শুক্রবার, ০২ মে ২০২৫, ১৯ বৈশাখ ১৪৩২
চড়া দামেও মিলছে না সার বিপাকে রবি ফসল আবাদ

গাংনীতে সার কেলেঙ্কারিতে ডিলার

মজনুর রহমান আকাশ, গাংনী (মেহেরপুর)
  ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
গাংনীতে সার কেলেঙ্কারিতে ডিলার
গাংনীতে সার কেলেঙ্কারিতে ডিলার

মেহেরপুরের গাংনীতে ডিলার ও সাব ডিলার পর্যায়ে সার সংকটের কথা বলা হলেও বেশি টাকা দিলেই পাওয়া যাচ্ছে সার। চাষিরা কাঙ্ক্ষিত পরিমাণে টিএসপি ও ডিএপি সার পাচ্ছেন না। সার সংকটের ক্ষেত্রে বিএডিসি ডিলারদের দায়ী করেছেন কৃষকরা।

সার উত্তোলন ও বিক্রির ক্ষেত্রে লাইসেন্সের শর্ত লঙ্ঘন করে কালোবাজারে বিক্রির মাধ্যমে কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন কৃষকরা। সার সংকটের বিষয়ে কৃষি অফিসারের ওপর দায় চাপিয়েছেন বিএডিসি। তবে সার সংকট নেই বলে জানিয়েছে কৃষি অফিস। এদিকে অবৈধ মজুত ও বেশি দামে সার বিক্রির অভিযোগে মেহেরপুর ও মুজিবনগরে অভিযান চললেও সাড়া নেই গাংনী উপজেলায়।

অনুসন্ধানে পাওয়া গেছে, বিচিত্র সব তথ্য। গাংনী উপজেলার নওপাড়া বাজারে সাজেদুর রহমানের মালিকানায় বিশ্বাস ট্রেডার্স নামে বিএডিসির লাইসেন্সধারী একটি প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা থাকলেও সেখানে নেই গুদাম এবং সার বিক্রির দোকান। গেল নভেম্বর মাসে এই প্রতিষ্ঠান বিএডিসি থেকে ১৬.২৫ মেট্রিক টন টিএসপি এবং ১৭.২৫ মেট্রিক টন এমওপি সার উত্তোলন করেছে। অথচ নওপাড়া গ্রামের কোনো চাষি তার কাছ থেকে সার পাননি বলে অভিযোগ রয়েছে। একই অভিযোগ রয়েছে গাড়াডোবের ওয়াহেদ ট্রেডার্সের। তার লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসা করছেন মেহেরপুরের জনৈক তোতা।

নওপাড়ার চাষি জামিরুলসহ কয়েকজন জানান, বিশ্বাস ট্রেডার্স বিগত ১০ বছরেও এখানে কোনো সার বিক্রি করেনি। স্থানীয় বাজারে দোকান দেখিয়ে লাইসেন্স নেয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে। এই ডিলার তার লাইসেন্স অন্যকে দিয়ে অন্য জায়গাতে ব্যবসা করান। বিনিময়ে একটা লাভ্যংশ পান তার কাছ থেকে। কৃষি অফিস কোনো পর্যবেক্ষণ করে না।

এদিকে চাষিদের অভিযোগের সত্যতা মিলেছে বিএডিসি ডিলার সাজেদুর রহমানের পিতা সৈয়দ আলীর কথায়। তিনি বিষয়টি স্বীকার করে জানান, লাইসেন্সটি অন্যের কাছে লিজ দেওয়া হয়েছে। সেখান থেকে কিছু কমিশন পান।

শুধু বিশ্বাস কিংবা ওয়াহেদ ট্রেসার্ড নয়, তার মতো জেলার বিএডিসি লাইসেন্সধারী অনেক প্রতিষ্ঠান কাগজ-কলমে সার উত্তোলন ও বিক্রির হিসাব দেখালেও বাস্তবে তাদের কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।

মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় বিএডিসি ডিলারের সংখ্যা মোট ১০০ জন। নভেম্বর মাসে এসব ডিলাররা বিএডিসি থেকে টিএসপি এক হাজার ৫৬৭ মেট্রিক টন এবং এক হাজার ৫১৭ মেট্রিক টন এমওপি সার উত্তোলন করেছেন। একই সঙ্গে আমদানিকারকদের কাছ থেকে বিসিআইসির ৩৫ জন ডিলার ডিএপি সার তুলেছেন এক হাজার ৭৩৫ মেট্রিক টন। চলতি ডিসেম্বর মাসে জেলার এক হাজার ১৮১ মেট্রিক টন টিএসপি, এক হাজার ৪৪২ মেট্রিক টন ডিএপি এবং এক হাজার ৫২৭ মেট্রিক টন এমওপি সার বরাদ্দ দেয় সরকার। বরাদ্দের এই সারগুলো ডিলারদের মাধ্যমে জেলায় আসতে শুরু করেছে। তবুও সার সংকট কমছে না।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, তালিকাভুক্ত ডিলাররা সার উত্তোলন করলেও চাষিরা পাচ্ছেন না কাঙ্ক্ষিত পরিমাণ সার। মাঠপর্যায়ে আলু, গম, শীতকালীন সবজি ও ভুট্টাসহ রবি ফসল আবাদের ভরা মৌসুমে সার সংকটে ভুগছেন কৃষকরা। এতে দেশের খাদ্যে জোগানের প্রধান মৌসুম রবিতে এবার ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। পূর্ব মালসাদহ গ্রামের হালিম ও সাহারবাটি গ্রামের হাসিবুল জানান, মাথার ঘাম পায়ে ফেলে দেশের মানুষের খাদ্য জোগান দিয়ে থাকেন কৃষকরা। সময়মত সারের জোগান দিতে না পারলে চাষিরা ক্ষতিগ্রস্তের পাশাপাশি দেশের সার্বিক খাদ্য উৎপাদনে বিরুপ প্রভাব পড়বে। তাই দ্রম্নত এর সমস্যা সমাধানের দাবি জানান তারা।

বিএডিসি কুষ্টিয়ার সহকারী পরিচালক মহিউদ্দীন মিয়া জানান, একজন ডিলার সার তুলে বিক্রির পর কৃষি অফিস থেকে প্রত্যয়ন নিয়ে আসেন। ডিলারের দোকান, গুদাম আছে কিনা এবং এবং সার সঠিকভাবে কৃষকদের কাছে বিক্রি করেছেন কিনা, এর প্রত্যয়ন দেয় কৃষি অফিস। এই প্রত্যয়নসাপেক্ষে তাদের পরবর্তী মাসের সার বরাদ্দ দেওয়া হয়।

এদিকে বেশি দামে সার বিক্রি ও অবৈধ গুদামজাত করায় মঙ্গলবার বিকালে সদর উপজেলার চাঁদপুরে ওবাইদুলস্নাহ নামের এক সার ব্যবসায়িকে এক লাখ টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী হাকিম গাজী মুয়ীদুর রহমান। একই দিন মুজিবনগর উপজেলার দারিয়াপুরে চড়া দামে সার বিক্রির অভিযোগে মেসার্স ফয়সাল ট্রেডার্সকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। তবে গাংনী উপজেলাতে কৃষি বিভাগের নিষ্ক্রিয়তার কারণে আজও কোনো মোবাইল কোর্ট অভিযান পরিচালনা করেনি।

গাংনী উপজেলা কৃষি অফিসার এমরান হোসেন জানান, গাংনীতে কোনো সার সংকট নেই। তবে চাষিরা কেন সার পাচ্ছে না বা কেন চড়া দামে সার কিনছেন, এই প্রশ্নের কোনো জবাব দেননি তিনি।

এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিজয় কৃষ্ণ হালদার।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে