অন্যায়ের প্রতিবাদ করাই কাল হলো যুবক ওবায়দুর রহমানের। জীবন দিতে হলো তাকে। এলাকায় মাদকসহ নানা অসঙ্গতির প্রতিবাদ করায় ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করেছে সন্ত্রাসীরা। এ দিকে হত্যাকান্ডে জড়িতদের গ্রেপ্তার দাবিতে মহাসড়কে মরদেহ নিয়ে বিক্ষোভ করেছে এলাকাবাসী। পরিবারে চলছে শোকের মাতম। ওবায়দুর রহমান সদর উপজেলার কানাইপুর ইউনিয়নের ঝাউখোলা গ্রামের বিলস্নাল খানের ছোট ছেলে। ওবায়দুর পেশায় একজন কাঠমিস্ত্রী ছিলেন।
স্বামীকে হারিয়ে কান্না থামছে না সুইটি বেগমের। ৬মাস বয়সী ছেলে জুনায়েদকে কোলে নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে জ্ঞান হারিয়ে ফেলছেন। ছেলের এমন মৃতু্যতে বাকরুদ্ধ বাবা বিলস্নাল খান ও মা রেখা বেগম। কাঁদছে স্বজন ও এলাকাবাসী। পুরো গ্রাম জুড়ে চলছে শোকের মাতম।
স্বজনদের অভিযোগ, খায়রুজ্জামান ওরফে খাজা দীর্ঘ ২০ বছর কানাইপুরসহ আশেপাশের অঞ্চলে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করে আসছিলেন। বিভিন্ন সময় অন্যায়ের প্রতিবাদ করতেন ওবায়দুর। এরই জের ধরে গত শুক্রবার বিকেল ৪টার দিকে ফরিদপুর সদর উপজেলার কানাইপুর পলস্নী বিদু্যৎ অফিসের সামনে একটি ফিলিং স্টেশনে মোটর সাইকেলে পেট্রোল নিতে গিলে সেখান থেকে অটোরিকশা ও মোটর সাইকেলে সন্ত্রাসী খাজা ও তার বাহিনী তুলে নেয় যুবক ওবায়দুর রহমান খানকে। তার উপর চালায় অমানসিক নির্যাতন। চোখ খুচিয়ে, হাত-পাসহ শরীরের বিভিন্ন অংশ ভেঙে দেয়। প্রথমে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে রাত সাড়ে ৮টায় মারা যান ওবায়দুর।
নিহতের স্ত্রী সুইটি বেগম বলেন, 'আমার স্বামী একজন কাঠমিস্ত্রী, একজন ভালো মানুষ ছিল। আমার স্বামী অন্যায়ের প্রতিবাদ করতো এটাই তার অপরাধ। এ কারনে তাকে জীবন দিতে হলো। ৬ মাস বয়সী একটি সন্তান আছে। ও বাবা ডাকার আগেই তার বাবা চলে গেলো। আমাকে আর ছেলেকে এতিম করে চলে গেলো।'
তিনি আরও বলেন, 'আমার স্বামীকে এর আগেও একাধিকবার ধাওয়া দেয় খাজা ও তার লোকজন। কিন্তু এবার তার জীবনটাই নিয়ে নিলো। আমার স্বামীকে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর সে বলেছিল- ''আমাকে প্রাণে মারিস না, প্রয়োজন হলে হাত পা কেটে দে।'' কিন্তু ওরা তা শোনেনি, আমার স্বামীর প্রাণটাই নিয়ে নিলো। নৃশংসভাবে তাকে হত্যা করেছে। খাজাসহ যারা এই হত্যাকান্ডে জড়িত তাদের গ্রেপ্তার করে ফাঁসির দাবি জানাই।'
এদিকে মরদেহের ময়না তদন্ত শেষে শনিবার বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে অপরাধীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে মরদেহ নিয়ে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের কানাইপুর বাজার এলাকায় সড়ক অবরোধ করে স্থানীয় জনতা। পরে পুলিশের আশ্বাসে অবরোধ তুলে নেয় তারা।
ফরিদপুর কোতয়ালী থানার ওসি মো. আসাদউজ্জামান বলেন, ওবায়দুরের দাফনের কারনে এখনো তার পরিবার মামলা করেনি। রাতের মধ্যেই মামলা করবে। যারা জড়িত তারা গা ঢাকা দিয়েছে। তাদের গ্রেপ্তকারে একাধিক টিম অভিযান চালাচ্ছে।