রোববার, ১১ মে ২০২৫, ২৭ বৈশাখ ১৪৩২
শীতে বিপর্যস্ত নগরবাসী ফুটপাতের দোকানে ভিড়

চট্টগ্রামে নিম্ন আয়ের মানুষের ভরসা ফুটপাতের শীতবস্ত্র

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
  ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
চট্টগ্রামে নিম্ন আয়ের মানুষের ভরসা ফুটপাতের শীতবস্ত্র
চট্টগ্রামে নিম্ন আয়ের মানুষের ভরসা ফুটপাতের শীতবস্ত্র

বাংলার অগ্রহায়ণ মাস শেষে এখন পৌষ মাস। আর পৌষ মাসের শুরু থেকেই উত্তরের হিমেল হাওয়ায় ক্রমশই হ্রাস পাচ্ছে তাপমাত্রা। হাড়কাঁপানো শীতে বিপর্যস্ত জনজীবন। গত শনিবার সকাল থেকে চট্টগ্রামের আকাশ ছিল মেঘাচ্ছন্ন। বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত দেখায় দেয় গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি। প্রতিধিন সকাল থেকে সন্ধাব্যাপী কুয়াশার চাদরে ডাকা পড়ে চট্টগ্রামের মাঠ-ঘাট। সেই সঙ্গে বইছে উত্তরের হাড়কাঁপানো হিমেল হাওয়া। আর ধীরে ধীরে বাড়ছে শীতের তীব্রতা। শীত নিবারণে বেড়েছে গরম কাপড়ের চাহিদা। তাতে ফুটপাত থেকে শুরু করে সবখানে গরম কাপড়ের চাহিদা এখন তুঙ্গে।

তীব্র শীত থেকে বাঁচতে চট্টগ্রাম নগরীর ফুটপাতের শীতবস্ত্রের দোকানগুলোতে নিম্ন আয়ের ক্রেতাদের ভিড় দেখা গেছে। গরম কাপড় কিনে জেঁকে বসা শীত ঠেকানোর প্রস্তুতি চলছে নিম্ন আয়ের মানুষের। আর ফুটপাতের অস্থায়ী শীতবস্ত্রের দোকানগুলোতে বিক্রিও হচ্ছে বেশ।

চট্টগ্রাম নগরীর জহুর হকার্স মার্কেট, রিয়াজউদ্দিন বাজার, চকবাজার, আগ্রাবাদ, জিইসি মোড়, ষোলশহর ২ নম্বর গেট, আন্দরকিলস্না, লালদীঘি, নিউমার্কেট, তামাককুন্ডি লেইন, আসাদগঞ্জ, খাতুনগঞ্জ ও একে খানসহ বিভিন্ন এলাকার ফুটপাতের অস্থায়ী দোকানগুলোতে জমে উঠেছে শীতের পোশাক বিক্রি। আর এসব ভ্রাম্যমাণ ফুটপাতেই নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য সুলভ মূল্যে বাহারি শীতের পোশাক পাওয়া যায়। আর সেখানে পুরাতন ও নিম্নমানের সোয়েটার, কোট, বেস্নজার, মাফলার, গরম টুপি ও ছোট-বড়দের বিভিন্ন সাইজের শীতের পোশাকের আধিক্য বেশি। এসব দোকান থেকে কমদামে বিভিন্ন ধরনের কম্বলও কিনছেন ক্রেতারা।

চট্টগ্রামের নিউ মার্কেট, তামাককুন্ডি লেইন ও জহুর হকার মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, 'ফুটপাতের অস্থায়ী দোকানগুলোতে শীতের গরম কাপড় কিনতে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষ ভিড়। সোয়েটার, কোট, বেস্নজার, মাফলার, গরম টুপি ও ছোট-বড়দের বিভিন্ন সাইজের শীতের পোশাক দিয়ে সাজিয়ে রেখেছেন দোকানদার। এছাড়াও হুডি, মোটা কাপড়ের শার্ট, গরম কাপড়ের টিশার্ট, হাতমোজা, পা মোজাও বিক্রি হচ্ছে। কেউ আবার রাস্তার ধারে বিক্রি করছেন এসব পোশাক। হকাররা অনেকে 'চাই চাই ল বাঁচি বাঁচি ল, একদাম ২শ' এভাবে হাঁকডাক করে এসব কাপড় বিক্রি করছেন।

আর এসব ফুটপাতের দোকানগুলোতে বেস্নজার মানভেদে ৫০০ থেকে ৩০০০ টাকা, সোয়েটার মানভেদে ২০০ থেকে ৮০০ টাকা, ছেলেদের জ্যাকেট ৩০০ থেকে ১৫০০ টাকা, হুডি ২৫০ থেকে ৭০০ টাকা, মোটা কাপড়ের শার্ট ১৫০ থেকে ৬০০ টাকা, গরম কাপড়ের দুই হাতা টিশার্ট ২০০ থেকে ৭০০ টাকা, মাফলার ৪০ থেকে ২০০ টাকা, ছোটদের বিভিন্ন পোশাক ৫০ থেকে ৫০০ টাকা এবং গরম টুপি ৫০ থেকে ১৫০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন সাইজের বিভিন্ন ধরনের শীতের পোশাক বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ১৮০০ টাকা পর্যন্ত।

বিক্রেতারা বলেন, চট্টগ্রামে দুই সপ্তাহ ধরে শীত বেড়েছে। শীত যত বাড়বে ক্রেতাদের উপস্থিতিও তত বাড়বে। এখন দেদারসে শীতের নতুন ও পুরাতন কাপড় বিক্রি হচ্ছে। শিশুদের বিভিন্ন ধরনের পোশাক, বেস্নজার, কোট, জ্যাকেট, ট্তিশার্ট, সোয়েটার, ফুল হাতার গেঞ্জি, প্যান্ট, জিন্সের মোটা শার্ট, হুডি, মাফলার, কানটুপি, হাত ও পায়ের মোজার চাহিদা বেশি। তবে গত বছরের তুলনায় এবার দাম একটু বেশি।

চট্টগ্রাম কোর্টে মামলায় হাজিরা দিতে এসেছেন বাঁশখালীর সাহাব মিয়া। তিনি বলেন, 'নিজের জন্য ৯শ' টাকায় একটি বেস্নজার এবং বাচ্চাদের জন্য ৬২০ টাকা দিয়ে দুইটি গেঞ্জি ও তিনটি ফুল প্যান্ট কিনেছি। এখন কম দামে দুইটি কম্বল কিনব। আমরা মধ্যবিত্ত মানুষ। আমাদের জন্য ফুটপাতেই ভরসা।'

অটোরিকশা চালক ছমদ আলী বলেন, 'পুরোনো এসব শীতবস্ত্র আমাদের মতো গরীব মানুষের জন্য আশীর্বাদ। কম দামে এই শীতবস্ত্র না পাওয়া গেলে অনেক মানুষ শীতে মারা যাবে। শীত পড়ছে বেশি। বাচ্চারা শীতের কাপড় খুঁজছে। তাই ফুটপাতে আসা। এখন পর্যন্ত ২৭০ টাকা দিয়ে ৬টি শীতের কাপড় কিনেছি। আমার স্ত্রী হালিমা তার জমানো ৫০০ টাকা দিয়েছে। বাকী টাকা দিয়ে একটি পুরাতন শীতের কম্বল কিনব।'

জহর হকার মার্কেটের দোকানদার মো. আলী ইমাম বলেন, 'আমাদের এখানে বেশিরভাগ ক্রেতা নিম্ন ও মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষ। এখানে ৩০ টাকা থেকে ৩০০০ টাকার কাপড় রয়েছে। তবে গত বছরের তুলনায় এবার কাপড়ের দাম বেড়েছে। শীত যত বাড়ছে, বিক্রিও ততই বাড়ছে।'

আসাদগঞ্জের কাপড় ব্যবসায়ী আবদু রহিম বলেন, 'আমি এখানে ১৭ বছর ধরে কাপড়ের ব্যবসা করি। শীত পড়লে আমার এখানে অনেক দূর থেকে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষজন এসে কাপড় নিয়ে যান। আমি কম দামে ভালো জিনিস বিক্রি করি। এখানে ৫০ টাকা থেকে শুরু করে ৫০০ টাকার শীতের কাপড় রয়েছে।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে