শিগগিরই পূর্ণাঙ্গ সড়ক আইন সংসদে পাস করা হবে জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, নতুন আইনে চালক-সহকারী, পরবিহণ মালিক এবং ট্রান্সপোর্ট এজেন্সিসহ সংশ্লিষ্ট সবার দায়িত্ব বিশ্লেষণ করা হয়েছে। অর্থাৎ কে কোন দায়িত্বে থাকবেন এবং কোন ধরনের গাফিলতিতে কি ধরনের শাস্তি নির্ধারণ করা হয়েছে, সবকিছুই পরিষ্কার করা হয়েছে। আমরা চাই দুর্ঘটনায় আর যেন কেউ মৃতু্যবরণ না করে।
শনিবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচার) দ্বিবার্ষিক মহাসমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, 'বিআরটিএর তথ্যমতে প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনায় মৃতু্যবরণ করেন ১৪ জন। আমাদের তথ্যমতে, ২০২৩ সালে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৫ হাজার ৪৯৫টি। এসব দুর্ঘটনায় কম-বেশি ৫ হাজার ২৪ জন মানুষ নিহত হয়েছেন এবং আহতও হয়েছেন ঠিক সে রকমই একটি সংখ্যা।'
তিনি বলেন, 'প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনায় মানুষ আহত হচ্ছে, নিহত হচ্ছে। সড়কে খালি হচ্ছে হাজারও মায়ের কোল। এসব দুর্ঘটনার সমস্যা সমাধানে সমন্বিত পদক্ষেপ প্রয়োজন। দুর্ঘটনার কারণ চিহ্নিত করে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে বিভিন্ন সময় দাবি করে আসছে 'নিরাপদ সড়ক চাই'। এ বিষয়ে সরকার ২২ অক্টোবর নিরাপদ সড়ক দিবস ঘোষণা করে। যা দেশে গুরুত্ব সহকারে পালিত হচ্ছে।'
সড়ক দুর্ঘটনা কমিয়ে আনতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো একসঙ্গে কাজ করছে উলেস্নখ করে আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, 'একটা আধুনিক শহরে ২৫ শতাংশ সড়ক থাকতেই হয়। তাহলে তাকে আধুনিক শহর বলে। কিন্তু, আমাদের দেশে কোনো শহরেই ২৫ শতাংশ সড়ক নেই। প্রধানমন্ত্রী ২০০৮ সালে বলেছিলেন, আমরা ঢাকাকে যানজট মুক্ত করব। এবং তিনি মেট্রোরেল, এক্সপ্রেসওয়ে, ফ্লাইওভারের কথা বলেছিলেন। আজকে সেগুলো সবই দৃশ্যমান হয়েছে। এবং এর ফলে যানজট অনেকটাই কমে এসেছে। আমরা চাই এটাকে আরও কমাতে।'
সচেতনতার অভাবেই মূলত সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে দাবি করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, 'আমরা অনেকেই আইন জানি, কিন্তু মানি না। চালকদের প্রশিক্ষণের অভাব, আমরা দক্ষ চালকের হাতে স্টিয়ারিং রাখতে চাচ্ছি। ফিটনেসবিহীন গাড়ির দিকেও আমরা খেয়াল রাখছি। এ ছাড়া চলন্ত অবস্থায় চালকের মোবাইল ফোন ব্যবহারসহ বিবিধ কারণ রয়েছে।'
এর আগে বেপরোয়া মোটরযানের কবলে পড়ে দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের সাজার বিধান রেখে 'সড়ক পরিবহণ আইন-২০১৮' সংসদে পাস হয়। তখন নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে দুর্ঘটনায় প্রাণহানিতে চালকের সাজা দুই বছর বাড়িয়ে আইনটি প্রণয়নের উদ্যোগ নেয় সরকার। তবে আইনটি প্রণয়নের পর থেকে এর প্রবল বিরোধিতা করে আসছিল পরিবহণ মালিক-শ্রমিক সংগঠনগুলো। তাদের দাবি, সড়ক দুর্ঘটনায় মৃতু্যর ঘটনার মামলায় নতুন আইনে শাস্তির মাত্রা 'অযৌক্তিক' বেশি।
গত মার্চে বিভিন্ন ধরনের অপরাধের জন্য চালক ও তার সহকারীদের জেল-জরিমানার পরিমাণ কমিয়ে সড়ক পরিবহণ আইন সংশোধনে সায় দেয় সরকার।