বিস্তীর্ণ মাঠের মধ্যে সারি সারি শতাধিক চায়না জাতের কমলার গাছ। থোকায় থোকায় ঝুলছে নানা আকারের কমলা রঙের কমলা। কমলাসহ গাছগুলো দেখতে যেমন চোখ জুড়িয়ে যাচ্ছে, তেমনি এ কমলার স্বাদও অনন্য।
চায়না জাতের এ কমলার চাষ হচ্ছে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার বোয়ালিয়া ইউনিয়নের মধুগাড়ী গ্রামের মধুগাড়ী মাঠে। বাগানের মালিক আবদুল হামিদ ইতোমধ্যে পাকা কমলা বিক্রয় শুরু করেছেন। এতে নিজের ভাগ্য বদলের স্বপ্ন দেখছেন তিনি। আব্দুল হামিদের কমলা বাগান দেখতে প্রতিদিন ভিড় করছেন বিভিন্ন এলাকা থেকে আশা দর্শনার্থীরা। ফলন ভালো দেখে অনেকেই চায়না কমলা চাষ করার উৎসাহ পাচ্ছেন। কৃষি বিভাগ বলছে, এসব ফলদ আবাদে আগ্রহী উদ্যোক্তাদের সব ধরনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। শুধু কমলা নয়, এই উপজেলায় চাষ হচ্ছে নানা প্রজাতির ফল।
উপজেলার কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, উপজেলায় ১ হাজার ৭৯২ হেক্টর জমিতে চাষ হচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির ফল। যার মধ্যে রয়েছে আম, জাম, লিচু, কাঁঠাল ও কলা। এছাড়া ৮ হেক্টর মাল্টা, ৫২ হেক্টর আতা, ১ হেক্টর কমলা, ৯৫ হেক্টর পেয়ারা, ৫৭ হেক্টর বরই, ২ হেক্টর করে ড্রাগন ও শরিফা ফলের চাষ হচ্ছে।
জানা গেছে, উদ্যোক্তা আবদুল হামিদ শুরু থেকেই কৃষি কাজের সঙ্গে জড়িত। চার বছর আগে (২০২০ সালে) ইউটিউবে কমলা চাষের উপর একটি ভিডিও দেখে উৎসাহী হয়ে উঠেন তিনি। পরে পার্শ্ববর্তী চুয়াডাঙ্গা জেলার একটি বাগান থেকে চারা সংগ্রহ করে উপজেলা কৃষি বিভাগের পরামর্শ নিয়ে তার এক বিঘা জমিতে ১১৫টি চায়না কমলার চারা রোপণ করেন।
আব্দুল হামিদ বলেন, ২০ হাজার টাকা খরচে তিনি বাগান শুরু করেন। এসময় বাগানের ভেতরে সাথি ফসল হিসেবে অন্য ফসলও আবাদ করে নিতেন। গেল বছর কিছু ফল ধরলেও এবার তার বাগানের ১০৮টি গাছে বিপুল পরিমাণে ফল হয়েছে। তবে প্রথমবার ফল বিক্রি করায় দামের বিষয়টি বুঝতে না পেরে তেমন একটা লাভ করতে পারেননি তিনি। এ বছর তার পুরো বাগান বিক্রি করেছেন মাত্র ১ লাখ টাকায়।
তিনি আরও বলেন, এবারের সব খরচ বাদে তার এই দামেও ৬০ হাজার টাকা লাভ হবে। তার বাগানের কমলা দেখে তার গ্রামের অনেকেই কমলা চাষে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
স্থানীয়রা জানান, আবদুল হামিদের সফলতা দেখে অনেকেই কমলা চাষে আগ্রহী হয়েছেন, এবার তারাও তাদের জমিতে চারা রোপণ করবেন। মমিন হোসেন নামের এক কৃষক জানান, আমিও এবার হামিদের দেখানো পথে চুয়াডাঙ্গা থেকে চারা সংগ্রহ করে আমার দুই বিঘা জমিতে চাষ শুরু করব। হামিদের কমলা বাগান দেখে আমার খুব ভালো লেগেছে। কমলাগুলো দেখতেও সুন্দর, স্বাদও চমৎকার।
আব্দুল হামিদের বাগান দেখতে আসা ইফতেখার হোসেন নামের একজন বলেন, মধুগাড়ি মাঠে সুন্দর চায়না কমলার বাগান হয়েছে শুনে দেখতে এসেছি বাগানে কমলা দেখে আমার খুব ভালো লেগেছে ভাবছি আমিও এমন একটা বাগান তৈরি করব।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ নুরুল ইসলাম বলেন, উপজেলায় প্রায় ৮ হেক্টর জমিতে মাল্টা ও ১ হেক্টর জমিতে কমলার চাষা হচ্ছে। এই উপজেলায় ছোট-বড় অনেক কমলার বাগান রয়েছে। তবে প্রসিদ্ধ বাগান রয়েছে কয়েকটি। এখানে আমাদের যে কমলা চাষ হচ্ছে সেগুলো দেখতে সুন্দর ও স্বাদেও অতুলনীয় এবং বাজারে এর প্রচুর চাহিদা রয়েছে। কমলার চাষ বাড়লে এখানকার কৃষকরা অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবেন।