোগিতায় ঘাট হিসেবে বিক্রি করছে। যে কারণে মৎস্য সংরক্ষণ আইন কাগজ-কলমে বন্দি থাকছে। ফলে অসংখ্য দেশি প্রজাতি মাছের পোনা নিধন হচ্ছে। তিনি বিভিন্ন খালের সব জাল অপসারণ এবং কৃষকের কথা বিবেচনা করে খালগুলো ইজারা বন্দের দাবি জানান।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বলেন, খালে আড়াআড়ি টোনাজাল পেতে রাখলে এবং পানি সরবরাহ সঠিকভাবে না করলে দিন দিন গভীরতা কমে যাবে। এতে বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয় এবং শুকনো মৌসুমে কৃষকরা সেচ সংকটে পড়ে। এভাবে চলতে থাকলে এক সময় কৃষিকাজ মারাত্মক ব্যাহত হতে পারে।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সেলিম সুলতান জানান, আগেও উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে অনেক জাল বিনষ্ট করেছেন। আগামী কয়েক দিন পর আবারও অভিযান পরিচালনা করবেন।