বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১

ঈদের ছুটিতে পর্যটকের পদচারণায় মুখর বিনোদনকেন্দ্র

স্বদেশ ডেস্ক
  ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
ঈদের ছুটিতে পর্যটকের পদচারণায় মুখর বিনোদনকেন্দ্র

পবিত্র ঈদুল ফিতরের টানা ছুটিতে দেশের বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্র ও বিনোদন কেন্দ্রে পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড় দেখা দিয়েছে। পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিন এবং ঈদ-পরবর্তী পাঁচ দিন পর্যন্ত পর্যটক ও বিনোদনপ্রেমীদের উপস্থিতিতে মুখরিত ছিল বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্র ও বিনোদন কেন্দ্র। মূলত শহরের কোলাহল থেকে একটু স্বস্তি পেতে এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে সকাল থেকে গভীর রাত অবধি এসব জায়গায় ভিড় জমিয়েছেন বিনোদনপ্রেমীরা। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে বিস্তারিত- বাঁশখালী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি জানিয়েছেন, পবিত্র ঈদুল ফিতরের টানা ছুটিতে চট্টগ্রামের বাঁশখালী সমুদ্র সৈকতে পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড় দেখা দিয়েছে। হাজারো পর্যটকের উপস্থিতিতে মুখরিত ছিল বাঁশখালী সমুদ্র সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্ট। ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে হাজার হাজার পর্যটক সকাল থেকে গভীর রাত অবধি বাঁশখালী সমুদ্র সৈকতে ভিড় জমিয়েছে। এতে পর্যটকে মুখরিত হয়ে ওঠে সম্ভাবনাময় এই সমুদ্র সৈকত। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিন বিকেল থেকেই বাঁশখালী সমুদ্র সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্ট হাজার হাজার পর্যটকের উপস্থিতিতে মুখরিত হয়ে ওঠে। বিশেষ করে বাহারছড়া পয়েন্ট ছিল পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড়। একই সঙ্গে কদমরসুল, হালিয়া পাড়া, গন্ডামারা, ছনুয়াসহ অন্যান্য পর্যটন স্পটেও ছিল পর্যটকের উপচে ভিড়। পর্যটকরা সৈকতের বুকে আছড়ে পড়া ছোট-বড় ঢেউয়ে সাঁতার কেটে মিতালিতে মেতেছেন। অনেকে আবার বন্ধুদের সঙ্গে হৈ-হুলেস্নাড়ে মেতেছেন। সব মিলিয়ে পর্যটকের কোলাহলে সমুদ্র সৈকতের বেলাভূমিতে আনন্দ-উচ্ছ্বাস যেন ছড়িয়ে পড়েছে। তবে পর্যটকে মুখরিত থাকলেও পর্যটকদের জন্য রাত যাপনের হোটেল-মোটেল না থাকায় দুর্ভোগ ও বিড়ম্বনায় পড়তে দেখা গেছে সৈকতে আসা অধিকাংশ পর্যটকের। কেউ স্থানীয় আত্মীয়দের বাসাবাড়িতে রাত কাটিয়েছেন। অনেকেই আবার রাগ করে চলে গেছেন। এছাড়া সৈকতে যাতায়াতের গাড়ি সংকট ছিল প্রকট। এতে পর্যটকের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করেছে স্থানীয় যাত্রী পরিবহণগুলো। সাতকানিয়া থেকে আসা কুতুব উদ্দীন বলেন, 'দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারের পর এটি আমার চোখে দেখা সবচেয়ে সুন্দর সমুদ্র সৈকত। ঈদের ছুটিতে এসেছি। ভালোই লাগছে। তবে বিচ পরিচর্যা ও পর্যাপ্ত নিরাপত্তার অভাব দেখেছি। নাই কোনো শৃঙ্খলা, নাই কোনো টুরিস্ট পুলিশ।' চট্টগ্রামের বায়েজিদ থেকে আসা মাহিরা বলেন, 'বন্ধুদের সঙ্গে ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে এখানে এসেছি। আসার সময় দেখলাম রাস্তাঘাট খুবই বাজে। এরপর এখানে এসে কোথাও কোনো হোটেল পাইনি। তাই দ্রম্নতই বাসায় চলে যেতে হচ্ছে।' চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড থেকে আসা পর্যটক হাবিব উলস্নাহ বলেন, 'ঈদের পর নিজেকে একটু সময় দিতে প্রতিবারের মতো আমার প্রিয় জায়গা বাঁশখালী সমুদ্র সৈকতে ছুটে এলাম। তবে বিচে নাই কোনো ব্যবস্থাপনা কমিটি। দীর্ঘদিন ধরে সৈকতে যাতায়াতের সড়কের যা তা অবস্থা। সব মিলিয়ে এই সৈকতে সরকারের বিশেষভাবে নজর দেওয়া উচিত।' বাহারছড়ার অটোরিকশা চালক বেলাল উদ্দিন বলেন, 'আমরা ঈদের এই সময়ের অপেক্ষায় থাকি। কারণ পবিত্র ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহায় সমুদ্র সৈকতে পর্যটকের প্রচুর পরিমাণে ভিড় থাকে। ঈদের পরবর্তী পাঁচ দিনেই পুরো এক মাসের রোজগার হয়। তবে রাস্তার অবস্থা খারাপ হওয়ায় নির্দিষ্ট সময় থেকে অতিরিক্ত সময় ব্যয় হয়। এতে পাঁচটার জায়গায় ভাড়া মারতে পারি তিনটা। সমুদ্র সৈকতে যাতায়াতের রাস্তাটা দ্রম্নতই সংস্কার করা দরকার।' পর্যটকের উপচে পড়া ভিড়ে আশার আলো দেখছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। এতে ব্যবসায়ীরা জানান, বাঁশখালী সমুদ্র সৈকতে ঈদ উপলক্ষে প্রচুর পরিমাণে পর্যটক আসায় বেচাবিক্রি ভালোই হচ্ছে। কোথাও দম ফেলার সময় নেই তাদের। খানখানাবাদ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি নজরুল ইসলাম বলেন, পর্যটন কেন্দ্র স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় সব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এখানে বিদ্যমান। সৈকতে লাল কাঁকড়া সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে দেয়। এই বাঁশখালী সমুদ্র সৈকত থেকে সরাসরি সূর্যাস্তের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন পর্যটকরা। সমুদ্রের সঙ্গে গা ঘেঁষে রয়েছে কুতুবদিয়া চ্যানেল, আর কাছেই দ্বীপ কুতুবদিয়া। পর্যটকরা চাইলে দ্বীপ ঘুরেও আসতে পারবেন। তবে রাস্তাঘাট আরও উন্নত হলে এখানে পর্যটকদের স্বর্গ হয়ে উঠবে। বাহারছড়া ইউপি চেয়ারম্যান রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, 'আমরা শুরু থেকেই বাঁশখালী সমুদ্র সৈকতকে সরকারিভাবে পর্যটন স্পট ঘোষণার দাবি জানিয়ে আসছি। স্থানীয়দের পক্ষে থেকে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। এছাড়া পর্যটকদের সেবায় আমরা সর্বদা প্রস্তুত আছি।' বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মজনু মিয়া বলেন, এবারে ঈছুল ফিতর উপলক্ষে বিপুলসংখ্যক পর্যটক বাঁশখালী সমুদ্র সৈকত ভ্রমণে এসেছেন। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ টহল বাড়ানো হয়েছে। পর্যটকদের কাছ থেকে কোনো অভিযোগ পেলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ভূঞাপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি জানান, ঈদ ও বাংলা নববর্ষের আনন্দ উপভোগ আর যান্ত্রিক জীবনে কর্মব্যস্ততার ফাঁকে পরিবার-পরিজন ও প্রিয় মানুষকে সঙ্গে নিয়ে যমুনার তীরে বিনোদনপ্রেমীদের ঢল নেমেছে। এ উৎসবকে কেন্দ্র করে টাঙ্গাইলের অন্যতম বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্বপাড়ে যমুনা নদীর তীরবর্তী গরিলাবাড়ী পাথরঘাটে গড়ে উঠেছে বিনোদন কেন্দ্র। যমুনা নদীর ওপর নির্মিত বঙ্গবন্ধু সেতু ও নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে রেল সেতু দেখতে ছুটে আসছেন টাঙ্গাইলসহ দেশের নানা প্রান্তের বিনোদনপ্রেমী হাজারো মানুষ। এই বিনোদন কেন্দ্রে সন্ধ্যায় সূর্যাস্ত হয়ে ওঠে মনোরম, মনে করিয়ে দেয় কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকতকে। এ ছাড়া এখানে রয়েছে বঙ্গবন্ধু সেতু, আনন্দ পার্ক, বঙ্গবন্ধু সেতু রিসোর্ট, প্রাণী জাদুঘর, শিশু পার্ক, বঙ্গবন্ধু স্মৃতি মু্যরাল, সেনানিবাস, কপি হাউস ও বিপণিবিতান মার্কেট, সুইমিংপুল, হরিণ দেখার দৃশ্য, বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব গোল চত্বর