রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

মামলায় আটকা ২৪৬৪১ কোটি টাকার ভ্যাট

যাযাদি ডেস্ক
  ১৮ মার্চ ২০২৪, ০০:০০

চলতি (২০২৩-২৪) অর্থবছর ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য দেওয়া হয়েছে এনবিআরকে। তবে প্রথম ছয় মাসে (জুলাই থেকে ডিসেম্বর) রাজস্ব আদায় হয়েছে বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রার মাত্র সাড়ে ৩৮ শতাংশ। গত জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে এক লাখ ৬৫ হাজার ৬৩০ কোটি টাকার শুল্ক-কর আদায় হয়েছে।

এ সময়ে এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক লাখ ৮৮ হাজার ৮৫৬ কোটি টাকা। আমদানি, ভ্যাট ও আয়কর- এই তিন খাতের মধ্যে কোনোটিই লক্ষ্য পূরণ করতে পারেনি গত ছয় মাসে। এ তিন খাতের মধ্যে আয়কর খাতে রাজস্ব আদায়ে সবচেয়ে বেশি ঘাটতি। এ খাতে ছয় মাসে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ৫৯৩ কোটি টাকা।

অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে ভ্যাট খাতে ঘাটতি ৬ হাজার ৭০ কোটি টাকা। এ সময়ে ভ্যাট বাবদ আদায় হয়েছে ৬৪ হাজার ৭৩৭ কোটি টাকা, লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭০ হাজার ৮০৮ কোটি টাকা। ভ্যাট আদায়ে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ার অন্যতম কারণ মামলা। এনবিআরের হিসাব অনুযায়ী, কেবল ভ্যালু অ্যাডেড ট্যাক্স (ভ্যাট) বাবদ আটকে আছে ২৪ হাজার ৬৪১ কোটি টাকা। এজন্য বিভিন্ন সময়ে মামলা হয়েছে ১০ হাজার ৩০১টি। প্রতি মাসেই বড় সংখ্যক মামলা নিষ্পত্তি হলেও নতুন করে আরও মামলা হচ্ছে। মামলাজট ঠেকাতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিভিন্ন উদ্যোগ নিলেও তা কাজে আসছে না।

আদালতের নির্ধারিত প্রক্রিয়ার বাইরে গিয়ে স্বল্পসময়ে বিরোধ নিষ্পত্তির প্রক্রিয়া বা এডিআর কিংবা এনবিআরের অধীন কাস্টম ও ভ্যাট সংক্রান্ত আপিলাত ট্রাইবু্যনাল- কোনো কিছুই মামলার জট কমাতে পারছে না। সবচেয়ে বেশি মামলা ভ্যাট সার্টিফিকেট নিষ্পত্তিতে। এ খাতে মামলা ৩ হাজার ৫৫৯টি, যার বিপরীতে সরকারের রাজস্ব আটকা ২৬৪ কোটি টাকার।

এছাড়া, চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত আপিল কমিশনারেটে ২৭ মামলার বিপরীতে আটকে আছে ৮৩ কোটি টাকা, আপিলাত ট্রাইবু্যনালে ২০২ মামলা বিপরীতে আটকে ২৪৮ কোটি টাকা, হাইকোর্ট বিভাগে ৩ হাজার ৪৮৬ মামলার বিপরীতে ১৮ হাজার ৭৮২ কোটি টাকার রাজস্ব আটকে আছে। আপিল বিভাগে ১৩৯ মামলার বিপরীতে এক হাজার ২৭৯ কোটি টাকা, মূসক ১৪.১ এ এক হাজার ৫৮২ মামলার বিপরীতে এক হাজার ৫৩২ কোটি টাকা, বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির (এডিআর) ৩৫ মামলার বিপরীতে ৩৮৬ কোটি টাকা ও অন্য এক হাজার ২৭১ মামলার বিপরীতে ২ হাজার ৬৩ কোটি টাকার রাজস্ব আটকে আছে সরকারের। সব মিলিয়ে ১০ হাজার ৩০১ মামলার বিপরীতে আটকে আছে ২৪ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনবিআরের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, নব্বইয়ের দশক থেকে দেশে ভ্যাটের প্রচলন শুরু। ভ্যাট অধ্যাদেশকে আইনে পরিণত করার মাধ্যমে ১৯৯১ সালের জুলাই মাস থেকে ভ্যাট চালু হয়। মূলত সেসময় থেকে ভ্যাট ফাঁকি, ভ্যাট মামলাও শুরু। কোম্পানিগুলো ভ্যাট দিতে চায় না। ভ্যাট মওকুফ করতে হাইকোর্টে যেতেও রাজি এসব প্রতিষ্ঠান।

নব্বইয়ের দশক থেকে দেশে ভ্যাটের প্রচলন শুরু। ভ্যাট অধ্যাদেশকে আইনে পরিণত করার মাধ্যমে ১৯৯১ সালের জুলাই মাস থেকে ভ্যাট চালু হয়। মূলত সেসময় থেকে ভ্যাট ফাঁকি, ভ্যাট মামলাও শুরু। কোম্পানিগুলো ভ্যাট দিতে চায় না।

সূত্র জানায়, চলতি বছরের জানুয়ারিতে ভ্যাটের আট খাতে নতুন মামলা হয়েছে ১৭১টি, যাতে আটকে গেছে ২৭৯ কোটি টাকার রাজস্ব। একই মাসে নিষ্পত্তি হয়েছে ১৩৯ মামলা, যেখানে ছাড় হয়েছে (এনবিআর পেয়েছে) সাড়ে ৬৮ কোটি টাকার রাজস্ব। ২০২৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে এক হাজার ৫৯০টি, এতে ছাড় হয়েছে ২ হাজার ৭৫৯ কোটি টাকার রাজস্ব।

তবে মামলাজট কমাতে এনবিআর বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির সদস্য (ভ্যাট নিরীক্ষা) ড. মো. সহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, 'এডিআর (বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি) ব্যবস্থা অধিক কার্যকরের মাধ্যমে মামলা দ্রম্নত নিষ্পত্তির নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে মাঠপর্যায়ের অফিসগুলোকে। আগের চেয়ে মামলাও কিছুটা কমানো সম্ভব হয়েছে।'

এ বিষয়ে এনবিআরের ভ্যাট শাখার সাবেক সদস্য আবদুল মান্নান বলেন, 'প্রতিষ্ঠানগুলো একসঙ্গে বড় অংকের ভ্যাট পরিশোধ করতে চায় না। এজন্য তারা মামলা করে ভ্যাট আটকায়। মামলা, শুনানি, আপিলসহ নানান প্রক্রিয়ায় তারা সময়ক্ষেপণ করে। যদিও মামলায় হেরে গেলে তখন তাদের জরিমানাসহ পুরো ভ্যাটের টাকা দিতে হয়।'

মূসক খাত থেকে বিগত, চলতি ও আগামী অর্থবছর (২০২৩-২৪, ২০২৪-২৫ ও ২০২৫-২৬) প্রায় ৫ লাখ ১৭ হাজার ৭০০ কোটি টাকা রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করছে এনবিআর। তবে এ আদায়ে বড় বাধা ভ্যাটের মামলা ও তাতে আটকে থাকা রাজস্ব।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভ্যাট আদায় বাড়তে ইলেকট্রনিক ফিসকেল ডিভাইস (ইএফডি) এবং সেলস ডাটা কন্ট্রোলার (এসডিসি) মেশিন বসাতে গুরুত্ব দিচ্ছে এনবিআর। পাঁচ বছরে সারাদেশে তিন লাখ ইএফডি মেশিন বসানো হবে। এ পরিকল্পনা সফল হলে বাড়বে রাজস্ব আহরণ। এছাড়া ভ্যাট হারের মধ্যে পার্থক্যও কমিয়ে আনা হবে। বর্তমানে খুচরায় ১৫ শতাংশ, ই-কমার্সের ওপর সাড়ে ৭ শতাংশসহ অনেক খাতেই ভিন্ন ভিন্ন ভ্যাট হার রয়েছে, যা কমিয়ে আনা হবে। পাশাপাশি ভ্যাট আদায় বাড়াতে প্রশাসনিক সংস্কারের কথা জানিয়েছে এনবিআর।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে