নওগাঁর আত্রাইয়ে মঙ্গলবার থেকে শুরু হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী শীতাতলার মেলা। উপজেলার সদর থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরে নিভৃত এক পলস্নী গ্রাম জামগ্রাম। গ্রামটি পলস্নীতে হলেও এ মেলার কারনে গ্রামের খ্যাতি রয়েছে উত্তরবঙ্গ জুড়ে। প্রতি বছর বাংলা পৌষ মাসের শেষ তারিখে এখানে মেলা অনুষ্ঠিত হয়।
কথিত আছে, শত শত বছর পূর্বে রামচন্দ্র তার স্ত্রী সীতা রাণীকে এখানে বনবাস দিয়েছিলেন। আর সীতা বনবাসের এক পর্যায় জামগ্রামের বিশাল বনে একটি প্রকান্ড বটগাছের নিচে আশ্রয় নেন এবং বাঁকি সময় এ গাছটির নিচেই নাকি তিনি কাটিয়ে দেন। এর পাশে ছিল এক বিরাট ইন্দারা। সীতা এই ইন্দারার পানিতেই নাকি স্নান করতেন।
কিন্তু কালের বিবর্তনে সেই বটগাছটিও আর নেই, প্রয়োজনীয় রক্ষণাবেক্ষণ এবং সংস্কারের অভাবে ইন্দারাটিও আর নেই। এ দিকে সীতা রাণীর এ আশ্রয় স্থানকে কেন্দ্র করে তদানিন্তন সময়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা সীতার নামে ওই বটগাছটির নীচে পুঁজা শুরু করেন। পরবর্তীতে এটি আর শুধু পুঁজার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি। আস্তে আস্তে বৃহৎ মেলা অনুষ্ঠান শুরু হয়ে যায়। আর সীতার নামেই মেলার নামকরণ করা হয়েছে 'সীতাতলার মেলা'।
শুরুর দিকে এটি হিন্দু সম্প্রদায়ের মেলা থাকলেও বর্তমানে আর তাদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। এখন এ মেলা হিন্দু, মুসলিম সবার এক মিলন মেলায় পরিণত হয়েছে।
এদিকে এ মেলাকে কেন্দ্র করে আশপাশের গ্রামগুলোতেও উৎসবের আমেজ পড়ে গিয়েছে। সমগ্র জামগ্রাম যেন অতিথিদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে।
সরকারিভাবে মেলা একদিন হওয়ার কথা থাকলেও মেলা চলে বেশ কয়েকদিন ধরে। সে অনুযায়ী এবারেও আজ মঙ্গলবার মেলার দিন ধার্য থাকলেও গতকাল সোমবার থেকেই দোকানপাট আর লোকে লোকারণ্য হয়ে গেছে জামগ্রামের মেলা এলাকা।
মেলা উদযাপন কমিটির সভাপতি ইউপি সদস্য রুহুল আমিন সোহাগ বলেন, মেলা উত্তরের বগুড়, জয়পুরহাট, গাইবান্ধা, নাটোর, রাজশাহী জেলাসহ বিভিন্ন জেলার লোকজন ও ব্যবসায়ীরা এসেছেন। আমরা সাধ্যমত তাদের সব ব্যবস্থা করে দিয়েছি।
আত্রাই থানার ওসি সাহাবুদ্দিন বলেন, মেলায় আগত লোকজনের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সার্বক্ষণিক সেখানে পুলিশ মোতায়েন থাকবে। সে সঙ্গে মেলাকে কেন্দ্র করে কেউ যাতে জুয়া, লটারী বা অসামাজিক কার্যক্রম করতে না পারে সেদিকে সজাগ দৃষ্টি থাকছে।