এবং ঔষধি গাছের বাগান। দর্শনার্থীদের জন্য রয়েছে নৌকা বা ছোট ট্রলার ও স্পিডবোটযোগে নদীতে ঘুরে বেড়ানো ও পথে বঙ্গবন্ধু সেতু, শেখ মুজিবুর রহমান রেল সেতু দেখার ব্যবস্থা। এখানে খেলনার দোকান, ফুসকা হাউস ও ফাস্ট ফুডসহ নানা রকম দোকানপাট গড়ে উঠেছে। এখানে নৌকা বা ট্রলার দিয়ে ঘুরতে জনপ্রতি ৫০ টাকা লাগে। স্থানীয়দের ছাড়াও টাঙ্গাইল, কালিহাতী, ঘাটাইল, গোপালপুর, মধুপুর, ধনবাড়ী সখীপুর ও গাজীপুর থেকে ছুটে আসেন এই যমুনার তীরে। মির্জাপুর থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্বপাড়ে ঘুরতে আসা মিলি আক্তার, রুমানা ইসলাম বলেন, 'সারা বছর আমরা কর্ম ব্যস্ত ও সংসার নিয়ে থাকি। ঈদ ও নববর্ষের দিনটি অন্য দিনগুলো থেকে আমাদের কাছে আলাদা। তাই ঈদ ও নববর্ষের আনন্দ পরিবারের সঙ্গে উপভোগ করতে বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্বপাড়ে এসেছি।' বগুড়ার শেরপুর থেকে আসা ব্যাংক কর্মকর্তা রানা মন্ডল বলেন, এর আগে সেতু দেখতে পরিবার নিয়ে আসা হয়নি। এবার যেহেতু লম্বা ছুটি পেয়েছি তাই ঈদ উপলক্ষে ঘুরতে এসেছি। এখানে এসে খুব ভালো লাগছে। স্থানীয় ব্যবসায়ী রোমান মিয়া বলেন, 'বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণ হওয়ার পর থেকে এ সেতু দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন ছুটে আসে। বর্তমানে আরেকটি সেতু যুক্ত হয়েছে। যেহেতু টাঙ্গাইলে তেমন কোনো বিনোদন কেন্দ্র নেই, সে কারণে এখানে একটি স্থায়ী পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা সম্ভব। দর্শনার্থীদের নিরাপত্তায় গত ঈদের মতো এ ঈদ ও নববর্ষে বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানান বঙ্গবন্ধু (সেতুপূর্ব) নৌ ফাঁড়ির এএসআই শাহ্‌ আলম। বোরহানউদ্দিন (ভোলা) প্রতিনিধি জানান, সবুজ প্রকৃতির ছোঁয়া, তেঁতুলিয়া নদীর সলাত সলাত ঢেউ, বিকেলের সূর্যের বর্ণিল আলোচ্ছটা ও প্রকৃতির নির্মল বাতাস মোহমুগ্ধ করে রাখে নানা বয়সি দর্শনার্থীদের 'বঙ্গবন্ধু উদ্যান'। ঈদ কিংবা ছুটির দিনে এখানে তিল ধারণের ঠাঁই থাকে না। এবারের ঈদেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। ভোলা সদর উপজেলার দক্ষিণ দীঘলদি ইউনিয়নের কোড়ালিয়া গ্রামে তেঁতুলিয়া নদীর পাড় ঘেঁষে প্রায় ২ একর এলাকাজুড়ে গড়ে উঠেছে দৃষ্টিনন্দন 'বঙ্গবন্ধু উদ্যান'। এটি ভোলা-১ আসনের সংসদ সদস্য সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের গ্রামের বাড়ির পেছনের অংশে। জেলার অন্যতম দর্শনীয় স্পট পর্যটনের এক নতুন দিগন্ত সৃষ্টি করেছে উদ্যানটি। তেঁতুলিযার মাঝ থেকে দেখে মনে হয়, কোনো রাজবাড়ীর ঘাট। বিকেলের মিষ্টি আলোয় বর্ণিল হয়ে ওঠে ঘাটের সিঁড়ি। ঘাটে গেলে চোখে পড়ে চারদিকের অপরূপ নয়নাভিরাম দৃশ্য। রাস্তা থেকে পার্কে প্রবেশের বিশাল সুন্দর ফটক। সেখানে বঙ্গবন্ধু ও তার স্নেহধন্য তোফায়েল আহমেদের স্মৃতিময় ছবি সাঁটা। নিচে সড়ক থেকে উঁচু বাঁধে উঠে গেছে সমান্তরাল সড়ক। বেড়িবাঁধে উঠে, আবার সিঁড়ি নেমে গেছে নদীর জলসীমানায়। তেঁতুলিয়া নদীর তীরসহ বেড়িবাঁধ পাকা বস্নক মুড়ে দেওয়া হয়েছে। মাঝেমধ্যে জলচৌকির মতো রং করা আরসিসি বস্নক উঁচু রাখা হয়েছে বসার জন্য। পার্কের পূর্ব পাশ পরিচিত 'কান্ট্রিসাইড' নামে, আর পশ্চিম পাশের নাম 'রিভারসাইড'। কান্ট্রিসাইডে নানা রকম রাইড আছে শিশুদের জন্য। নৌকা, দোলনা, চরকি, নাগরদোলা। পার্কে প্রবেশ করতে বা নদীতে সাঁতার কাটতে টাকা লাগে না। বেড়িবাঁধে ওঠার জন্য অনেক সিঁড়ি। বাঁধের ওপর আছে গোলঘর। শানবাঁধানো গোল বেঞ্চ, গোলাকার টেবিল। শানের পাকা চাল। সেখানে মানুষ দল বেঁধে আড্ডা দেয়, চলে গল্পগুজব।

পর্যটকরা সাধারণত দুপুরের পর এই বঙ্গবন্ধু উদ্যানে ভিড় জমান। শিশুরা যখন নাগরদোলা, দোলনা, চরকিতে চড়ে হৈ-হুল্লোর করে তখন আবহমান বাংলার চিরায়ত ছবি ভেসে ওঠে।

পাইকগাছা (খুলনা) প্রতিনিধি জানান, ঈদ আনন্দে পাইকগাছার ব্রিজগুলোতে ছিল দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়। দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত জনস্রোতে রূপ নেয় ব্রিজ এলাকা। পাইকগাছায় বিনোদনের তেমন কোনো স্পর্ট না থাকায় ব্রিজগুলোই বিনোদনের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাড়ুলী স্যার পিসি রায়ের বসতভিটা ও উপজেলা সদরে মধুমিতা পার্ক নামে একটি পার্ক থাকলেও সেখানে কোনো বিনোদনের পরিবেশ না থাকায় কেউ যায় না। তবে শিববাটি ব্রিজের পাশে বিনোদনের জন্য রয়েছে একমাত্র পার্ক।

নদীবেষ্টিত পাইকগাছা উপজেলা সদর পার্শ্ববর্তী ইউনিয়নগুলো ৩টি ব্রিজ দ্বারা যোগাযোগ মাধ্যম তৈরি হয়েছে। পূর্ব পাশে শিবসা ব্রিজ, দক্ষিণ পাশে শিববাটী ব্রিজ ও পশ্চিম দিকে কপোতাক্ষ নদের ওপর বোয়ালিয়া ব্রিজ অবস্থিত। যেকোনো উৎসবে এই ব্রিজ ৩টি দর্শনার্থীদের বিনোদনের কেন্দ্র হিসেবে পরিণত হয়।

এবারের ঈদে বোয়ালিয়া ফার্ম ও বোয়ালিয়া ব্রিজে দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড় ছিল। দর্শনার্থী মিতু জানান, পাইকগাছায় বিনোদনের জন্য তেমন কোনো পার্ক না থাকায় বোয়ালিয়া ব্রিজ ও ফার্ম এলাকায় ঈদে বন্ধুদের নিয়ে ঘুরতে এসেছেন। উন্মুুক্ত পরিবেশে খুব ভালো লাগছে। দর্শনার্থীদের নিরাপত্তার জন্য ব্রিজগুলোতে পুলিশি টহল ব্যবস্থা ছিল।

বদলগাছী (নওগাঁ) প্রতিনিধি জানান, নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার বিশ্ব ঐতিহ্য দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বড় প্রতœতাত্তি¡ক নিদর্শন পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার (সোমপুর বিহার) থেকে সরকারের রাজস্ব আয় হয়েছে ১৭ লাখ ৪৭ হাজার টাকা। আর ৫৩ হাজার ৪০৭ জন পর্যটক ভ্রমণ করেছেন এই পাহাড়পুর। আবারও নতুন করে পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার প্রাঙ্গণ।

এখানে সারা বছর দেশ-বিদেশ থেকে আগত দর্শনার্থীদের সমাগম ঘটে। আগের চেয়ে অনেক আধুনিকায়ন হওয়ায় পাহাড়পুরের পরিবেশ নিয়েও সন্তোষ প্রকাশ করেন দর্শনার্থীরা। সোমবার সরকারি ছুটির দিন পর্যন্ত দর্শনার্থীদের আগমন বেশি হয় বলে জানায় বিহার কর্তৃপক্ষ।

পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের কাস্টোডিয়ান ফজলুল করিম আরজু বলেন, ‘এবার পাহাড়পুরে দর্শক অনেক বেশি। আমরা সীমিত লোকজন নিয়ে আগত দর্শনার্থীদের মানসম্মত সেবা প্রদানের চেষ্টা করে আসছি। এত দর্শনাথী সামাল দিতে আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।’

টুরিস্ট পুলিশ নওগাঁ জোনের ইনচার্জ কিরন কুমার রায় বলেন, ‘আমি টুরিস্ট পুলিশ সদস্যদের নিয়ে পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারে আগত দর্শনার্থীদের সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা কাজে নিয়োজিত থেকে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি।’

পূর্বধলা (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি জানান, নেত্রকোনার পূর্বধলায় পবিত্র ঈদুল ফিতর ও বৈশাখী মেলাকে কেন্দ্র করে ঐতিহ্যবাহী রাজধলা বিলপাড়ে দর্শনার্থীদের ঢল নেমেছে। ঈদের পরে চৈত্রসংক্রান্তি মেলা, বৈশাখী মেলা, বর্ষবরণ অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে দর্শনার্থী সমাগম বৃদ্ধি পেতে থাকে। বিলে বিনোদনের পরিবেশ নেই, নেই পর্যাপ্ত বসার সুব্যবস্থা, শিশুদের জন্য নেই কোনো বিনোদনের উপকরণ। এর পরও একটু প্রশান্তির আশায় হাজার হাজার মানুষের ঢল নামে বিলপাড়ে। ছোট-বড় নানা শ্রেণি-পেশার দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখরিত ছিল রাজধলা বিল পাড়। এ যেন একজন আরেকজনের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করে নেওয়ার উপযুক্ত স্থান।

শুধু আশপাশের লোকজন নয়, একটু প্রশান্তির আশায় অনেক দূর-দূরান্ত থেকেও ছুটে এসেছেন অনেকে। কিন্তু অপার সম্ভাবনাময় এই রাজধলা বিলের পাশে একটি রাস্তা ও একটি ঘাটলা ছাড়া আর কিছুই না থাকায় অনেকেই হতাশ হয়েছেন। তবে এ বছর বিলের ঘাটের রাজধলা বিলের মাঝখানে গিয়ে বিল পরিদর্শনের জন্য স্থানীয় এক উদ্যোক্তা যোগ করেছেন স্পিডবোট। তাছাড়া ব্যক্তি উদ্যোগে, প্যাডেল চালিত নৌকা ও একটি ইঞ্জিন চালিত নৌকা রয়েছে। যেগুলোর মাধ্যমে আগত দর্শনাথীরা বিলের মাঝখানে গিয়ে বিলের সৌন্দর্য অবলোকন করতে পেরেছে।

আগত দর্শনার্থী আরিফ খান, শিরিন আক্তার জানান, ‘আমরা ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়িতে এসেছি ঈদ করতে। ঈদে বাড়তি বিনোদনের আশায় বিলপাড়ে ছুুটে এসেছি। এখানে এসে অনেকের সঙ্গে দেখা হচ্ছে, আড্ডা দিচ্ছি, খুব ভালো লাগছে।’

বাবার সঙ্গে ঘুরতে এসেছে রোবাইয়া, রাইসা, শাহরিয়ার। তারা জানায়, এখানে দোলনা, নাগরদোলাসহ আরও কিছু থাকলে আমরা চড়তে পারতাম এবং আনন্দ পেতাম।

অপর দর্শনার্থী আজিজুল হক খোকন বলেন, এখানে স্পিডবোটের ভাড়া জনপ্রতি ১০০ টাকা করে নিচ্ছে, যা অতিরিক্ত হয়ে যাচ্ছে। তাই তিনি ভাড়া কমানোর দাবি জানান।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার খবিরুল আহসান জানান, ঈদ ও বৈশাখী মেলাকে কেন্দ্র করে রাজধলা বিলপাড়ের দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে।

জাজিরা (শরীয়তপুর) প্রতিনিধি জানান, পবিত্র ঈদুল ফিতর এবং পহেলা বৈশাখ মিলিয়ে মোটামুটি লম্বা ছুটি কাটিয়ে অফিস খোলার দ্বিতীয় দিনেও পদ্মা সেতু হয়ে নির্বিঘেœ ঢাকায় ফিরছে দক্ষিণ বঙ্গের মানুষ। মঙ্গলবার সকাল থেকে পদ্মা সেতু দক্ষিণ টোল প্লাজায় থেমে থেমে গাড়ির চাপ লক্ষ করা গিয়েছে।

পদ্মা সেতু হয়ে দ্রæত পারাপারের অনুভ‚তি ব্যক্ত করতে গিয়ে ঢাকামুখী কয়েকজন পথচারী জানান, আগে ঈদযাত্রা মানেই পদ্মা নদী নামক ভোগান্তির কথা মনে করেই আঁতকে উঠতে হতো। দুই পাড়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করার পাশাপাশি যেকোনো সময় দুর্ঘটনার শঙ্কা নিয়ে চলাচল করতে হতো। তবে পদ্মা সেতু হওয়ায় এখন নির্বিঘেœ যাতায়াত করতে পারছেন তারা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মঙ্গলবার সকাল থেকে প্রাইভেটকারের পাশাপাশি বাসসহ অন্যান্য গণপরিবহণের চাপ কিছুটা কম দেখা গেলেও মোটর সাইকেলের চাপ ছিল ব্যাপক। কিছুক্ষণ পরপরই সেতু পার হতে টোল প্লাজার মুখে লম্বা সারিতে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে মোটর সাইকেল আরোহীদের।

পদ্মা সেতু দক্ষিণ টোল প্লাজা থেকে জানানো হয়, সোমবার পদ্মা সেতু দক্ষিণ টোল প্লাজায় গাড়ির ব্যাপক চাপ ছিল। তবে মঙ্গলবার গাড়ির চাপ কিছুটা থাকলেও সোমবারের তুলনায় অনেকটাই কম। গাড়ির চাপ থাকায় গত ২৪ ঘণ্টায় পদ্মা সেতুর দুই প্রান্ত মিলে ৩৫ হাজার ৫শ’ ১৩টি গাড়ি পারাপার করে টোল আদায় হয়েছে ৩ কোটি ৫৮ লক্ষ ৩৪ হাজার ৪শ’ ৫০ টাকা।

পদ্মা সেতু দক্ষিণ টোল প্লাজার ম্যানেজার মাহাবুবুর রহমান মিলন ২৪ ঘণ্টায় টোল আদায়ের পরিমাণ নিশ্চিত করে জানান, রোববার কিংবা সোমবারের তুলনায় গাড়ির চাপ মঙ্গলবার কিছুটা কম রয়েছে। তবে কিছুটা চাপ থাকলেও পথচারীরা কোনো প্রকার ঝামেলা বা ভোগান্তি ছাড়াই নির্বিঘেœ পারাপার হচ্ছেন পদ্মা সেতু।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে