শনিবার, ১০ মে ২০২৫, ২৭ বৈশাখ ১৪৩২
ঝুঁকিতে দুই বিদু্যৎ কেন্দ্র

আশুগঞ্জে মেঘনার তীর দখল করে অবৈধ জেটি নির্মাণ

স্টাফ রিপোর্টার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
  ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
আশুগঞ্জে মেঘনার তীর দখল করে অবৈধ জেটি নির্মাণ
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে মেঘনার তীরে পস্নাবন ভূমি দখল করে নির্মাণ করা অস্থায়ী ঘাট -যাযাদি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে মেঘনার তীর ইজারা নিয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তি কর্তৃক নদীর পস্নাবন ভূমি দখল করে অবৈধভাবে অস্থায়ী ঘাট নির্মাণ করার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘাটে কার্গোজাহাজ থেকে প্রতিদিন শতশত টন খাদ্যপণ্য ক্রেনের মাধ্যমে খালাস করা হচ্ছে। এতে করে ঝুঁকিতে পড়েছে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানী লিমিটেডের ৪০০ মেঘাওয়াট ও ২২৫ মেঘাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন দুইটি বিদু্যৎ কেন্দ্র। এ অবস্থায় ঝুঁকি বিবেচনা করে দ্রম্নত অবৈধ ঘাটটি অপসারণ করার জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে চিঠি দিয়েছে বিআইডবিস্নওটিএ ও আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানী লিমিটেড কর্তৃপক্ষ। তবে ইজারাদারের দাবি জনস্বার্থে ইজারা শর্তের মধ্যেই তিনি ঘাটটি স্থাপন করেছেন।

বিআইডবিস্নটিএ, আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানী লিমিটেড কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্টরা জানান, ইজারার নাম করে আশুগঞ্জ উপজেলার সোনারামপুর প্রান্তে মেঘনার পস্নাবন ভূমি ও তীর দখল করে অবৈধভাবে নির্মাণ করা হয়েছে জেটি ঘাট। উপজেলা বয়লার মালিক সমিতির সভাপতি শাহজাহান সিরাজ ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরের জন্য মেঘনার তীর ইজারা নিয়ে ঘাটটি তৈরি করেছেন। এই ঘাটটি নির্মাণের ফলে প্রতিদিন শতশত ট্রাক ভারি মালামাল নিয়ে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানী লিমিটেডের ৪০০ মেঘাওয়াট পাওয়ার পস্ন্যান্ট এবং ২২৫ মেঘাওয়াট পাওয়ার পস্ন্যান্টের পাশ দিয়ে যাচ্ছে। এতে করে সড়কের নিচে থাকা পাওয়ার পস্ন্যান্টের কোলিং ওয়াটার পাইপ, 'র'-ওয়াটার পাইপ, ফায়ার সার্ভিস ওয়াটার পাইপ, খাবার পানির পাইপলাইন ঝুঁকিতে পড়েছে। পাশাপাশি বালি দিয়ে তৈরি সড়কটির ধূলাবালির কারণে পস্ন্যান্টের এয়ার ফিল্টার জ্যাম হয়ে যে কোনো সময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে পাওয়ার পস্ন্যান্টের বিদু্যৎ উৎপাদন। ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে পাওয়ার পস্ন্যান্টের মূল্যবান যন্ত্রপাতি। এ অবস্থায় রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ বিদু্যৎকেন্দ্র রক্ষার স্বার্থে চলতি মাসের ১ ডিসেম্বর আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানী লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ আব্দুল মজিদ এক চিঠির মাধ্যমে বিষয়টি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসককে জানান। পাশাপাশি ঘাটটি অন্যত্র স্থানান্তরের জন্যে অনুরোধ জানিয়েছেন।

এদিকে রুবেল মিয়া নামে স্থানীয় এক ব্যবসায়ী জানান, স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছে ঘাটটির গুরত্ব রয়েছে। ধান-চালসহ বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী নদীপথে আমদানী করা হলে নদীর তীরে পণ্য রাখার জায়গা পাওয়া যায় না। এ ছাড়া পরিবহণের মাধ্যমে এলাকাবাসীর কর্ম সংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। ঘাটটি অপসারণ করা হলে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বিপাকে পড়বেন।

ইজারাদার শাহজাহান সিরাজ জানান, 'জনস্বার্থে ইজারা বিধি মেনেই ঘাটটি নির্মাণ করা হয়েছে। নির্মাণের পর থেকে ভৈরব আশুগঞ্জ নৌ-বন্দরের বিআইডবিস্নওটিএ কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিন তার কাছে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে আসছেন। চাঁদা না পেয়ে তিনি এসব করছেন।' শাহজাহান সিরাজ আরও বলেন, 'সরকার না চাইলে আমি ঘাটটি সরিয়ে নেব। সেই সঙ্গে ক্ষতিপূরণ দাবি করব। কারণ অর্থের বিনিময়ে আমি ঘাটটি ইজারা নিয়েছি। অন্যথায় আইনের আশ্রয় নেব।'

এ দিকে মেঘনার তীর এবং পস্নাবন ভূমি দখল কওে একাধিক স্থানে ঘাট নির্মাণ করায়, বিআইডবিস্নওটিএর ইজারাবিধি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন নদী ও প্রকৃতি সুরক্ষা সামাজিক আন্দোলন 'তরী' বাংলাদেশের আহবায়ক শামীম আহমেদ। তিনি জানান, বিষয়টি তিনি জেলা নদী রক্ষা কমিটির বৈঠকে উত্থাপন করবেন।

অন্যদিকে আশুগঞ্জ-ভৈরব নদী বন্দর উপ-পরিচালক, (বন্দর ও পরিবহণ কর্মকর্তা) মহিউদ্দিন খাঁন জানান, 'নদীর তীর আমরা ইজারা দিয়েছি। ঘাট তৈরির অনুমোদন দেওয়া হয়নি। ইজারার শর্ত ভঙ্গকরায় ঘাটটি অপসারণ করতে জেলা প্রশাসক, আশুগঞ্জ থানা এবং ইজারাদারসহ সংশ্লিষ্টদের চিঠি দেওয়া হয়েছে।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দিদারুল আলম জানান, দ্রম্নত ঘাটটি অবৈধ স্থাপনা হিসেবে চিহ্নিত করে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার জন্য উপজেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে