রোববার, ১১ মে ২০২৫, ২৮ বৈশাখ ১৪৩২

সোমেশ্বরীর বালুচরে কয়লা তুলে চলে যাদের সংসার

নির্মলেন্দু সরকার বাবুল, দুর্গাপুর (নেত্রকোনা)
  ১১ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
সোমেশ্বরীর বালুচরে কয়লা তুলে চলে যাদের সংসার
নেত্রকোনার দুর্গাপুরে সোমেশ্বর নদ থেকে কয়লা তুলছেন স্থানীয়রা -যাযাদি

দিনের আলো ফুটতেই শুরু হয় ওদের কর্মব্যস্ততা। কেউ কেউ ঠেলা জাল নিয়ে, আবার কেউবা বিশেষ এক ধরনের গোলাকৃতির চালুনি নিয়ে নেমে পড়েন নদীতে। দিনভর রোদে পুড়ে সন্ধ্যা অবধি ভাসমান কয়লা কুড়াতে নদীর পানি আর বালুচর খোঁড়াখুঁড়ি চলে। শেষ বেলায় ঠেলাজালে তুলে ধুয়ে আলাদা করেন তারা। আর এসব কয়লা বেচে পরিবারের সদস্যদের মুখে দু-বেলা আহারের জোগান দেন এসব মানুষ।

কয়লা উত্তোলন কাজে শুধু নারীরাই নন, শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সি কয়েক হাজার মানুষ নদী থেকে প্রতিদিন কয়লা তোলেন। এটি যুগ যুগ ধরে করে আসা তাদের এক ধরনের পেশা।

এ দৃশ্য দেখা মিলে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের সীমান্তঘেঁষা নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার সোমেশ্বরী নদীর বুকে। সরেজমিনে গেলে কথা হয় কয়লা উত্তোলনকারী বড়ইকান্দি গ্রামের হালিমা খাতুনের সঙ্গে। তিনি জানান, ভোরে খাবার খেয়ে নৌকা, জাল, বেলচা কোদাল নিয়ে কয়লা তুলতে নদীতে চলে আসেন। নদী থেকে কয়লা তোলার পর পরই পরিষ্কার করতে হয়। পরে প্রতি মণ ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি করেন স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছে। আবার ভালোভাবে পানিতে ধুয়ে পরিষ্কার ও শুকিয়ে বিক্রি করলে তখন আরও বেশি টাকায় বিক্রি করা যায়।

রহিমা খাতুন নামের আরেকজন বলেন, সারাদিন কয়লা তুলে একেকজন দিনে ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা পর্যন্ত আয় করতে পারেন। উত্তোলিত কয়লা নদীর চর থেকেই কিনে নেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। তিনি বলেন, পনেরো বছরের বেশি সময় ধরে কয়লা তুলে জীবিকা নির্বাহ করছেন। এই কয়লা তুলেই সংসারের খরচ জোগান। এক কথায় এর উপর ভরসা করেই বেঁচে রয়েছেন বলে জানান তিনি।

জাহাঙ্গীর আলম নামের আরেকজন বলেন, 'এলাকায় কোনো কাজ নেই। আমাদের জীবন জীবিকার একমাত্র ভরসা এই সোমেশ্বরী নদী। আগে বালুর ঘাট থাকতে বালুর কাজ করেছি। এখন কয়লা তুলি।'

টুকন সরকার নামের এক কয়লা ব্যবসায়ী বলেন, 'শ্রমিকরা সারাদিন নদীতে কয়লা তুলে নিয়ে এসে আমাদের কাছে বিক্রি করে। আমরা সবার কাছ থেকে কিনে জমিয়ে তারপর বিক্রি করি। সারাদিন রোদ-বৃষ্টিতে কষ্ট করে এই কয়লা তুলছে তারা। আর আমাদের কাছে বিক্রি করে সবাই সংসারের খরচ জোগান দিচ্ছে।'

সোমেশ্বরী নদী ঘেঁষা সদর ইউনিয়নের ইউপি সদস্য (প্যানেল চেয়ারম্যান) হাবিবুর রহমান বলেন, প্রায় ২০-২৫ বছর ধরে পাহাড়ি ঢালের পানিতে সোমেশ্বরী নদীতে ভেসে আসা গুড়া কয়লা তুলে সংসার চালাচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ। বর্তমানে বালুঘাট, সাদামাটি কোয়ারি বন্ধ থাকায় হাজার হাজার শ্রমিক আর্থিক সমস্যায় ভুগছেন। কিন্তু কয়লা তুলে অনেকেরই আর্থিক সমস্যা কিছুটা হলেও লাঘব হচ্ছে।

এই সোমেশ্বরী নদী যুগের পর যুগ ধরে মানুষের জীবিকার যোগান দিয়ে আসছে। কেবল কয়লা নয়। বালু, পাথরের মতো খনিজ সম্পদে ভরপুর এ নদ। তাছাড়াও পর্যটন শিল্পের অপার সম্ভাবনার এই উপজেলায় ঘুরতে আসা পর্যটকদের নৌকায় করে নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করে দীর্ঘদিন ধরেই উপার্জন করে আসছেন স্থানীয় অনেক মাঝি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে