বৃহস্পতিবার, ০৫ জুন ২০২৫, ২২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

নবীগঞ্জে কুশিয়ারায় বিলীনের ঝুঁকিতে ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি

কুশিয়ারা নদীতে বালু উত্তোলনের মহোৎসব
নবীগঞ্জ (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি
  ১৩ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
নবীগঞ্জে কুশিয়ারায় বিলীনের ঝুঁকিতে ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি
হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ কুশিয়ারা নদীতে চলছে সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে অবৈধভাবে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে -যাযাদি

হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার কুশিয়ারা নদীতে চলছে সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন। দিনরাত অবৈধভাবে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করার কারণে হুমকির মুখে রয়েছে নদী ও নদীর পারের শত শত ফসলী জমি এবং বাড়িঘর। এছাড়াও অবাধে বালু তোলার কারণে ভেঙে যাচ্ছে এলাকার রাস্তাঘাট, বিলীন হচ্ছে ঘরবাড়ি। এমতাবস্থায় বিষয়টি প্রশাসনকে অবগত করা হলেও নেওয়া হচ্ছে না কার্যকরি ব্যবস্থা। তাই এলাকাবাসীর স্বার্থে এ বিষয়ে দ্রম্নত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি পরিবেশবাদীসহ এলাকার সচেতন মহলের।

সরজমিনে গিয়ে জানা যায়- উপজেলার দীঘলবাক, দূর্গাপুর, পাহাড়পুর, পারকুল, কুমারকাঁদা এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করে আসছেন স্থানীয় বিএনপির প্রভাবশাী কিছু নেতাকর্মীদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে আওয়ামী লীগের একটি বিশাল চক্র। আর এ চক্রের নেতৃত্বে রয়েছেন নবীগঞ্জ পৌরসভার সাবেক জনপ্রতিনিধি ও বিএনপির শীর্ষ এক প্রভাবশালী নেতা। তাদের কাধে ভর করে বালু তুলছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতৃবৃন্দ। তাদের সহযোগী হিসেবে কাজ করছে স্থানীয় এলাকার বিএনপি ও আওয়ামী লীগের আরও বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি।

1

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চক্রটি এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করে রেখেছে। তারা দীর্ঘদিন ধরে নদী থেকে ড্রেজার মেশিনের মাধ্যমে বালু উত্তোলন করে আসছেন। কেউ এ বিষয়ে কথা বললে দেওয়া হয় হুমকি। ফলে ভয়ে কেউ মুখ খুলতে নারাজ। দিনের পর দিন অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে চক্রটি হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। সরকার হারাচ্ছে বিপুল পরিমান রাজস্ব। এমতাবস্থায় এলাকবাসীর স্বার্থে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলনের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি এলাকাবাসীর।

সরেজমিনে গিয়ে আরও দেখা যায়- দীঘলবাক গ্রামে ও দূর্গাপুর, পাহাড়পুর, পারকুল মধ্যবর্তী এলাকায় কুশিয়ারা নদীর উপর বড় বড় একাধিক ড্রেজার মেশিন বসিয়ে কুশিয়ারা নদী থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। আর এতে কাজ করছে শতাধিক শ্রমিক। কুশিয়ারা চরের দীঘলবাক, তাজাবাদ মৌজায় বালু উত্তোলন শেষে সেগুলোকে বড় নৌকায় করে এলাকার কৃষি জমিতে ও নদীর পারের কয়েকটি স্থানে নিয়ে স্তূপ করে রাখা হচ্ছে। এছাড়া বালু উত্তোলনের মেশিন নদীতে বসিয়ে প্রায় কয়েক কিলোমিটার দুরে বড় বড় পাইপ দিয়ে পারকুল বিদু্যৎ ফাওয়ার পস্নান্টের সংলগ্ন স্থানে, মজলিশপুর, কুমারকাদাঁ মন্দিরের কাছে এবং দীঘলবাক এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে বালু স্তূপ করে রেখে অবাধে বিক্রি করে আসছে ওই সিন্ডিকেট চক্র।

স্থানীয়রা বলছেন- প্রতিদিন অন্তত কয়েক লাখ টাকার বালু উত্তোলন করা হচ্ছে কুশিয়ারা নদী থেকে। যে কারণে নদীর তলদেশে সৃষ্টি হচ্ছে বিশাল বিশাল গর্ত। স্থানীয় বাসিন্দা মোজাহিদ মিয়া বলেন- অবৈধভাবে দীর্ঘদিন ধরে ওই এলাকা থেকে বালু উত্তোলন করা হলেও প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। বালু তোলার কারণে হুমকিতে রয়েছে নদী ও নদীর পারের ফসলিম জমি। অনেক স্থানে আবার ঘর বাড়িতেও ধ্বসও দেখা দিয়েছে। তাই এখনই এসব বন্ধ করা জরুরি।

তারেক মিয়া নামে আরেকজন বলেন- চক্রটি খুবই প্রভাবশালী। তাদের বিরুদ্ধে কথা বললেই নানাভাবে হয়রানি করে। তাদের বালু তোলার কোন ধরণের অনুমতি নেই। অথচ তারা দীর্ঘদিন ধরে পরিবেশ নষ্ট করে বালু উত্তোলন করে আসছে। কাজল মিয়া বলেন- 'আমার সবজির জমিতে তারা জোরপুর্বক বালু স্তূপ করে রাখছে। তারা আমাকে বলেছিল ক্ষতিপূরণ দেবে, কিন্তু দেয়নি।'

হবিগঞ্জ জেলা বাপা'র সাধারণ তোফাজ্জুল সোহেল বলেন- 'নদীর তলদেশ থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন আমাদের পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি। এখন এর প্রভাব তেমন একটা না পড়লেও পরবর্তীতে বিস্তর প্রভাব ফেলবে বালু তোলার ঘটনায়। তাই পরিবেশ রক্ষায় সংশ্লিষ্টদের এ সব বিষয়ে দ্রম্নত ব্যবস্থা নিতে হবে।'

অভিযোগের বিষয়ে ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি বলেন, 'আমার এলাকায় নদী ভাঙনরোধে একটি বড় উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলছে। এ প্রকল্পে এলাকার কিছু যুবকসহ লোকজন কুশিয়ারা নদী থেকে বালু-মাটি দিচ্ছে। বালু তোলার বিষয়ে আমি জড়িত নই।'

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্থানীয় ও উপজেলার বিএনপির প্রভাবশালীদের কাধের উপর ভর করেই স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের বালু উত্তোলনের মহোৎসব চলছে। লাখ লাখ টাকা থেকে বঞ্চিত রয়েছে সরকার। কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন বালু সিন্ডিকেটার চক্ররা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে