দেশের উত্তরাঞ্চলের ভারত সীমান্ত ঘেঁষা জেলা কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলাটি শীত, খরা ও বর্ষা মৌসুমে নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রবণ এলাকা।
এরমধ্যে খরা মৌসুমে এখানে কাঠ ফাটা রোদ, ভ্যাপসা গরম ও বর্ষা মৌসুমে ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বন্যা প্রবণ এবং শীতকালে হিমালয় থেকে আসা হিম বাতাসে তীব্র ঠান্ডায় কাতর হয় এখানকার মানুষ।
এরমধ্যে বন্যার প্রভাবে এ উপজেলার ছয় ইউনিয়নের মধ্যে পাঁচটির মানুষ ক্ষতির সম্মুখীন হন বেশি। এখানে বর্ষা এলোই ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় লাখো মানুষের ঘরবাড়ি ফসলি জমি পানিতে নিমজ্জিত হয়।
বন্যাকবলিত ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রবণ ইউনিয়নগুলো হচ্ছে- নাওডাঙ্গা, শিমুলবাড়ী, ফুলবাড়ী, বড়ভিটা ও ভাঙ্গামোড় ইউনিয়ন। এ পাঁচ ইউনিয়নের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ধরলা নদী বর্ষাকালসহ জলবায়ু পরিবর্তনের কবলে পড়ে পানিতে ভরে গেলে বন্যার সৃষ্টি করে।
বন্যা নিয়ন্ত্রণে এখানে টেকসই বাঁধ না থাকায় প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে ধরলা নদী ঘেঁষা ২৮ কিলোমিটারের একটি মাত্র বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ বিভিন্ন সময় ভেঙে গিয়ে বন্যার পানিতে নতুন নতুন এলাকা পস্নাবিত হয়। ফলে প্রতিবছর বন্যা এখানকার হাজার হাজার মানুষ বন্যাকবলিত হয়।
উপজেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন অফিস সূত্র জানিয়েছে, নাওডাঙ্গা, শিমুলবাড়ী, ফুলবাড়ী, বড়ভিটা ও ভাঙ্গামোড় ইউনিয়ন ধরলা নদী বেষ্টিত প্রতিবছর বন্যায় এখানকার হাজার হাজার মানুষ বন্যাকবলিত হয়ে পড়ে। এসব মানুষের ঘরবাড়ি বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়।
ফুলবাড়ী উপজেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, প্রতিবছর ফুলবাড়ী উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের মধ্যে পাঁচ ইউনিয়নের মানুষ ক্ষতির সম্মুখীন হন বেশি। ৫ ইউনিয়ন নাওডাঙ্গা, শিমুলবাড়ী, ফুলবাড়ী, বড়ভিটা ও ভাঙ্গামোড়ে বন্যায় ২ হাজারেও বেশি হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
এরমধ্যে রোপা আমন, কলা, আখ ও সবজির ফসলের ক্ষতির পরিমাণ বেশি। এতে প্রায় ১০ হাজার কৃষক বন্যার ক্ষতির শিকার হয় বলে সূত্রটি জানিয়েছে।
স্থানীয় কৃষক ও সাধারণ মানুষের অভিমত- ফুলবাড়ী উপজেলার ৫ ইউনিয়ন নাওডাঙ্গা, শিমুলবাড়ী, ফুলবাড়ী, বড়ভিটা ও ভাঙ্গামোড়ের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত জনসাধারণের জন্য ২৮ কিলোমিটারের একটি মাত্র বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ টেকসই মজবুত নয়। প্রায় ৩৪ বছরের পুরনো এই বাঁধটি নিমর্াণের পর থেকেই প্রায় সংস্কার হচ্ছে না।
তবে কিছু স্থানে বাঁধের সংস্কার কাজ চলমান হলেও কাজের মান ভালো না থাকায় বন্যার পানির তোড়ে ভেঙে সংস্কার বাঁধগুলো ভেঙে যেতে পারে বলে এলাকাবাসী আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। স্থানীয়দের দাবি, ফুলবাড়ীতে বন্যা থেকে রক্ষা পেতে বন্যা নিয়ন্ত্রণে টেকসই বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ জরুরি। তা না হলে এখানকার মানুষ বন্যার আক্রমণ থেকে রক্ষা পাবে না।
স্থানীয় সচেতন বাসিন্দা নুর ইসলাম জানান, দীর্ঘদিন পর কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক শিমুলবাড়ী ইউনিয়নের ফুলবাড়ী সেতু পাড় থেকে ফুলবাড়ী ইউনিয়নের কিষামত প্রাণকৃষ্ণ ও বড়ভিটা ইউনিয়নের পশ্চিম ধনিরাম গেটের বাজার পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের সংস্কার কাজ চলছে। কিন্তু কাজগুলো নিম্নমানের হওয়ায় বন্যার পানির তোড়ে বাঁধের অংশ ভেঙে যেতে পারে।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রতিনিধি জানান, 'ফুলবাড়ীতে প্রায় ২৮ কিলোমিটারের মতো বন্য নিয়ন্ত্রণ বাঁধ রয়েছে। বাঁধের ৯ কিলোমিটার গুরুত্বপূর্ণ কিছু কিছু জায়গায় কাজের টেন্ডার হয়েছে। কাজের জন্য আমরা ঠিকাদার নামানোর চেষ্টা করছি। তবে ভূমি অধিগ্রহণের জটিলতায় পূর্ণাঙ্গভাবে কাজ করা যাচ্ছে না। আমরা জটিলতা নিরসনে চেষ্টা চালাচ্ছি।'