সোমবার, ১২ মে ২০২৫, ২৯ বৈশাখ ১৪৩২

কমলা মাল্টা বেদানা চাষে কৃষকের সফলতা

স্বদেশ ডেস্ক
  ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
কমলা মাল্টা বেদানা চাষে কৃষকের সফলতা
কমলা মাল্টা বেদানা চাষে কৃষকের সফলতা

রাঙামাটির নানিয়রচওে মিষ্টি কমলা এবং রাজশাহীল চারঘাটে মাল্টা ও বেদানা চাষ কওে সফলতার মুখ দেখেছেন কৃষকরা। এতে তাদের আর্থিক সচ্ছলতা ফিরেছে। এক্ি‌ সঙ্গে কর্মসংস্থানেরও সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যে বিস্তারিত ডেস্ক রিপোর্ট-

নানিয়ারচর (রাঙামাটি) প্রতিনিধি জানান, বিদেশের মতই পার্বত্য এলাকার রাঙামাটি নানিয়ারচরে গাছে গাছে হলুদ রঙের কমলা ঝুলছে। পাহাড়ের কোল ঘেসে সমতল ভূমিতে গড়ে উঠেছে মিষ্টি কমলাবাগান। সম্প্রতি রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলার সাবেক্ষন ইউনিয়নের ১৭ মাইলে গিয়ে এমন দৃশ্য দেখা গেল। আকারে বড়, রসাল আর মিষ্টি স্বাদের কমলার ফলন হচ্ছে পাহাড়ের বেশ কিছু স্থানে।

কৃষিবিদরা বলছেন, কমলার জন্য বিশেষ উপযোগী আবহাওয়া ও মাটির মান খুব গুরুত্বপূর্ণ। এর ওপর নির্ভর করে ফলের মিষ্টত্ব, আকার ও ফলন। পার্বত্য চট্টগ্রামের বেশ কিছু স্থানে কমলা চাষ হচ্ছে। তবে সব এলাকার কমলা মিষ্টি ও আকারে বড় হয় না।

তাদের মতে, উপজেলার সাবেক্ষ্যং ও বুড়িঘাট ইউনিয়নের শৈলেশ্বরী, গবছড়ি, যাদুখাছড়া ও নব কার্বারিপাড়ায় ভালো কমলার ফলন হচ্ছে। উপজেলাটির কয়েকটি গ্রামে মিষ্টি কমলা চাষ করছে। বিদেশী ফল হওয়া সত্বেও এদেশের পাহাড়ের মাটিতে ফলটির খুব ভালো আকার ধারন করেছে।

নানিয়ারচরের সাবেক্ষন ইউনিয়নের ১৭ মাইল এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, কমলাবাগানটি সমতল ভূমিতে করা হয়েছে। পরিবেশ ও আবহাওয়া বেশ ঠান্ডা। এমন আবহাওয়াই কমলা চাষের উপযোগী।

কমলা চাষি সুদত্ত চাকমা বললেন, তার বাগানে এ বছর ভালো ফলন হয়েছে। চলতি মৌসুমে পুরো কমলাবাগানটি তিনি ৪ লাখ টাকায় বিক্রি করে দিয়েছেন। বাগান থেকেই কমলা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন ক্রেতারা। বাগানটিতে এক হাজারের উপরে গাছ রয়েছে। এবারের বন্যায় কিছুটা ক্ষতি হলেও বেশ লাভবান তিনি।

নানিয়ারচরে কমলা চাষ করে সফলতার মুখ দেখেছেন অনেকেই। অনেকেই জাম্বুরা, কলা, আম ও কাঁঠাল চাষ ছেড়ে কমলা চাষে বিনিয়োগ করছেন। তাদের ভাষ্য, কীটনাশক ও রাসায়নিক সার ব্যবহার না করেই তারা কমলা চাষ করছেন। সে জন্য নানিয়ারচরের কমলার কদরও বেশি। আকারে বড় হওয়ায় দামও পাচ্ছেন বেশ। নভেম্বর মাসের শুরুতে কমলা পাকা শুরু হয়। ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত গাছে কমলা থাকে।

রাঙামাটি নানিয়ারচর কৃষি কর্মকর্তা তপু আহমেদ জানান, উপজেলায় চলতি মৌসুমে কমলা ১২৫ হেক্টর জমিতে ফলন করা হয়েছে। প্রতি হেক্টরে ৮ মে. টন ফলনের ধারনা করা হচ্ছে, সে হিসাবে ১০০০ মে. টন ফলন হতে পারে।

চারঘাট (রাজশাহী) প্রতিনিধি জানান, কঠোর পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে অনেক তরুণ নিজেদের সফল উদ্যক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন। এমনই এক তরুণ রাজশাহী জেলার চারঘাট উপজেলার শলুয়া ইউনিয়নের ফতেপুর গ্রামের হানিফ মন্ডল। মাত্র কয়েক বছরে হয়ে ওঠেন উপজেলার সবচেয়ে বড় কৃষি উদ্যোক্তা। মাল্টা, কমলা, বেদেনা চাষের পাশাপাশি বিভিন্ন জাতের আম চাষেও হয়েছেন সফল। গড়ে তুলেছেন হানিফ মন্ডল এগ্রো ফার্ম এন্ড নার্সারী। সফল উদ্যোক্তা হওয়ায় সরকারের সর্বোস্তরের কর্মকর্তা, তরুণ উদ্যোক্তাসহ সাধারণ মানুষের ভিড় জমে হানিফের মাল্টা বাগানে।

উদ্যোক্তা হানিফের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রায় ৩৫ বছর ধরে তার বাবা আবুল কাশেম মানুষের কৃষি জমি লীজ নিয়ে রাজশাহী জেলার কয়েকটি উপজেলায় পেয়ারার চাষ করতেন। কলেজ ছাত্র অবস্থায় বাবার পেয়ারা বাগানে বেড়াতে যেতেন তিনি। এভাবেই বৃক্ষের প্রেমে পড়েন। আগ্রহী হয়ে পড়ালেখা শেষ করে চাকরির পেছনে না ছুটে উদ্যোক্তা হানিফ তৈরি করেন এগ্রোফার্ম ও নার্সারী। এ নামকরনে ২০১৮ সালে উপজেলার শলুয়া ইউনিয়নের ফতেপুরে স্বল্প পরিসরে শুরু করেন মাল্টা ও কমলার চাষ। শুরুতে সাথি ফসল হিসেবে পেয়ার চাষ করেও সাফল্য পেয়েছেন। পরে পেয়ারা চাষ না করে বর্তমানে মাল্টা, কমলার পাশাপাশি বাগানে ৬৩ প্রজাতির আম, কদবেল, আপেল, স্ট্রবেরি, আমড়া, ডালিম ফলের চাষ করছেন তিনি।

কৃষিভিত্তিক কোনো শিক্ষা না থাকলেও অভিজ্ঞ কৃষকদের কাছ থেকে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ ও প্রয়োজনীয় জ্ঞান নিয়েছেন, যা তার কৃষি উদ্যোক্তা হতে সহায়তা করেছে। তবে সরকারিভাবে এখন পর্যন্ত সহায়তা পাননি বলে তিনি জানান। তাই সহজ শর্তে ব্যাংক ঋন অথবা সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা পেলে তিনি এগ্রো পার্ক করতে চান।

সরেজমিনে বাগান পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় ১৬ বিঘা জমিতে ১৫ রকমের ফলের চাষ করছেন তিনি। এরমধ্যে উলেস্নখযোগ্য হলো মালটা, কমলা, আপেল, ডালিম, কদবেল, আমড়া ও আম অন্যতম। প্রায় ৮ বিঘা জমিতে রয়েছে বিভিন্ন জাতের মালটা ও কমলার চাষ। চলতি মৌসুমে তার বাগানে মালটার ও কমলার বাম্পার ফলন হয়েছে জানান উদ্যোক্তা হানিফ। ইতিমধ্যে তিনি বাজারজাত করতে শুরু করেছেন। সাইজে তুলনামুলক বড় ও স্বাদে সুমিষ্ট হওয়ায় স্থানীয় বাজারে মাল্টা ও কমলার চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। চলতি মৌসুমে ২৬৫টি গাছে ফল এসেছে এবং একেক গাছে ৮০-৮৫কেজি মাল্টার উৎপাদন হয়েছে বলে তিনি জানান। নিজ জেলার চাহিদার পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী জেলা নাটোর, নওগা, চাপাইনবাবগঞ্জ এর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, ফলের দোকান ও খুচরা ক্রেতা সরাসরি বাগান ও অনলাইনে মাল্টা, কমলা, আমসহ বাগানের ফল ক্রয় করে থাকে।

উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায় ফলজ হচ্ছে একটি সাইটাস জাতীয় ফসল। এ ফসলের উৎপাদন খরচ খুবই কম। কীটনাশক সারসহ অন্যান্য সারের ব্যবহার খুবই কম। গাছের চারা ঠিকমতো পরিচর্ষা করতে পারলে চারা লাগানোর তিন বছর থেকে বিঘা প্রতি প্রায় ৫ লাখ টাকার ফল বিক্রয় করতে পারবে বলে জানা যায়। এবিষয়ে হানিফকে উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করছেন বলে জানিয়েছেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আল মামুন হাসান।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে