শনিবার, ১০ মে ২০২৫, ২৭ বৈশাখ ১৪৩২

দেড় যুগ হেঁটে পত্রিকা বিক্রি করা সোহরাফ পেলেন সাইকেল

কুয়াকাটা (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি
  ১২ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
দেড় যুগ হেঁটে পত্রিকা বিক্রি করা সোহরাফ পেলেন সাইকেল

সাদাসিধা, নম্র ভদ্র, মিষ্টভাষী ও সদা হাস্যজ্জল প্রকৃতির মানুষটির নাম সোহরাফ হোসেন। ১৮ বছর ধরে উপকূলবর্তী এলাকা পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার কুয়াকাটা, আলীপুর,মহিপুর এলাকায় হেঁটে পত্রিকা বিক্রি করে আসছেন তিনি। রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে সারা বছরই প্রতিদিন প্রায় ৫-৬শ' গ্রাহকের দরজায় হাজির হতে হয় সোহরাফ হোসেনকে। জীবন সংগ্রামে কিশোর বয়স থেকেই এই কঠিন পেশা বেছে নিয়ে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছেন তিনি। তবে ১৮ বছর পরে এই প্রথম উপজেলা প্রশাসন এর পক্ষ থেকে একটি বাইসাইকেল উপহার পেয়ে খুশিতে আত্মহারা পরিশ্রমী হকার সোহরাফ হোসেন।

জীবনের শুরুতে কিশোর বয়স থেকে হাতে খাতা-কলম না নিয়ে, হাতে তুলে নিলেন পত্রিকা। আর কাঁধে তুলে নিলেন পরিবারের দায়িত্ব। সাত বছর বয়স থেকে পত্রিকা বিক্রি করতে করতে বয়স এখন ২৫ এর কোঠায়। অর্থনৈতিক অসচ্ছলতা ও দারিদ্রতায় জর্জরিত সোহরাফের পরিবার। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি সোহরাফের পরিবারে রয়েছে বৃদ্ধ মা, স্ত্রী ও তিন সন্তান। জন্ম স্থান উপজেলার মুসলস্নীয়াবাদ গ্রামে হলেও থাকেন মহিপুর আবাসনে। বাবার রেখে যাওয়া সামান্য একটু জমি থাকলেও মামলা জটিলতার কারণে তাও ভোগ করতে পারছেন না তিনি। বহু বছর ধরে ভাড়া ঘড়ে বসবাস করলেও গত তিন বছর ধরে সরকারের দেওয়া উপহারের ঘড়ে পরিবার নিয়ে ভালো থাকলেও হকারী করে উপার্জন করা টাকায় নিজের সংসার চলছে কোন রকম টেনেটুনে। এত কষ্ট করে জীবন পরিচালনা করেও সোহরাফ হাসিমুখে বলেন, 'আলহামদুলিলস্নাহ আমি ভালো আছি এবং পরিবারের জন্য সবার কাছে দোয়া চাই।'

সোহরাফ হোসেনের বিষয় কথা হয় স্থানীয় সাংবাদিক কুয়াকাটা প্রেস ক্লাবের সভাপতি রুমান ইমতিয়াজ তুষারের সঙ্গে। তিনি বলেন, খুব অল্প বয়সেই পত্রিকা বিক্রির পেশায় নিজেকে নিয়োজিত করেন সোহরাফ, যা ১৮ বছর ধরে চলছে। অনেক কষ্ট করে প্রতিদিন হেঁটে পত্রিকা বিক্রি করতেন। তবে এখন আর হয়তো ওর তেমন একটা কষ্ট হবে না। কারণ এই সাইকেল ওর কষ্ট কিছুটা হলেও কমাবে।

ইউএনও রবিউল ইসলাম বলেন, 'কুয়াকাটার স্থানীয় সাংবাদিকদের ফেইসবুক পোস্টের মাধ্যমে প্রথমে বিষয়টি অবগতি হই। পত্রিকা বিক্রি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা কাজ এবং যেহেতু অনেক বড় একটা এয়িয়া নিয়ে সে কাজ করে, তাই তার কষ্টের বিষয়টা আমি উপলব্ধি করতে পারি।'

তিনি আরও বলেন, 'আমি ওই ফেইসবুক পোস্টেও কমেন্ট করেছিলাম যে তার কোন আপত্তি না থাকলে আমি তাকে সহযোগিতা করতে চাই। মূলত মানবিক কারণে তাকে সহযোগিতা করার ইচ্ছে হয় এবং পরবর্তীতে যেন সাইকেলে করে পত্রিকা বিক্রি পারে, এজন্য ব্যক্তিগতভাবে উপহারটি দেওয়া।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে