কাশিয়ানী উপজেলার একই সড়কের তিন খালের উপর ৩টি ব্রিজের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে ৮ বছর আগে। কিন্তু সেতুর দু'পাশে সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হয়নি। স্থানীয়দের বাঁশের সিঁড়ি বেয়ে সেতুতে উঠতে হচ্ছে। চলাচলের ক্ষেত্রে ভোগান্তি কমাতে সেতুগুলো নির্মাণ করা হয়। সেতুগুলো ভোগান্তি না কমিয়ে ভোগান্তি বাড়িয়ে দিয়েছে কয়েকগুন গুন। এ সেতু দিয়ে চলচাল করতে গিয়ে অনেকেই পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন।
বিষয়টি নিয়ে গেল ২৮ ডিসেম্বর দৈনিক যায়যায়দিনের অনলাইন ভার্সনে এবং ২৯ ডিসেম্বর দৈনিক যায়যায়দিনের প্রিন্ট ভার্সনে ছাপা হয়। বিষয়টি অবগত হওয়ার পর বুধবার দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) গোপালগঞ্জ জেলা সমন্বিত কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সোহরাফ হোসেন সোহেলের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত দলের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে এসব অনিয়ম-দুর্নীতির চিত্র।
দুদকের ওই কর্মকর্তা বলেন, ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার ওড়াকান্দি ইউনিয়নের আড়কান্দি সেতু হতে মাইজকান্দি হয়ে আড়ুয়াকান্দি খাল পর্যন্ত ৩টি সেতুসহ এইচবিবি রাস্তার নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়। নির্মাণ কাজের প্রাক্কলিত মূল্য ছিল ৯০ লাখ টাকা। কাজটি বাস্তবায়নের জন্য কাশিয়ানীর মেসার্স হাবিব এন্ড কোম্পানী নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে ২০১৬ সালের ৮ নভেম্বর কার্যাদেশ দেয় জেলা পরিষদ। কিন্তু সেতুর সংযোগ সড়ক (এ্যাপ্রোচ) নির্মাণ না করে ৬ লাখ ৩৩ হাজার টাকা উত্তোলন করে নেন ঠিকাদার। এছাড়া কাজের বিল ও জামানতের টাকাও উত্তোলন করে নিয়েছেন ঠিকাদার। তৎকালীন জেলা পরিষদের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মনির হোসেন ও সহকারী প্রকৌশলী মো. আনিচুর রহমান কাজ বুঝে নিয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে ঠিকাদারের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা উৎকোচ গ্রহণেরও অভিযোগ রয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, জনদুর্ভোগ লাঘবে সরকার ৯০ লাখ টাকা ব্যয় করে সেতু নির্মাণ করলেও দুর্ভোগ কমেনি। বর্তমান একটি সেতুতে বাঁশের সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করছেন এলাকাবাসী। এতে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটেছে। অনেকে পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। অপর দুই সেতুর এ্যাপ্রোচে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ৪০দিনের কর্মসৃজন কর্মসূচির শ্রমিক দিয়ে মাটি কেটে যাতায়াতের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।
জেলা পরিষদের অবসরপ্রাপ্ত উপ-সহকারী প্রকৌশলী মনির হোসেন বলেন, 'আমি বিলে প্রথমে স্বাক্ষর করতে চাইনি। পরে ঠিকাদার অস্ত্র ঠেকিয়ে আমার কাছ থেকে জোর করে স্বাক্ষর করিয়ে নিয়েছেন।' দুদকের জেলা সমন্বিত কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মশিউর রহমান জানান, 'অভিযোগটি দুদকে তফসিলভূক্ত হয়েছে। তাই দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনে মামলা করার জন্য সুপারিশ করে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষের নির্দেশে পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসক মুহম্মদ কামরুজ্জামান বলেছেন, 'আমি সরেজমিন পরিদর্শন করে জনগণের যাতায়াত সুবিধার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করব।'