শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১

জনজীবন অতিষ্ঠ, শ্রমজীবী মানুষের দুর্ভোগ চরমে

বাতাসে আগুনের হল্কা
গাংনী (মেহেরপুর) প্রতিনিধি
  ২২ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
জনজীবন অতিষ্ঠ, শ্রমজীবী মানুষের দুর্ভোগ চরমে

টানা ৫ দিন ধরে মেহেরপুরের গাংনীর ওপর দিয়ে বয়ে চলা তীব্র দাবদাহ আর বাতাসে আগুনের হল্কার কারণে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত গরমে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ শ্রমজীবী মানুষের। ইতোমধ্যে এলাকায় হিট অ্যালার্ট জারি করেছে আবহাওয়া অফিস। তৃষ্ণার্ত পথচারীরা তৃষ্ণা মেটাতে রাস্তার পাশে শরবত ও আখের রস পান করছেন। অনেকেই অস্বাস্থ্যকর পানীয় পান করে পেটের পীড়াসহ নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।

চুয়াডাঙ্গা আঞ্চলিক আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, গেল ৫ দিন ধরে চলছে বৈরী আবহাওয়া। আজ ২১ এপ্রিল রোববার দুপুর ১২টায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪০.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ ছাড়া ২০ এপ্রিল ৪২.৪ ডিগ্রি, ১৯ এপ্রিল ৪১.৫ ডিগ্রি, ১৮ এপ্রিল ৪০.৪ ডিগ্রি, ১৭ এপ্রিল ৪০.৮ ডিগ্রি ও ১৬ এপ্রিল ৪০.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। প্রচন্ড গরমের সঙ্গে চলছে গরম বাতাস। যা গেল বছরের তুলনায় বেশি। ইতোমধ্যে আবহাওয়া অধিদপ্তর এলাকায় হিট অ্যালার্ট জারি করে সাবধানে চলাচলের পরামর্শ দিয়েছেন।

গাংনীর বিভিন্ন বাজার ও রাস্তায় গিয়ে দেখা গেছে, বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এ রোদ যেন আগুনের ফুলকি হয়ে ঝরছে। বিশেষ করে দুপুরের পর আগুনঝরা রোদের তেজে বাইরে বের হওয়া মুশকিল হয়ে পড়ছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ চলাচল করছেন না। অনেকেই ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছেন। চলমান দাবদাহে সবচেয়ে কষ্টে পড়েছে খেটেখাওয়া দিনমজুর, রিকশা-ভ্যানচালক ও কৃষকরা। তীব্র রোদে মাঠে টিকতে পারছে না কৃষক ও দিনমজুররা। প্রচন্ড রোদে তৃষ্ণা মেটাতে পিপাসার্তরা রাস্তার ধারে বিক্রি করা নানা ধরনের শরবত কিনে পান করছেন। এতে দেখা দিচ্ছে নানা ধরনের রোগবালাই।

গাংনীর ভ্যানচালক বুলু জানান, খুব সকালে বাড়ি থেকে বের হয়েছেন। সকালে কয়েকটা খ্যাপ মারা হয়েছে। দুপুরে কোনো লোকজন না থাকায় ছায়ায় বসে আছেন। একই কথা জানালেন শিমুলতলার রবিউল ও কাশেম। তারা জানান, সারাদিন মাঠে ঘাটে কাজ করে রাতে একটু বিশ্রাম নেওয়ার উপায় নেই। ভ্যাপসা গরমে ঘুম হচ্ছে না। অপর ইজিবাইক চালক পিন্টু জানান, প্রচন্ড গরম আর বাতাসে মনে হচ্ছে আগুনের হল্কা। এতে দুপুরের আগেই সবাই চলাচল বন্ধ করে দেয়। যাত্রী না পেয়ে অলস সময় পার করতে হচ্ছে। ফুটপাতের ফল ব্যবসায়ী ফজল ও মকিম জানান, রোদে ও দাবদাহে যেমন ক্রেতা মিলছে না তেমনি গরমে ফল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

ভ্যাপসা গরমে নানা ধরনের রোগবালাই দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধরা বেশ স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছেন। স্বদি-কাশি, গলাব্যথা নিউমোনিয়া ডায়রিয়াসহ নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন অনেকে। প্রচন্ড ভিড় থাকায় রোগী দেখতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসকদের। গত ৪ দিনে ১৩ জন জ্বর ও ৩৫ জন ডাইরিয়া রোগে আক্রান্ত। এ ছাড়া আবহাওয়াজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে অনেকেই ভর্তি হচ্ছেন হাসপাতালে।

গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সুপ্রভারাণী জানান, অতিরিক্ত গরমের কারণে হাসপাতালে রোগীর চাপ একটু বেশি। সামলাতে বেগ পেতে হচ্ছে। তবে স্যালাইন ও ওষুধের সরবরাহ পর্যাপ্ত পরিমাণে আছে। এ ছাড়া সবাইকে বেশি পানি পান ও রোদে বাইরে বেশি চলাচল না করার জন্য পরামর্শ দেন তিনি।

চুয়াডাঙ্গা আঞ্চলিক আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান জানান, চুয়াডাঙ্গা দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায়। একই অবস্থা বিরাজ করছে মেহেরপুরে। বর্তমানে তীব্র দাবদাহ চলছে। আপাতত বৃষ্টিপাতের কোনো সম্ভাবনা নেই। তাপমাত্রা আরও বৃদ্ধির আশঙ্কা করা হচ্ছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে