বৃহস্পতিবার, ০৮ মে ২০২৫, ২৪ বৈশাখ ১৪৩২

প্রকাশ্যে ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির বিভক্তি

কর্মিসভায় হামলার ঘটনায় পাল্টাপাল্টি বিক্ষোভ জেলা সভাপতির কুশপুত্তলিকা দাহ
তারেক মাহমুদ, ঝিনাইদহ
  ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
প্রকাশ্যে ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির বিভক্তি
প্রকাশ্যে ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির বিভক্তি

ঝিনাইদহে বিএনপির কর্মিসভায় প্রতিপক্ষ গ্রম্নপের হামলার ঘটনা ঘটেছে। হামলায় বিএনপির কমপক্ষে ১০ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। গত শুক্রবার বিকালে হরিণাকুন্ডু উপজেলার জোড়াদহ ইউনিয়নের লালন বাজারে অনুষ্ঠিত সভায় এ হামলা হয়। আহতদের মধ্যে মন্টু মন্ডল নামে একজনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। বাকিদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

ঝিনাইদহ-২ আসনের একাধিকবার নির্বাচিত সাবেক সংসদ সদস্য মরহুম মসিউর রহমানের জ্যৈষ্ঠ পুত্র কেন্দ্রীয় ড্যাব সদস্য চিকিৎসক ও জেলা বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ইব্রাহিম রহমান বাবুর জনসভায় এ হামলার ঘটনা ঘটে। হামলার স্বীকার ডা. ইব্রাহিম রহমান বাবু অভিযোগ করেন, 'আমাকে হত্যার উদ্দেশে পরিকল্পিতভাবে হরিণাকুন্ডু থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক তাইজাল হোসেন এবং জোড়াদহ ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি সাজেদুর রহমান রনির লোকজন হামলা করেছে। তাইজাল হোসেন ও সাজেদুর রহমান জেলা বিএনপির সভাপতি এমএ মজিদ সমর্থক।'

সমাবেশে হামলার কয়েকটি ভিডিও ফুটেজ সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, সমাবেশস্থলে হঠাৎ কিছু লোকজন চাইনিজ কুড়াল ও লাঠিসোটা নিয়ে সেখানকার চেয়ার টেবিল ভাঙচুর শুরু করে। সে সময় সমাবেশকারীরা মাইকে বার বার বলছিলেন- 'আপনারা এ ধরনের কাজ করবেন না, আমরা একই দল করি, আপনারা শান্ত হোন। আপনারা আমরা সবাই বিএনপি করি। আমাদের উপরে হামলা করবেন না।'

ঘটনার পর সন্ধ্যায় ডা. ইব্রাহীম রহমান বাবু সমর্থকরা ঝিনাইদহ শহরে একটি বিক্ষোভ মিছিল করে। মিছিলটি পোস্ট অফিসের সামনে এলে হামলার প্রতিবাদে জেলা বিএনপির সভাপতি এমএ মজিদের কুশপুত্তলিকায় আগুন দেওয়া হয়। এছাড়া জেলা বিএনপির সভাপতি এমএ মজিদের পদত্যাগ ও বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ করেন।

এরপর রাত ৭টায় জেলা বিএনপির সভাপতি এমএ মজিদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করে বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল। তারা বলেন, 'হরিণাকুন্ডুতে যারা বিএনপির নামে সমাবেশ করছিল তারা পতিত আওয়ামী লীগের দোসরদের আশ্রয়দাতা। জেলা বিএনপির সভাপতি এমএ মজিদ ও সাধারণ সম্পাদক জাহিদুজ্জামান মনার নেতৃত্ব বাদে কোনো ধরনের মিছিল মিটিং সমাবেশ করলে তাদের কঠোরভাবে প্রতিহত করা হবে।'

এ সময় জেলা যুবদলের সভাপতি আহসান হাবিব রনক, সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম পিন্টু, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি সৌমেনুজ্জামানসহ নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। পাল্টাপাল্টি বিক্ষোভ মিছিলে শহরে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। শহরজুড়ে পুলিশি নিরাপত্তা জোরদার করা হয়।

জেলা বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ইব্রাহিম রহমান বাবু ও জেলা বিএনপির সভাপতি এমএ মজিদ ঝিনাইদহ-২ আসন থেকে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী। দীর্ঘদিন ধরেই বিবদমান দুটি গ্রম্নপ আলাদা আলাদাভাবে দলীয় কর্মসূচি পালন করে আসছিল। শনিবার দুপুরেও জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে গণমিছিল করে। সর্বশেষ হামলা ও জখমের ঘটনার পর জেলা বিএনপির বিভক্তি প্রকাশ্যে এলো।

হরিণাকুন্ডু থানার ওসি এমএ রউফ খান জানান, এক পক্ষের কর্মিসভায় প্রতিপক্ষের হামলার ঘটনা ঘটেছে। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

উপজেলার স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তরিকুল ইসলাম বলেন, আহতদের একজনের শরীরে ধারালো অস্ত্রের আঘাত রয়েছে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকের কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

জেলা বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডাক্তার ইব্রাহীম রহমান বাবু বলেন, 'হরিনাকুন্ডুতে পরিকল্পিত ও ষড়যন্ত্রমূলকভাবে আমার কর্মিসভায় প্রতিপক্ষরা হামলা করেছে। এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।'

সমাবেশে জেলা ছাত্রদলের সভাপতি সৌমেনুজ্জামান বলেন, 'ঝিনাইদহ শহরে কিছু নব্য বিএনপি জাগ্রত হয়েছে। ৫ আগস্টের পর যারা বিএনপিতে এসেছে তাদের বেছে নিজ হাতে বিচার করব। তারেক রহমান বলেছেন ৫ তারিখের পরে কোনো আওয়ামী সন্ত্রাসী যেন দলে আসতে না পারে। আমি ওয়ার্নিং দিতে চাই আজকের পর থেকে এমএ মজিদ ও জাহিদুজ্জামান মনা ভাইয়ের নেতৃত্ব বাদে যদি বিএনপির কেউ একটা মিছিল মিটিং করতে চান তাহলে তার দাঁত ভাঙা জবাব দেওয়া হবে।' জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট এমএ মজিদ বলেন, 'হরিণাকুন্ডুতে কোনো বিএনপির সমাবেশ ছিল না। এটা আওয়ামী সমাবেশ ছিল। এছাড়া যেসব কর্মকান্ড ঘটানো হয়েছে তা দলীয় শিষ্টাচার বহির্ভূত। জেলায় শৃঙ্খলা বজায় থাকুক এটাই আমরা চাই।'

জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মনজুর মোরশেদ জানান, হরিণাকুন্ডুর ঘটনায় যদি কেউ অভিযোগ দেয় তাহলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে