পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার চিকনিকান্দি ইউনিয়নে সাড়ে তিন কিলোমিটার একটি খাল পুনরুদ্ধার করে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন স্থানীয়রা। দীর্ঘদিন ধরে ময়লা-আবর্জনা, কচুরিপানা আর ঝোপ জঙ্গলে বদ্ধ খালটি পুনরুদ্ধারে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে ধর্ণা ধরেও কোনো ফল পাননি এলাকাবাসী। ফলে বাধ্য হয়ে নিজেরাই চার লাখ ৭০ হাজার টাকা খরচ করে খালটি পুনরুদ্ধার করেন। স্থানীয়দের এমন কাজকে স্বাগত জানিয়েছে পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসন।
জানা যায়, গত ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে চিকনিকান্দি ইউনয়নের পানখালী খালটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পরে ছিল। সংস্কার না করায় খালের ওপর তৈরি হয়েছিল ঝোপ জঙ্গল, যাতে বসবাস করত শিয়াল, গুই সাপসহ বিভিন্ন হিস্র প্রাণী।
প্রায়ই খাল পাড়ের মানুষের হাঁস-মুরগিসহ ছাগল ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটত। খালে পানি প্রবাহ না থাকায় সৃষ্টি হতো জলাবদ্ধতা। এমন পরিস্থিতিতে বিভিন্ন সময় সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে যোগাযোগ করেও ফল পাননি স্থানীয়রা। তাই স্থানীয়রা চাঁদা তুলে ও মনিরুল ইসলাম নামে এক মালয়েশিয়া প্রবাসীর সহযোগিতায় খালটি পুনরুদ্ধার কাজ শুরু হয়। গত এক মাসের কঠোর পরিশ্রমে খালের সাড়ে তিন কিলোমিটার এলাকায় এখন স্বচ্ছ পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
সম্প্রতি খাল পুনরুদ্ধার কাজ শেষ হওয়ায় আয়োজন করা হয় দোয়া ও মিলাদ অনুষ্ঠানের। যেখানে স্থানীয়রা প্রতিশ্রম্নতি দেন ভবিষ্যতে খাল দখল ও দূষণমুক্ত রাখতে সবাই সচেতন থাকবেন।
স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য মহিউদ্দিন খান বলেন, 'আমি এলাকায় প্রায় ৪২ বছর নেতৃত্ব দিয়েছি। পানখালী এবং মাঝগ্রামের মধ্যদিয়ে প্রায় সাড়ে তিন থেকে চার কিলোমিটার এই খালকচুরি পানায় এমন পরিস্থিতি হয়েছিল যে, আমরা পানির অনেক সমস্যায় ছিলাম। আমরা হাঁস-মুরগি, ছাগল, ভেড়া পালন করতে পারতাম না। এই খালের জঙ্গলে শিয়াল, খাটাস, গুইল বসবাস করত। তারা এসব প্রাণী নিয়ে যেত। আমরা নিজেদের প্রচেষ্টায় খাল পরিষ্কার করার চিন্তা করি। কিন্তু আর্থিক সামর্থ্য না থাকায় উদ্যোগ নিতে পারছিলাম না। এ সময় এলাকার প্রবাসী মনির হোসেন এগিয়ে আসেন এবং বড় ধরনের অর্থ সহায়তা করেন। যে কারণে আমাদের কাজ সফল করতে পারছি।'
এদিকে স্থানীয়দের উদ্যোগে এমন কাজকে স্বাগত জানিয়েছেন পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফীন। তিনি জানান, ভবিষ্যতে যাতে খালে কেউ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে না পারে সে বিষয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা থাকবে।
খালটি পুনরুদ্ধানের ফলে খালপাড়ের বাসিন্দারা এখন তাদের দৈনন্দিন কাজে ও কৃষি উৎপাদনে খালের পানি ব্যবহার করছেন। এর ফলে ভূগর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরশীলতা কমার পাশাপাশি এলাকার পরিবেশ ও প্রকৃতিরও উন্নতি হচ্ছে।