ধানের জেলা হিসেবে নওগাঁ বিখ্যাত হলেও আম উৎপাদনে রয়েছে বেশ খ্যাতি। বর্তমানে জেলা জুড়ে আমের বাম্পার ফলন হয়েছে। প্রান্তিক আমচাষিরা গ্রাম থেকে ভ্যানে করে এনে বাজারে বিক্রি করছেন। তবে সাধারণ মানুষ যখন আম কিনছে তখন ৪০ কেজিতে ১ মণ। আবার সেই আমই ব্যবসায়ীরা বা আড়তদাররা যখন কিনছেন তখন ৫২ কেজিতে ১ মণ দিতে বাধ্য করা হচ্ছে প্রান্তিক আমচাষিদের। মণ প্রতি ১০-১২ কেজি বেশি দেওয়ার ফলে ঠকছেন আমচাষিরা।
সরেজমিন নওগাঁ জেলার বৃহত্তর আমের হাট সাপাহারে গিয়ে দেখা যায়, দূর-দূরান্ত থেকে প্রান্তিক আমচাষিরা সকাল থেকে ভ্যানযোগে বিভিন্ন জাতের আম আনছেন হাটে। প্রায় ১ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে শুরু হয়েছে আম্রপালি, নাক ফজলি, ল্যাংড়া ইত্যাদি আমের বেচাকেনা। যারা কিনছেন তারা বেশিরভাগ আড়তদার ও বড় ব্যবসায়ী। বিভিন্ন অজুহাতে আম চাষিদের কাছ থেকে ক্যারেটসহ ৫২ কেজিতে ১ মণ হারে আম কিনছেন আড়তদাররা। প্রতিবাদ করলে বা সঠিক ওজনের কথা বললে আম বাছাইয়ের কথা বলে এবং আম না কেনার হুমকি দিয়ে নানাভাবে ভোগান্তিতে ফেলা হচ্ছে আমচাষিদের। দরদাম ঠিক হওয়ার পরও করা হচ্ছে নানা ধরনের হয়রানি। প্রতিমণ আম ৫১-৫২ কেজিতে বিক্রি করতে বাধ্য করা হচ্ছে। আড়তদারদের বিরুদ্ধে এমনই অভিযোগ আমচাষিদের। এতে বাধ্য হয়েই আম বিক্রি করতে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন আমচাষিরা।
আমচাষি সামছুল ইসলাম বলেন, 'আমার আমের বাগান আছে প্রায় ৫ বিঘার মত। বাজারে ল্যাংড়া আম নিয়ে এসেছি। আমরা জানি ৪০ কেজিতে ১ মণ। কিন্তু এখানে বিক্রি করতে হচ্ছে ৫২ কেজিতে ১ মণ। আমরা যদিও এভাবে দিতে চাই না, কিন্তু তারা বাধ্য করে দিতে। কয়েক বছর আগে ৪৫ কেজিতে ১ মণ ধরা হতো। এখন ৫২ কেজিতে মণ। আবার আমরা যেগুলো আম আনি সেগুলো বাছাই করে ৫২ কেজিতে মণ হারে আমাদের কাছ থেকে কিনে নেয় ব্যবসায়ীরা ও আড়তদাররা। এটা আমাদের প্রতি অন্যায়। এর একটা সমাধান হওয়া জরুরি।'
উপজেলার বিন্নাকুড়ি গ্রামের ইউসুফ আলী বলেন- '৫২ কেজি আম দিলে তারা আম বাছাই করে না। কিন্তু যখন প্রতিবাদ করতে যাই তখন আমার আম কেউ কিনতে চায় না। বাধ্য হয়ে ৫২ কেজি আম দিতে হয় আড়তদারদের। বেশি দামাদামিও করা যায় না তাদের সঙ্গে। কারণ এখানে যত আড়তদার আছে সবাই এমন ৫২ কেজি মণ হিসেবে ছাড়া আম নিতে চায় না। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের অনেক বড় লোকসান হবে।'
আমচাষি আরিফ বলেন- আমার আমের বাগান আছে ৪ বিঘা। এখানে আম্রপালি জাতের আম বিক্রি করতে এসেছি। আড়তদারের কাছে বিক্রি করলাম ৫২ কেজিতে ১ মণ হিসেবে। জানি না কেন তারা আমাদের এভাবে ঠকাচ্ছে। আমচাষিরা তাদের কাছে জিম্মি হয়ে আছে।'
এ বিষয়ে সাপাহার আম আড়তদার সমিতির সভাপতি কার্ত্তিক সাহা বলেন- 'কৃষকরা আম ছোট-বড়, পঁচা-সরা সব এক জায়গায় এনে বলে ২ কেজি বেশি নেন তবুও আমার আমটা নেন। তারা সলিড আম আনবে, তখন ৪৮ কেজিতে মণ দেওয়া হয়। এই যে ৪৮ কেজিতে এই কথাটার সঙ্গে আমি দ্বিমত করি। কারণ ২টা পস্নাস্টিকের ক্যারেটে ৪ কেজি বাদ দিয়ে ৪৪ কেজিতে ১ মণ হিসেবে আম কেনা হয়। ডিসি সাহেবও বলেন ৪৮ কেজিতে মণ। কিন্তু ক্যারেটও আমাদের দিয়ে যায় না। ওরা নিয়ে চলে যায়। তাহলে ৪ কেজিটা কোথা থেকে আনব। সলিড আম যদি আমরা পাই তাহলে ৪৫ কেজিতে ১ মণ দরে আম কিনি। ভেতরে নিয়ে বাছাই করতে গেলে কৃষকরা বলছে এত বাছাই করিয়েন না দাদা ২ কেজি বেশি নেন।'