পাঁচ বছর আগে আড়াই কোটি টাকা ব্যয়ে রাজবাড়ী-ফরিদপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের রাজবাড়ী সদর উপজেলার আলাদিপুর বাজার এলাকায় নির্মাণ করা হয় একটি ফুট ওভারব্রিজ। এটা কেন নির্মাণ করা হয়েছিল সেটাই প্রশ্ন এলাকাবাসীর। কোনো কাজে তো আসছেই না, উপরন্তু সেখানে রাতে বখাটেরা বসে মাদক সেবন করে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
রাজবাড়ী সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ২০১৯-২০ অর্থবছরে দুই কোটি ৪৪ লাখ টাকা ব্যয়ে রাজবাড়ী-ফরিদপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের রাজবাড়ী সদর উপজেলার আলীপুর ইউনিয়নের আলাদীপুর বাজারে ফুটওভার ব্রিজটি নির্মাণ করা হয়। নির্মাণকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ছিল ঢাকার ডিলাক্স এন্টারপ্রাইজ।
আঞ্চলিক মহাসড়কটির যেখানে ফুট ওভারব্রিজটি নির্মাণ করা হয়েছে তার পূর্ব দিকে আলাদিপুর উচ্চ বিদ্যালয় এবং বিদ্যালয়ের মার্কেট। পশ্চিমে আলাদিপুর বাজার ও আলীপুর ইউনিয়ন পরিষদ ভবন। এ মহাসড়ক দিয়ে ফরিদপুর, দৌলতদিয়া, ঢাকা, বরিশাল, যশোরসহ বিভিন্ন রুটে বাস, ট্রাক, মাইক্রোবাসসহ নানা ধরনের যান চলাচল করে। তবে রাস্তা পারাপারের জন্য সেটা খুব ঝুঁকিপূর্ণ নয় বলে জানিয়েছে বাজার ব্যবসায়ী ও স্কুল কর্তৃপক্ষ। সড়কটিতে কোনো ডিভাইডার নেই। আলাদীপুর বাজারে প্রবেশমুখে উত্তর ও দক্ষিণ দিকে দুটি গতিরোধক রয়েছে। যেকারণে চালকরা এমনিতেই যানের গতি কমাতে বাধ্য হয়। রাস্তা পারাপারে খুব একটি ঝুঁকি থাকে না।
আলাদীপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন ছাত্র-ছাত্রী জানিয়েছে, রাস্তা পার হতে ১০ থেকে ২০ সেকেন্ড সময় লাগে। আর ওভারব্রিজে ওঠানামার সমস্যা অনেক। এ কারণে হেঁটেই রাস্তা পার হয় তারা।
আলাদীপুর বাজারের ব্যবসায়ী জাকির হাসান জানান, এ ফুটওভার ব্রিজ বানিয়ে উপকারের চেয়ে ক্ষতি হয়েছে বেশি। স্কুল টাইমে ছেলেরা ক্লাস ফাঁকি দিয়ে ব্রিজের ওপরে বসে থাকে। রাতে বখাটে ছেলেরা আড্ডা দেয়। কাউকে ব্রিজের ওপর দিয়ে রাস্তা পার হতে দেখি না। কেন যে এটি নির্মাণ হয়েছিল সেটাই বড় প্রশ্ন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ব্যবসায়ী জানান, মাঝে মধ্যেই ওভারব্রিজের উপরে বসে রাতে মাদক সেবন করে বখাটেরা।
আলাদীপুর উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল বাশার জানান, তাদের বিদ্যালয়ে ছয় শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে। বিদ্যালয়ের সমাবেশে ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারের গুরুত্ব তুলে ধরেন। শিক্ষার্থীদের ওভারব্রিজ ব্যবহার করতে বলেন। কিন্তু তাতে লাভ হয়নি। তিনি আরও জানান, তারা বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে এখানে ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করার কথা কখনও বলেননি। কোনো দাবিও করেননি।
আলীপুর ইউপি চেয়ারম্যান আবু বক্কার ছিদ্দিক জানান, তিনি তখন চেয়ারম্যান ছিলেন না। স্থানীয় এক প্রভাবশালী ব্যক্তির ভাই মন্ত্রণালয়ে চাকরি করতো। তাকে দিয়ে পাশ করিয়ে ওভারব্রীজটি নির্মাণ করেন। কিন্তু এটা কোনো কাজে আসছে না। এলাকাবাসী কখনও এমন দাবি কখনও করেনি। এখন এটা কেউ ব্যবহার কওে না। টিন এজ ছেলেরা এখানে আড্ডা দেয়। তারা নিষেধ করেন আড্ডা দিতে। তাতে খুব একটা লাভ হয়না। স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরাও ব্রিজটি ব্যবহার কওে না। তখনও কেউ ব্যবহার করেনি। আজও কেউ ব্যবহার কওে না।
রাজবাড়ী সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রাজস খান বলেন, 'আমি রাজবাড়ীতে কিছুদিন আগে যোগ দিয়েছি। যেকারণে ফুটওভার ব্রীজ নির্মাণ সম্পর্কে কিছু জানা নেই।' অপর এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, সড়ক ও জনপথ বিভাগ যৌক্তিক মনে করেছিল বলেই সেখানে ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে।