সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে দুই গ্রম্নপের সংঘর্ষে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। এদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে দুই শিশুসহ বিদু্যৎস্পৃষ্টে ৩ জনের মৃতু্য হয়েছে। অপরদিকে চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদায় ধান রোপণ করার সময় সাপের কামড়ে এক কৃষকের মৃতু্য হয়েছে। এ ছাড়া স্কুলছাত্রসহ তিন জেলায় ৩ জনের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
শাহজাদপুর (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই গ্রম্নপের সংঘর্ষে সানোয়ার হোসেন (৩৫) নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় উভয় পক্ষের অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছে। মঙ্গলবার উপজেলার গালা ইউনিয়নের চরবর্ণিয়া গ্রামে এ সংঘর্ষের ঘটে। নিহত সানোয়ার হোসেন ওই গ্রামের খোদাবক্সের ছেলে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, চর বর্ণিয়া গ্রামের আখের গ্রম্নপ ও সায়েম গ্রম্নপের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দীর্ঘদিন বিরোধ চলে আসছিল। এ ঘটনার জের ধরে মঙ্গলবার সকালে উভয় গ্রম্নপের লোকজন লাঠিসোটা ও দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী দফায় দফায় এই সংঘর্ষ চলে। পরে শাহজাদপুর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। শাহজাদপুর থানার ওসি আসলাম হোসেন জানান, সংঘর্ষে সানোয়ার হোসেন নিহত হয়েছেন। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।
স্টাফ রিপোর্টার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিদু্যৎস্পৃষ্ট হয়ে দুই শিশুর মৃতু্য হয়েছে। রোববার উপজেলার মজলিশপুর ইউনিয়নের ছোট বাকাইল গ্রামে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
মৃত দুই শিশু হচ্ছে ছোট বাকাইল গ্রামের শামীম মিয়ার ছেলে নয়ন মিয়া (১০) এবং একই গ্রামের লিটন মিয়ার ছেলে নাঈম মিয়া (১০)।
ছোট বাকাইল গ্রামের বাসিন্দা ও মজলিশপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম জানান, ওই গ্রামের বাচ্চু মিয়ার ঘরের বিদু্যতের তার ঘষা খেয়ে ঘরের চালা ও বেড়া বিদু্যতায়িত হয়ে পড়লে পাশে ওই দুই শিশু খেলা করার সময় বেড়ায় লেগে তারা তড়িতাহত হয়ে মারা যায়।
এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানার ওসি আসলাম হোসেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, ওই দুই শিশু খেলা করার সময় বিদু্যতায়িত ঘরের বেড়ায় লেগে মারা গেছে। অভিযোগ পেলে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি জানান, দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে মাছ ধরতে গিয়ে আব্বাস আলী (৫৫) নামে এক কৃষকের মৃতু্য হয়েছে। রোববার দুপুর সাড়ে ১২টায় উপজেলার কাজিহাল ইউনিয়নের হযরতপুর গ্রামে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত আব্বাস আলী হযরতপুর গ্রামের মৃত বাবর আলীর ছেলে।
নিহতরে ছেলে ফেরদৌস রহমান বলেন, তার বাবা গ্রামের অন্যের পুকুরে পাহাদার হিসেবে কাজ করত। সেখানে মটর দিয়ে পানি সেচের সময় বিদু্যৎ স্পর্শ হয়ে গুরুতর আহত হয়। সেখান থেকে উদ্ধার করে ফুলবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে চিকিৎসার জন্য নিয়ে এলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করে।
এদিকে বিদু্যৎ স্পর্শ হয়ে মৃতু্য হলেও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাক্তার শামিমা পুলিশকে অবহিত না করেই মৃতদেহটি পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে। পুলিশ খবর পেয়ে মৃতদেহটি উদ্ধার করে সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে ও পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেন। এ বিষয়ে কথা বলার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাক্তার মশিউর রহমানকে বার বার চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
ফুলবাড়ী থানার ওসি মোস্তাফিজার রহমান বলেন, হাসপাতালের দায়িত্বহীন কর্মকান্ড বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্স কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। এ ছাড়া মৃতু্যর ঘটনায় ফুলবাড়ী থানায় একটি ইউডি মামলা দায়ের করেছে।
কাশিয়ানী (গোপালগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে গিয়ে লাশ হয়ে ফিরল নবম শ্রেণির স্কুলছাত্র আপন (১৪)। সোমাবার রাতে গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী উপজেলার সাজাইল ইউনিয়নের বাগঝাপা গ্রামে ঘটনাটি ঘটেছে।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা সদরের জিসি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র বাগঝাপা গ্রামের তুহিন শেখের ছেলে আপন শেখ (১৪) তার প্রতিবেশী বন্ধু কাওছার শেখের ছেলে সোহেল (১৫), ভাসান শেখের ছেলে হৃদয় শেখ (১৬), ইমরান মিয়ার ছেলে স্বাধীন (১৫), রহমান শিকদারের ছেলে খাইরুল শিকদারের (১৫) সঙ্গে রেললাইনে ঘুরতে যায়। রাত নয়টার দিকে আপনের বন্ধুরা খবর দেয় আপনকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। পরে স্থানীয়রা মাথায় মারাত্মকভাবে আঘাতের চিহ্নসহ রেললাইনের পানির ডোবা থেকে আপনের লাশ উদ্ধার করে।
কাশিয়ানী থানার ওসি জিলস্নুর রহমান আপন হত্যকান্ডের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, হত্যাকান্ডের রহস্য উদ্ধার করতে পুলিশ কাজ করছে। প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসার জন্য ওই চার বন্ধুকে আটক করে থানা আনা হয়েছে।
স্টাফ রিপোর্টার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া আরও জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে পাওনা টাকা চাওয়াকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের হামলায় শানু মিয়া (৬৫) নামে এক বৃদ্ধ নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার বিকাল ৪টায় উপজেলার পূর্বভাগ ইউনিয়নের পূর্বভাগ গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত শানু মিয়া পূর্বভাগ গ্রামের আলম মিয়ার ছেলে।
পুলিশ জানায়, উপজেলার পূর্বভাগ গ্রামের হাবিবুর রহমান ও আক্তার মিয়া দীর্ঘদিন সিলেট শহরের কদমতলী এলাকায় ভাঙারি ব্যবসা করতেন। আক্তার মিয়ার কাছে ৩ হাজার টাকা পেতেন হাবিবুর রহমান। মঙ্গলবার দুপুরে পাওনা টাকা চাইতে আক্তার মিয়ার বাড়িতে যায় হাবিবুর রহমান। তখন পাওনা টাকা নিয়ে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে আক্তারের বাড়ি-ঘর ভাঙচুর করে হাবিবুর রহমান ও তার লোকজন। বিকালে আক্তার মিয়ার চাচা শানু মিয়া এ ঘটনার বিচার চাইতে হাবিবুর রহমানের বাড়িতে গেলে হাবিবের লোকজন তাকে মারধর করে এক পর্যায়ে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দেয়।
পরে স্থানীয়রা শানু মিয়াকে উদ্ধার করে নাসিরনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ব্যাপারে নাসিরনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোহাগ রানা জানান, পাওনা টাকা চাওয়া নিয়ে দুই পক্ষের বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষের হামলায় শানু মিয়া মারা যান। খবর পেয়ে পুলিশ নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করে। এ ঘটনায় এখনো কোনো মামলা দায়ের করা হয়নি।
নকলা (শেরপুর) প্রতিনিধি জানান, শেরপুরের নকলায় বালির নিচ থেকে আব্দুল হালিম (৩৫) নামে এক কৃষকের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। বুধবার উপজেলার চন্দ্রকোনা ইউনিয়নের মৃগী নদীর পাড়ে এ ঘটনা ঘটে। নিহত আব্দুল হালিম ওই ইউনিয়নের বাছুর আলগার দড়িপাড়া গ্রামের চান মিয়ার ছেলে।
নকলা থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আবুল কাসেম বলেন, নকলার চন্দ্রকোনার মৃগী নদীর পাড়ের বালির নিচ থেকে আব্দুল হালিম নামে এক ব্যক্তির মরদেহ পাওয়া গেছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। পরবর্তী আইনি কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
দামুড়হুদা (চুয়াডাঙ্গা) প্রতিনিধি জানান, চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদায় ধান রোপণ করার সময় সাপের কামড়ে শহিদুল (৪৫) নামে এক কৃষকের মৃতু্য হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল ৮টায় উপজেলার পারকৃষ্ণপুর মদনা ইউনিয়নের কামারপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। মৃত শহিদুল ইসলাম ওই গ্রামের মুনছুর আলীর ছেলে।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, উপজেলার পারকৃষ্ণপুর মদনা ইউনিয়নের কামারপাড়া গ্রামের শহিদুল সকালে গ্রামের গাং মাঠের নিজ জমিতে ধান লাগনোর সময় বিষধর সাপ হাতে দংশন করে। তার সঙ্গে থাকা কৃষকরা দ্রম্নত সাপসহ তাকে উদ্ধার করে। শহিদুলকে দ্রম্নত মাঠ থেকে নিয়ে মোটর সাইকেল যোগে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসাপাতালে নেওয়া হয়। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বেলা ১১টায় তার মৃতু্য হয়।