শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে সিন্ডিকেট

নীলফামারীতে আলুর বাজারে নৈরাজ্য বিপাকে ভোক্তারা

এসএ প্রিন্স, নীলফামারী
  ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
নীলফামারীতে কোল্ড স্টোরেজে রাখা আলু -যাযাদি

নীলফামারীর হিমাগারগুলোতে পর্যাপ্ত মজুত থাকার পরও চড়া মূল্যে বিক্রি হচ্ছে আলু। বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে অসাধু সিন্ডিকেট। ফলে হিমাগার থেকে বের করার পর হাত বদলালেই বেড়ে যাচ্ছে আলুর দাম। সিন্ডিকেটের কারসাজিতে উৎপাদক পর্যায়ে ২৮-৩০ টাকার আলু হাতবদলে ভোক্তার ব্যাগে উঠছে ৬০-৭০ টাকা দরে। ফলে 'লাভের মধু' খাচ্ছেন মধ্যস্বত্বভোগীরা।

অন্যদিকে আলুর দাম বৃদ্ধির জন্য খুচরা বিক্রেতারা দায়ী করছেন পাইকারদের। আর পাইকাররা দুষছেন হিমাগার সিন্ডিকেটকে। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, হাত বদলালেই বাড়ছে দাম। বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে সিন্ডিকেট। এ অবস্থায় আলুর দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে বাজার মনিটরিং জোরদার না হওয়ায় ক্ষোভ জানিয়েছেন ভোক্তারা।

কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের তথ্য মতে, হিমাগারে আলু সংরক্ষণের পরপরই শুরু হয় দাম বাড়ানোর খেলা। বর্তমানে জেলার ১১টি হিমাগারে মজুত আছে ২৫ হাজার ৩৮ মেট্রিক টন আলু। এর মধ্যে ২৩ হাজার মেট্রিক টন বীজ আলু দেখিয়ে অসাধু সিন্ডিকেটের চলছে কারসাজি। এরই অংশ হিসেবে অসাধু সিন্ডিকেট বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য উৎপাদনের শীর্ষ জেলা নীলফামারীর হিমাগারগুলো থেকে নিয়ন্ত্রিতভাবে বের করছে আলু। কৃষকের কাছ থেকে ২৮ টাকা দরে কেনা ও হিমাগারে সংরক্ষণে মধ্যস্বত্বভোগী ব্যবসায়ীদের খরচ পড়ে কেজি প্রতি ৩৮ টাকা। তারা কেজি প্রতি ১০ থেকে ১৫ টাকা বেশি মুনাফা নিয়ে হিমাগারের গেটেই বিক্রি করছেন ৪৮-৫১ টাকা দরে। এরপর ৫-১০ টাকা বৃদ্ধি করে পাইকারি ব্যবসায়ীরা কেজি প্রতি ৫৩-৬৩ টাকা দরে আলু বিক্রি করছেন খুচরা বিক্রেতাদের কাছে। আর খুচরা বিক্রেতারা ৭ টাকা মূল্য বাড়িয়ে বাজারে ভোক্তাদের কাছে বিক্রি করছে ৬০-৭০ টাকা দরে। হিমাগারের মূল ফটক থেকে ভোক্তা পর্যায় পর্যন্ত প্রতি কেজি আলুতে হাতিয়ে দিচ্ছে ২০-৩০ টাকা।

নীলফামারীর বড়বাজারে গিয়ে একজন ভোক্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত সপ্তাহে প্রতি কেজি আলুর দাম ছিল ৪৮-৫৫ টাকা। এ সপ্তাহে দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬০-৭০ টাকায়। তিনি বলেন, সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে যাচ্ছে আলুর দাম। যে আলু নীলফামারীর প্রতিটি বাড়িতে প্রধান খাবার হিসেবে ব্যবহার হয়। এই দাম বৃদ্ধিতে অবশ্যই সিন্ডিকেটের কারসাজি রয়েছে। তা না হলে কৃষিপ্রধান এই জেলায় আলুর দাম এত বৃদ্ধি হওয়ার কথা না।

শহরের সাহেব ঘুরে দেখা গেছে, সেখানেও আলু বিক্রি হচ্ছে ৬৫-৭০ টাকায়। সেখানকার ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিভিন্ন হিমাগার থেকে এসব আলু সংগ্রহ করে বিক্রি করা হচ্ছে। তবে হিমাগারগুলোতে সিন্ডিকেটের কারসাজি লক্ষ্য করা যায়। তারা বেশি লাভ ছাড়া আলু ছাড়তে চাচ্ছে না।

চাঁদের হাটের অঙ্কুর সিড হিমাগারের ম্যানেজার শফি হায়দার বলেন, এখানে এজেন্টের মাধ্যমে বীজ আলু রাখা হয়েছে। কিছু ব্যবসায়ীদেরও আলু রয়েছে। তবে আগাম আলু চাষের জন্য বেশিরভাগ আলু বের হয়ে গেছে। এখনো কিছু ব্যবসায়ীর আলু রয়েছে। এখানকার বীজের মান হিসেবে ৫২-৮০ টাকায়ও বিক্রি হতে দেখা গেছে।

শহরের উত্তরা বীজ হিমাগারের ম্যানেজার মোহাম্মদ খান বলেন, 'আমাদের হিমাগারে নীলফামারী ছাড়াও লালমনিহাট, রংপুর, দিনাজপুর, বগুড়াসহ বিভিন্ন জেলার কৃষকের আলু রাখা আছে। ধারণ ক্ষমতার চেয়ে অর্ধেক ইতোমধ্যে কৃষকরা নিয়ে গেছে। তবে ব্যবসায়ী আলু কী পরিমাণ আছে, সেটার সঠিক তথ্য নেই। আমাদের এখানে ৯৫ শতাংশ বীজ আলু মজুত থাকে।'

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ডা. এস. এম আবু বকর সাইফুল ইসলাম বলেন, গত বছর প্রায় ২২ হাজার হেক্টর জমিতে আলু উৎপাদন হয়েছে দেড় লাখ মেট্রিক টন। যার ৩৯ হাজার হাজার মেটিক টন আলু বীজের জন্য, ৭০-৭৫ হাজার আলু মানুষের খাওয়ার জন্য। আর উদ্ধৃত্ত আলু বাইরের জেলার চাহিদা মেটানোর জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

কৃষি বিপণন কর্মকর্তা উম্মে কুলসুম জানান, আলুর বাজার উর্ধ্বমুখীর কারণে হিমাগারের এজেন্টরাই দায়ী। তারা বিভিন্ন কৃষকের নামে আলু মজুত রাখছে ব্যবসায়ীদের। আমরা বিভিন্ন হিমাগারে গিয়ে কয়েকজন ব্যবসায়ী ও সিন্ডিকেটের জরিমানা করেছি। অভিযান অব্যাহত আছে। এ ছাড়াও নভেম্বরে বাজারে নতুন আলু আসবে। আর এই আলু আসলে বাজারে আলুর দাম কমে যাবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে