অসময়ের বৃষ্টিতে মুড়িকাটা পেঁয়াজ আবাদ পিছিয়ে গেছে রাজবাড়ীতে। এতে করে লোকসানের আশঙ্কা করছেন কৃষক। এ পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রার এক-তৃতীয়াংশ আবাদ হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ। তাদের ধারণা, দেরিতে আবাদ হওয়ার কারণে বাজার অস্থিতিশীল হতে পারে।
রাজবাড়ী জেলায় পেঁয়াজ আবাদ বরাবরাই ভালো হয়। পেঁয়াজ উৎপাদনে এ জেলা দেশের মধ্যে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। মোট উৎপাদনের ১৪ শতাংশ পেঁয়াজ উৎপাদন হয় এ জেলায়। পেঁয়াজ চাষের আগে কৃষকরা মুড়িকাটা পেঁয়াজ আবাদ করেন। যার মাধ্যমে পেঁয়াজের সংকট যেমন দূর হয়, তেমনি অপেক্ষাকৃত কম দামে ভোক্তারা পেঁয়াজ কিনতে পারেন।
কৃষি বিভাগের সূত্রমতে, সাধারণত সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময় থেকে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে মুড়িকাটা পেঁয়াজ আবাদ করতে হয়। রোপণের তিন মাসের মধ্যে পেঁয়াজ তুলে বাজারে বিক্রি করা যায়। খরচ ও শ্রম কম হওয়ার পাশাপাশি দাম ভালো পাওয়া যায়। তাই অনেক কৃষক মুড়িকাটা পেঁয়াজ আবাদ করে থাকেন। কিন্তু এ বছর অসময়ে অতিবৃষ্টিতে অনেক ক্ষেতেই পানি জমে ছিল। কিছু জমি রোপণের উপযোগী ছিল না। যে কারণে কৃষকরা সময়মতো মুড়িকাটা পেঁয়াজ রোপণ করতে পারেননি। রাজবাড়ীতে মুড়িকাটা পেঁয়াজ আবাদের যে লক্ষ্যমাত্রা ছিল তার তিন ভাগের এক ভাগ আবাদ হয়েছে মাত্র। যদিও কৃষি বিভাগ বলছে, শেষ পর্যন্ত তাদের লক্ষ্য অর্জিত হবে।
সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, চষিরা এখনো পুরোদমে মুড়িকাটা পেঁয়াজ রোপণ শুরু করতে পারেননি। বৃষ্টির কারণে এখনো অধিকাংশ জমি নরম হয়ে আছে। অনেক জমিতে পানিও জমে আছে। যে কারণে পেঁয়াজ রোপণ করতে পারছেন না চাষিরা। তবে কিছু উঁচু জমিতে মুড়িকাটা পেঁয়াজ রোপণ শুরু করেছেন।
সদর উপজেলার উড়াকান্দা গ্রামের কৃষক রিয়াজুল ইসলাম প্রতি বছরই মুড়িকাটা পেঁয়াজ চাষ করেন। এবারও করছেন। তবে অনেকটা দেরিতে। জানালেন, এ বছর মুড়িকাটা পেঁয়াজ চাষে খরচ বেড়েছে। গত বছর পেঁয়াজ বীজ সাড়ে ৫ হাজার থেকে ৬ হাজার টাকা মণ কিনেছিলেন। এবার কিনতে হয়েছে ৮ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা মণ। প্রতি বিঘায় ১০ মণ বীজ রোপণ করা যায়। সার, চাষ, শ্রমিক খরচ পড়ে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। আর যারা জমি লিজ নিয়ে চাষ করবে তাদের খরচ আরও বেশি। আড়াই হাজার টাকা মণ পেঁয়াজ বিক্রি করলে টাকা উঠবে। আর তা না হলে লোকসান গুনতে হবে।
একই এলাকার কৃষক আবুল কাশেম জানান, অধিক বৃষ্টিপাতের কারণে আগাম মুড়িকাটা পেঁয়াজ আবাদ পিছিয়ে গেছে। এর উপর বীজ, সার সবকিছুর দাম বেড়েছে। দেরিতে পেঁয়াজ রোপণ করায় কাঙ্ক্ষিত ফলন পাবেন কিনা তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন।
রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা গোলাম রসূল জানান, সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবরের মাঝামাঝি পর্যন্ত মুড়িকাটা পেঁয়াজ রোপণের উপযুক্ত সময়। রোপণের ৯০ দিনের মধ্যে পরিণত হয়। এবার বৃষ্টির কারণে পিছিয়ে গেছে। মুড়িকাটা পেঁয়াজের পর নতুন করে পেঁয়াজ, পাট অথবা ভুট্টা চাষ করেন কৃষকরা। মুড়িকাটা পেঁয়াজ উঠে গেলে পরের ফসল আবাদে সমস্যা হবে না। তবে, মুড়িকাটা পেঁয়াজ আবাদ পিছিয়ে যাওয়ার কারণে বাজার একটু অস্থিতিশীল হতে পারে। এটি প্রাকৃতিক। রিকভার করার সুযোগ নেই। কৃষকরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এটা বলার সময় এখনও আসেনি।
রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. শহিদুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের মধ্যে তিনটি জেলায় পেঁয়াজ উৎপাদনে এগিয়ে। রাজবাড়ী তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। রাজবাড়ীতে এবার পরপর লেট বৃষ্টি হয়েছে। কৃষকরা উদ্যোগ নিয়েও মুড়িকাটা পেঁয়াজ বুনতে পারেননি। এরই মধ্যে অনেক কৃষক উদ্যোগ নিয়েছেন। এক মাস ২৫ দিন লেট হয়েছে বৃষ্টির কারণে। তাদের টার্গেট ছিল ৫ হাজার ৫৫০ হেক্টর মুড়ি কাটা পেঁয়াজ আবাদের। এর মধ্যে ১৭শ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে, যা তিন ভাগের এক ভাগ। কৃষক মাঠে নেমে গেছে। তাদের লক্ষ্য পূরণ হয়ে যাবে। এটা তেমন সমস্যা হবে না। কৃষকরা আগাম যে দামটা পেতেন সেটা হয়তো পাবেন না।