বৃহস্পতিবার, ০৮ মে ২০২৫, ২৪ বৈশাখ ১৪৩২

ডিমলায় জমি বিক্রির জাল চক্রের কাছে জিম্মি হাজারো কৃষক

স্টাফ রিপোর্টার, নীলফামারী
  ০৩ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
ডিমলায় জমি বিক্রির জাল চক্রের কাছে জিম্মি হাজারো কৃষক

দীর্ঘ ৩৯ বছর আগে মালিকের কাছে কিনে ভোগদখল করার পর ভুয়া মালিকানা সেজে পুনরায় এসব জমি বিক্রির পাঁয়তারা করছে একটি প্রতারক চক্র।

নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার ঝুনাগাছ চাপানি ইউনিয়নের ছাতুনামা মৌজার এসব জমি রাতের আঁধারে ভুয়া মালিক সেজে বিক্রি অভিযোগে নীলফামারী আমলী আদালতে মামলা হয়েছে।

অভিযোগ উঠেছে জমির মালিকরা জমি বিক্রি করলে নাতি, ভাগিনা, দূরসর্ম্পকের আত্মীর নামে ভুয়া ওয়ারিশন সনদ তৈরি করতে হাজার হাজার টাকা নিচ্ছেন ঝুনাগাছ চাপানি ইউপি চেয়ারম্যান একরামুল হক চৌধুরী। ভুয়া ওয়ারিশন সনদপত্র সূত্রে ইউপি তহশীলদার গোলাম রাব্বানী, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফারজানা বেগম দ্রম্নত সময়ে জমির খারিজ সম্পাদন করে দেন। জমির মালিকানা পেয়ে চক্রটির একটি গ্রম্নপ রংপুর গত ৩০ জুলাই আরডিআরএস অফিসে গিয়ে কমিশন করে ১১ দশমিক ৫ একর জমি ১ কোটি ৯ লাখ টাকা বিক্রি করেন।

সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, ১৯৮৫ সালের ৯ মার্চ দলিল নং-২৯৫৬, জমির পরিমাণ ৫ একর ১৩ দশমিক ২৫ শতক, ১৩ মার্চ দলিল নং-৩০৮৯, জমির পরিমাণ ৭ একর ১৯ শতক, ১৬ মার্চ দলিল নং-৩১৯২, জমির পরিমাণ ২ একর ৫৬ শতক, ১৮ মার্চ দলিল নং-৩৩০৯, জমির পরিমাণ ৩ একর ৪৩ দশমিক ২৫ শতক, ২৫ এপ্রিল দলিল নং-২৬৮৭, জমির পরিমাণ ৩ একর ৪৩ দশমিক ৩৩ শতক, মোট ৫টি দলিলে ২১ একর ৮৫ দশমি ৮৩ শতক জমি কেনেন হাসানুর রহমান। জমির মালিক দয়াল চন্দ্র রায় ও তার ৫ ছেলের কাছ থেকে ওই জমি কেনেন তিনি। দয়াল চন্দ্র রায় ও তার ৫ সন্তান ১৯৯০ সালে সব জমি বিক্রি করে ভারতে চলে যান।

গত বছরের (২০২৩) ৯ নভেম্বর ডিমলা সদর ইউপি নাগরিক দয়াল চন্দ্র পরিবারের কোনো সদস্য নেই মর্মে জগদীশ চন্দ্র ও ফনিভূষন রায় ভাগিনাদ্বয়কে উত্তরাধিকারী মর্মে ওয়ারিশান সনদপত্র দেন ঝুনাগাছ চাপানির চেয়ারম্যান একরামুল হক চৌধুরী। ভুয়া ওয়ারিশানের সূত্রে ইউনিয়ন তহশীলদার গোলাম রাব্বানী ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফারজানা বেগম তাদের নামে খারিজ খতিয়ান করে দেন। সরকারিভাবে সরেজমিন গিয়ে জমির মালিকানা যাচাইপূর্বক খারিজ করার নিয়ম থাকলেও মোটা অঙ্কের টাকায় গোপনে কাজ করেন। ভুয়া কাগজের সূত্রে গত ৩০ জুলাই রংপুর আরডিআরএস অফিসে কমিশন করে জগদীশ চন্দ্র ও ফণিভূষণ সেন ১ কোটি ৯ লাখ টাকায় ১১ দশমিক ৫ একর জমি জামালপুর জেলার ইসলামপুর উপজেলার মাহামদুলস্নাহ ও শেখ রুহুল আমিনের কাছে বিক্রি করেন। ভুয়া মালিকানা দিয়ে জমির বিক্রির অভিযোগে হাসানুর রহমান নীলফামারী আদালতে ২৯১/২৪ ডিমলা আদালতে মামলা করেন। মামলায় সাবরেজিস্ট্রার কেএম সুজা উদ্দিন, ইউপি চেয়ারম্যান একরামুল হক চৌধুরী, দলিল লেখক আব্দুল মান্নান, ভুয়া জমিদাতা ফণিভূষণ, জগদীস চন্দ্র, জমির ক্রেতা মাহামুদুলস্নাহ ও শেখ রুহুল আমিনসহ ১৪ জনকে আসামি করা হয়। আদালত মামলাটি সিআইডিকে তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন।

ইউপি চেয়ারম্যান একরামুল হক চৌধুরী বলেন, ফণিভূষণ ও জগদীশ চন্দ্র ওয়ারিশান সনদপত্রের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে দেওয়া হয়েছে।

ঝুনাগাছ চাপানি ইউনিয়েরে তহশীদার গোলাম রাব্বানী বলেন, খারিজের আবেদন করার পর সেটা নিষ্পতি হতে সময় লাগে ২৮ থেকে ৩০ দিন। কিন্তু জগদীশ ও ফণিভূষণের খারিজ কিভাবে ৭ দিনে সম্পাদন করা হয়েছে। ডিমলা সাবরেজিস্ট্রার সুজা উদ্দিন বলেন, সব কাগজপত্র দেখে সরকারি বিধি মোতাবেক জমির দলিল সম্পাদন করা হয়েছে।

সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফারজানা বেগম ছুটিতে থাকায় মন্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাসেল মিয়া বলেন, মালিকানা ও ভুয়া খারিজ প্রদান করলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে