রোববার, ১১ মে ২০২৫, ২৮ বৈশাখ ১৪৩২

আয়বৃদ্ধিমূলক কর্মকান্ডে বদলে যাচ্ছে চরবাসীর জীবনমান

স্টাফ রিপোর্টার, নীলফামারী ও কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
  ১১ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
আয়বৃদ্ধিমূলক কর্মকান্ডে বদলে যাচ্ছে চরবাসীর জীবনমান
কুড়িগ্রামের চর এলাকায় উপকারভোগীদের কর্মসংস্থানের জন্য ভেড়া বিতরণ করা হয় -যাযাদি

ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তাসহ ছোট বড় ১৬টি নদ-নদী বেষ্টিত কুড়িগ্রাম জেলা। আর এসব নদীর বুকজুড়ে রয়েছে প্রায় সাড়ে ৪ শতাধিক চর। প্রতিবছর বন্যা ও নদী ভাঙনের কবলে পড়ে অসংখ্য পরিবার গৃহহীন হয়। নষ্ট হয় চরের মানুষের কৃষি ফসল। ফলে কৃষিনির্ভর পরিবারগুলো পড়ে যায় চরম সংকটে। এমন পরিস্থিতিতে বন্যা ও নদী ভাঙনের শিকার ৪২০টি পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে সরকার এবং একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ফ্রেন্ডশিপ, বাংলাদেশ। তারা দুর্যোগকালীন সময়ে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার পাশাপাশি পারিবারিকভাবে আয়বৃদ্ধিমূলক কর্মকান্ডে এগিয়ে এসেছে। আর তাদের সহযোগিতায় এসব পরিবার ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছে। সেই সঙ্গে পাল্টে যাচ্ছে তাদের জীবনমান।

সংস্থাটি এ বছর জেলার চিলমারী, রৌমারী ও সদর উপজেলায় ১৪টি চরের ৪২০টি দরিদ্র পরিবারকে বিভিন্নভাবে সহায়তা দিয়ে উন্নয়নমুখী হতে সহযোগিতা করছে। প্রশিক্ষণসহ পরিবারগুলোকে শীত ও গ্রীষ্ম মৌসুমে শাকসবজির বীজ দেওয়া ছাড়াও ভেড়া বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়াও পাশে দাঁড়ান তারা বিভিন্ন দুর্যোগে। বন্যাকালীন সময়েও যাতে সবজি উৎপাদন অব্যাহত থাকে সেজন্য কমিউনিটি ভিত্তিক সবজি চাষে উদ্বুদ্ধ করেছে সংস্থাটি। বস্তায় আদা চাষে উৎসাহিত করায় গ্রামের প্রত্যেক বাড়িতে বস্তায় আদা চাষ হচ্ছে। সবজি উৎপাদনে রাসায়নিক সারের পরিবর্তে ভার্মি কম্পোষ্ট উৎপাদন এবং ব্যবহারে সহায়তা প্রদান করছে। পরিবারগুলোর বন্ধন অটুট রাখার জন্য পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধ ও আইনগত বিষয় নিয়ে পরামর্শ ও সহযোগিতা করা হয়। গত শনিবার কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্র নদীর অববাহিকায় চর ভগবতিপুর গ্রামে সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, এই গ্রামের ৩০টি বন্যাকবলিত পরিবার পারিবারিক আয়বৃদ্ধিমূলক কর্মকান্ড ছাড়াও সামাজিক উন্নয়নমূলক কাজে যুক্ত হয়েছেন।

এই গ্রামের বাসিন্দা জরিনা বেগম জানান, 'ফ্রেন্ডশিপের ট্রানজিশনাল ফান্ড প্রকল্প থেকে আমাকে চার হাজার একশ' টাকা দিয়ে একটি ভেড়া দিয়েছে এবং সেটি থেকে ২টি বাচ্চা হয়েছে। এখন তার ৩টি ভেড়া, যার বাজার মূল্য সাতাইশ হাজার টাকা। একই গ্রামের ফেরদৌসি বেগম বলেন, আধুনিক পদ্ধতিতে শাকসবজি উৎপাদনের প্রশিক্ষণ পাওয়ার পর আমার বসতবাড়িতে সবজি উৎপাদন করে এ বছর বাইশ হাজার টাকার সবজি বিক্রি করেছি, যা আমার সাংসারিক ব্যয়ভার বহন করে কিছু টাকা সঞ্চয় করতে পারছি। স্বামীর একার আয়ের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে না।'

চর ভগবতিপুর গ্রামের সাজিরন বেগম বলেন, 'প্রকল্প থেকে কেঁচো সার তৈরির প্রশিক্ষণ পাওয়ার পর আমার বসতবাড়িতে কেঁচোসার উৎপাদন করছি এবং প্রতিমাসে দুই হাজার টাকার কেঁচো সার বিক্রি করছি।' সাদেকুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তিনি ফ্রেন্ডশিপের সহায়তায় ৩৫টি বস্তায় আদার চাষ করেছেন এবং প্রতি বস্তায় এক থেকে দেড় কেজি আধা পাবেন বলে তিনি আশাবাদী। এ গ্রামের আরও অনেকেই বস্তায় আদা চাষ, সবজি ও ভার্মিক ম্পোষ্ট উৎপাদন এবং ভেড়া পালন করে পরিবারের আয়বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছে।

এই গ্রামের এরশাদুল জানান, 'আমাদের সুশাসন সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। আমরা পারিবারিক নির্যাতন, বাল্যবিয়ে, তালাকপ্রাপ্ত, বহুবিবাহ, পারিবারিক দ্বন্দ্ব, সংবিধান, সংসদ সম্পর্কে জানতে পেরেছি। এখন কোনো আইনি পরামর্শ প্রযোজন হলে আমরা ফ্রেন্ডশিপের সহায়তা নেই এবং তারা আমাদের বিনামূল্যে আইনি পরামর্শ দেয়।'

'ফ্রেন্ডশিপ' এর ট্রান্সজিশনাল ফান্ড (এএসডি) প্রজেক্টের রিজিওনাল ম্যানেজার কৃষিবিদ আশরাফুল ইসলাম মলিস্নক জানান, 'ফ্রেন্ডশিপ লুক্সেমবার্গের সহায়তায় সদস্যদের আয় রোজগার নিয়মিতকরণের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সুশাসন এবং স্থানীয় অবকাঠামো উন্নয়নে কুড়িগ্রাম সদর, চিলমারী এবং রৌমারী উপজেলার মোট ১৪টি চরে এ বছর ৪২০ জন সদস্যকে প্রকল্প সহায়তা দিয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আব্দুলস্নাহ আল মামুন জানান, এ প্রকল্পের পাশাপাশি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কর্তৃক উপকারভোগীদের আগের মতো প্রশিক্ষণসহ অর্থনৈতিক উন্নয়নে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. হাবিবুর রহমান জানান, কুড়িগ্রাম সদর, চিলমারী এবং রৌমারী উপজেলায় ফ্রেন্ডশিপের ট্রানজিশনাল ফান্ড প্রকল্পের মাধ্যমে এ বছর ৪২০টি পরিবারকে ভেড়া দিয়েছে এবং প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। ফলে পরিবারগুলোর ভেড়া পালনের মাধ্যমে স্বল্প সময়ে অধিক আয়ের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। প্রত্যেকটি ভেড়াকে টিকা এবং কৃমিনাশক বিনামূল্যে দেওয়া হয়। চর এলাকা ভেড়া পালনের জন্য উপযুক্ত। তাই ভেড়া পালনের মাধ্যমে চরাঞ্চলের মানুষ স্বাবলম্বী হবে বলে তিনি আশাবাদী।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে