বৃহস্পতিবার, ২৯ মে ২০২৫, ১৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

সারিয়াকান্দিতে ধান-চাল সংগ্রহে ব্যর্থ খাদ্য বিভাগ

সারিয়াকান্দি (বগুড়া) প্রতিনিধি
  ০৫ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
সারিয়াকান্দিতে ধান-চাল সংগ্রহে ব্যর্থ খাদ্য বিভাগ

বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে এবার ধান-চাল সংগ্রহ অভিযানে ব্যর্থ হচ্ছে খাদ্য বিভাগ। সরকারের ধান ও চাল সংগ্রহে অভিযান শুরুর পর খাদ্য বিভাগ এ নিয়ে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালালেও ধান সংগ্রহে কৃষক একেবারেই সাড়া দেয়নি। যে কারণে সংগ্রহ মৌসুমে ধান সংগ্রহ সফল হবে না বলে উপজেলা খাদ্য অফিস সূত্রে জানা গেছে।

উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি আমন মৌসুমে সারিয়াকান্দিতে ৮৬৪ মেট্রিক টন ধান কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ ছাড়াও ৫০০ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হয়। এ পর্যন্ত সারিয়াকান্দি খাদ্য গুদামে ৭৮ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহ হয়েছে। চাল সংগ্রহ হয়েছে ১৯৭ মেট্রিক টন। এরই মধ্যে ৪৮ চালকল মালিকের সঙ্গে সেদ্ধ ও আতপ চাল সংগ্রহের বিষয়ে চুক্তি হয়েছে। সেদ্ধ চাল ৪৭ টাকা ও আতপ চাল ৪৬ টাকা এবং ধান ৩৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়। ১৪ শতাংশের নিচের আর্দ্রতায় ধান কেনার সিদ্ধান্ত হয়। কৃষি বিভাগের নির্ধারিত কার্ডের মাধ্যমে তালিকাভুক্ত কৃষকদের কাছ থেকে এসব ধান সংগ্রহের কথা রয়েছে। এসব কৃষক জনপ্রতি ১২০ কেজি থেকে তিন মেট্রিক টন পর্যন্ত ধান সরকারি গুদামে দিতে পারবেন। তবে এত কিছু কোনো কাজে আসছে না এবার সারিয়াকান্দিতে। এবছর কৃষক খাদ্য গুদামে ধান দিতে অপরাগতার কারণ অনুসন্ধানে গিয়ে দেখা গেছে, অধিকাংশ কৃষকের কাছেই ধান সংগ্রহের বিষয়ে খাদ্য বিভাগের কোনো বার্তা পৌঁছায় না। যে কারণে প্রকৃত চাষি এর সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এটা যে শুধু এ বছরই না, বরাবরই এরকম হয়ে আসছে।

1

উপজেলার কড়িতলা এলাকার কৃষক হোসেন জানান, প্রতি বছর আমন ও বোরো মৌসুমে ৭ থেকে ৮ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেন। তবে খাদ্য গুদামে ধান কখন ক্রয় হয়, সে বিষয়ে তিনি কোনো কিছু জানতে পারেন না। ওই এলাকার অন্য কোনো চাষি খাদ্যগুদামে ধান বিক্রি করেছেন, এমন কোনো তথ্য তার কাছে নেই।

বাশহাটার আজাহার বলেন, 'প্রতিবছর শুনি সরকার ধান সংগ্রহ অভিযান শুরু করেছে। আসলে কাদের কাছ থেকে ধান কেনা হয়, সে বিষয়টি আজ পর্যন্ত জানতে পারলাম না। সরকারি ধান সংগ্রহ অভিযানে প্রকৃত চাষিরা সুযোগ পায় না, যে কারণে প্রতিবছর এ কর্মসূচি এই অঞ্চলে ব্যর্থ হচ্ছে।' সারিয়াকান্দি উপজেলা মিল মালিক সমিতির সভাপতি মোজাম্মেল হক বলেন, প্রথম দিকে তাও কিছু লস দিয়ে হলেও মিল মালিকরা খাদ্য গুদামে কয়েক শ' মেট্রিক টন চাল দিয়েছে। এখন তা একেবারে অসম্ভব। কারন সরকারি দর হলো ৪৭ টাকা আর এখনকার বাজার থেকে ধান কিনে চাল তৈরি করতে খরচ হয় প্রতি কেজি ৫৩ টাকা। এভাবে তারা লোকসান স্বীকার করতে রাজি না।

উপজেলা খাদ্য পরিদর্শক রাশেদুল ইসলাম বলেন, 'মিল মালিকদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখার মাধ্যমে ১৯৭ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহ করতে পেরেছি। এখন যোগাযোগ অব্যহত রেখেছি। কিন্তু মনে হয় না আর সংগ্রহ করতে পারব। কারন কেজিতে প্রায় কয়েক টাকা বেশি হয়ে গেছে চালের দাম।'

উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক দেওয়ার আতিকুর রহমান বলেন, আমন মৌসুমে সরকার-নির্ধারিত দামের চেয়ে বাজারে ধানের দাম বেশি হওয়ায় কৃষকরা তাদের কাছাকাছি বাজারে ধান বিক্রি করে দিয়েছে। এ ছাড়া খাদ্য গুদাম দূরে হওয়ায় কৃষকদের যাতায়াত খরচ বেড়ে যাওয়ায় অনেকে ধান দিতে আগ্রহী নন। এবার বাজারে ধানের দাম বেশি হওয়ায় ধান-চালের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী সংগ্রহ সম্ভব হবে না।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে