বরগুনার আমতলী পৌর শহরের প্রাণ কেন্দ্রে অবস্থিত বাসুগী খালটি দখল ও দূষণে মৃত প্রায়। এক শ্রেণির প্রভাবশালীরা খালটির দুই পাড় দখল করে পাকা স্থাপনা নির্মাণ করায় খালটি ধীরে ধীরে সংকুচিত হয়ে আসছে। এ ছাড়া খালটিতে নতুনবাজারে অবস্থিত মাছবাজার এবং ফলমূলের পলিথিনসহ নানা ধরনের দূষিত বর্জ্য খালটিতে ফালানোর কারণে দূষিত হচ্ছে পানি এবং ময়লার স্তূপের কারণে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে পানি প্রবাহ। বাসুগী খালটি আমতলী পৌরসভার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত এটি পাঁচ ও সাত নম্বর ওয়ার্ডের সীমানা ভাগকারী খাল হিসেবে পরিচিত। প্রমত্তা পায়রা নদীর সঙ্গে যুক্ত শতবর্ষী এই খালটি। পায়রা নদীর মোহনা থেকে প্রবহমান হয়ে ৫শ' মিটার পূর্বে সামসুল হক গাজী বাড়ির সামনে থেকে খালটির দুটি শাখা প্রবহমান। একটি শাখা দক্ষিণমুখী হয়ে চলে গেছে বাসুগী, নয়াভাঙ্গুলী, মানিকঝুরি ও লোছা গ্রামের দিকে। আরেকটি শাখা পূর্বমুখী নতুন বাজার মাছবাজার হয়ে সংযুক্ত হয়েছে চাওড়া খালের সঙ্গে। খালটির আনুমানিক প্রস্থ ৪৫-৫০ মিটার। খালটি সামসুল হক গাজী বাড়ির সামনে অবস্থিত একটি লোহার সেতুর অংশ থেকে প্রায় সাড়ে ৩শ' মিটারজুরে আড়াই শতাধিক শতাংশ জায়গা দখল হয়েছে। সেতুসংলগ্ন খালের উত্তর পাড়ের অর্ধেক খাল দখল করে তলদেশ থেকে ইটের গাথুনি দিয়ে মোশারেফ হোসেন হাওলাদার, রুবেল হাওলাদার ও সজল তালুকদার, কশাই শাহজাহান, মহিবুলস্নাহ, আবু ছালেহ, শাহ আলম এবং সাইফুল ইসলামসহ অর্ধশতাধিক ব্যক্তি পাকাভবন নির্মাণ করে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ আবাসিক ভবন তৈরি করে বসবাস করছেন। সাইফুল ইসলাম নামে একজন বরফ কলও তৈরি করেছেন। এই খালের সঙ্গে আমতলী নতুন বাজার চৌরাস্তা মোরে মহাসড়কের তলদেশ দিয়ে পানি নিষ্কাশনের জন্য রয়েছে একটি কালভার্ট। প্রভাবশালীরা অবৈধভাবে কালভার্টটির মুখ দখল করে পূর্ব প্রান্তে মোশারেফ হাওলাদার, রাজ্জাক মৃধা, নান্নু হাওলাদার এবং পশ্চিম প্রান্তে নুরুল ইসলাম, গণি হাওলাদার, সগির হাওলাদার ও নুরুল ইসলামসহ অনেকেই অন্তত ৮-১০টি দোকান তুলে ভাড়া দিয়ে মাসে কয়েক হাজার টাকা আয় করছেন।
খালটির দক্ষিণ দিকের ও একই অবস্থা। আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সের পেছনের অংশ থেকে শুরু করে কামাল তালুকদারের বাসা পর্যন্ত খালের অর্ধেক দখল করে পূর্বপাড়ে হারুন হাওলাদার, সজীব প্যাদা এবং পশ্চিম পাড়ে কালাম মৃধা ও কালাম হাওলাদারসহ ২০-২৫ পরিবার দুইপাড়ে শতাধিক পাকা স্থাপনা, গোসলের ঘাটলা, গাছগেঁড়ে মাটি এবং ইটের ভাঙা অংশ ফেলে দেড়শ' শতাংশ জমি ভরাট করে দখল করেছে। খালটির দুই পাড়ে এভাবে দখল করায় এখন মৃত অবস্থায় পরিণত হয়েছে। এই অংশ দিয়ে বর্ষা মৌসুমে সব সময় বাসুগী, নয়াভাঙ্গুলী, মানিকঝুরি ও লোছাসহ ৪-৫টি বিলের পানি ওঠানামা করে। অবৈধভাবে এভাবে খাল দখল করায় এখন পানি প্রবাহ অনেকটা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বর্ষা মৌসুমে সঠিকভাবে পানি নামতে না পাড়ায় অধিকাংশ সময় উলিস্নখিত গ্রামগুলোয় জলাবদ্ধতা দেখা দেয়।
এ ছাড়া দুই পাড়ের দখলদার এবং মাছবাজার ও ফল পট্টির পলিথিনসহ নানা ধরনের বর্জ্য প্রতিদিন ফেলা হচ্ছে বাসুগী খালে। মাছ বাজারের পূর্ব পাশে রয়েছে একটি গণশৌচাগার। এই শৌচাগারের মলমূত্র পাইপের মাধ্যমে ছেড়ে দেওয়া হয় বাসুগী খালে ফলে প্রতিনিয়ত দূষিত হচ্ছে এই খালের পানি। এই খালের উত্তর পাড়ে মাছ এবং সবজি বিক্রেতাদের জন্য একটি টিনশেডের বাজার রয়েছে এই বাজারের ব্যবসায়ীরা প্রতিদিন পলিথিনসহ নানা ধরনের বর্জ্য বাসুগী খালে ফেলছেন।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যাচ্ছে, বাসুগী খালের মাছ বাজারের অংশ এবং চাওড়া খালের পানি নিষ্কাশনের একমাত্র কালভার্টের ওপর এবং হাসপাতালের পেছনসহ ১ কিলোমিটার জুড়ে খাল দখল করে শতাধিক পাকা স্থাপনা তৈরি করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বরফকল এবং আধাপাকা আবাসিক ভবনসহ একাধিক স্থাপনা তৈরি করায় বাসুগী খালটি এখন সংকুচিত হয়ে গেছে। প্রতিদিন পলিথিনসহ নানা ধরনের বর্জ্য খালে ফেলা হয়। এতে পলিথিন জমে তলদেশ ভরাট হয়ে এখন পানি প্রবাহ অনেকটা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। অন্যদিকে দূষিত বর্জ্য পানিতে মিশে প্রতিনিয়ত দূষিত হচ্ছে বাসুগী খালের পানি।
অভিযুক্ত দখলদারদের মধ্যে নুরুল ইসলাম বলেন, 'ব্যবসার জন্য আমাদের কোনো জায়গা না থাকায় সরকারি জমিতে ঘর তুলে ব্যবসা করছি। সরকার যদি না থাকতে দেয় তাহলে আমরা চলে যাব।' আরেক অভিযুক্ত বরফ কলের মালিক সাইফুল ইসলাম মোলস্না খাস জমিতে বরফ কল নির্মাণের কথা স্বীকার করে বলেন, 'জায়গা খালি থাকায় এবং মাছ ব্যবসায়ীদের কথা চিন্তা করে বরফ কল বসিয়েছি। সরকার না চাইলে বরফ কল অন্যত্র সরিয়ে নেব।'
বাসুগী গ্রামের কৃষক গফফার প্যাদা বলেন, বাসুগী খাল দখলের ফলে পানি প্রবাহ সঠিকভাবে না থাকায় বর্ষা মৌসুমে এই গ্রামে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। এতে অনেক সময় বাড়িঘরও তলিয়ে যায়। ফসল বিনষ্ট হয়। নয়াভাঙ্গুলী গ্রামের কৃষক শামীম চাপরাসী বলেন, বাসুগী খাল দখলের ফলে আউশ আমন সঠিকভাবে চাষ করা যায় না। পানি জমে থাকায় জলবদ্ধতায় ফসল পচে নষ্ট হয়ে যায়।
আমতলী উপজেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আজিজুর রহমান বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের খাসজমি শনাক্ত করে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদের ব্যবস্থা করা হবে।
আমতলী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তারেক হাসান বলেন, সরেজমিন তহশীলদার পাঠিয়ে তদন্ত করা হবে। অবৈধ দখলদারদের চিহ্নিত করে তাদের উচ্ছেদ করা হবে।