বৃহস্পতিবার, ০৫ জুন ২০২৫, ২২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

নোংরা পরিবেশে সদরপুর স্বাস্থ্যকেন্দ্র, সেবা ব্যাহত

সদরপুর (ফরিদপুর) প্রতিনিধি
  ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
নোংরা পরিবেশে সদরপুর স্বাস্থ্যকেন্দ্র, সেবা ব্যাহত

শীত মৌসুমে হঠাৎ পানিবাহিত ডায়রিয়ায় রোগের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় হাসপাতালে ছুটে আসছেন রোগী ও তাদের স্বজনরা। আগতদের মধ্যে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা বেশি। জরুরী বিভাগ থেকে ভর্তি নিয়ে ওয়ার্ড বা কেবিনে দেওয়া হচ্ছে তাদের। হাসপাতালের ওয়ার্ড ও বারান্দায় ময়লা আবর্জনা থাকার পাশাপাশি শৌচাগারগুলো নিয়মিত পরিষ্কার না করায় ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। হাসপাতালের ভিতরের এমন নোংরা পরিবেশ দেখে হতবাক রোগী ও তাদের স্বজনরা। নোংরা পরিবেশের কারণে বাধ্য হয়ে হাসপাতাল ছেড়ে অন্য কোথাও চিকিৎসা নেওয়ার জন্য চলে যাচ্ছেন। সিটে ময়লা আবর্জন্যর পাশাপাশি দুর্গন্ধ থাকায় শিশু ওয়ার্ডে কেউ থাকতে পারছেন না।

গত বৃহস্পতিবার সকালে সাইফা নামের ৯ মাসের এক শিশু নিয়ে সদরপুর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন বিউটি আক্তার। তার বাড়ি চরনাছিরপুর ইউনিয়নের মনিরুদ্দিন ফকির কান্দি গ্রামে। তাকে সিট দেওয়া হয়েছে শিশু ওয়ার্ডে। ওয়ার্ডে গিয়ে দেখতে পান পরিবেশ একেবারেই খারাপ। রাত ৯টার দিকে ওয়ার্ডে থাকতে না পেরে হাসপাতালের জেনারেল পুরুষ ওয়ার্ডের একটি সিটে ওই শিশুকে নিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। সাইফার মা বিউটি বেগমের অভিযোগ, শিশু ওয়ার্ডে সিট পেয়েও সিটে থাকতে পারেননি। দুর্গন্ধ ও নোংরার কারনে ওয়ার্ডে থাকার মত পরিবেশ ও নেই। বাধ্য হয়ে পুরুষ ওয়ার্ডে এসেছেন।

1

একই অবস্থা কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের শৌলডুবী গ্রামের ছালেহা বেগমের। তিনি গত রোববার রাতে তার শিশুপুত্র আব্দুলস্নাহ ইব্রাহীমকে নিয়ে ভর্তি হন। তার সন্তানও ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত। তাদেরও দেওয়া হয় শিশু ওয়ার্ডে। ওয়ার্ডের করুন অবস্থা থাকায় ছালেহা বেগম তার শিশুপুত্রকে নিয়ে ওয়ার্ড ছেড়ে বাইরের বারান্দায় চিকিৎসা নিচ্ছেন। রাতে প্রচুর শীত থাকায় খোলা বারান্দা দিয়ে হিমেল বাতাসে ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কাও প্রকাশ করেন তিনি।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শিশু ওয়ার্ডে ৬টি শয্যা রয়েছে। কোনো শয্যাতেই রোগী নেই। ওয়ার্ডের মধ্যে আবছা অন্ধকার ও নোংরা পরিবেশ। চিকিৎসার জন্য শিশু ওয়ার্ডে পাঠানো হলেও ব্যবহার উপযোগী না থাকায় রোগীর স্বজনরা অন্য সিটে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এখন রোগী যে বেডে শুয়ে চিকিৎসাসেবা নিচ্ছে ওই জেলারেল ওয়ার্ডেও নোংরা পরিবেশ। স্বাস্থ্য কমপেক্সের ভেতরে নোংরা ও অপরিষ্কার টয়লেটে যেতে হয় নাক চেপে। টয়লেটেও ময়লার স্তূপ।

স্বজনদের অভিযোগ, সরকারি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেক্সে এমন নোংরা পরিবেশ থাকবে এটা ভাবা যাচ্ছে না। কোনো সুস্থ মানুষের পক্ষে এ হাসপাতালে থাকা সম্ভব নয়। সেখানে একজন রোগী কিভাবে চিকিৎসাসেবা নিয়ে সুস্থ হবে

নোংরা পরিবেশ বিষয়ে হাসপাতালের সিনিয়র নার্স রীনা দাসের ভাষ্য, বিগত বছরে ৩২ শয্যার বিপরীতে ৫০ শয্যায় উত্তীর্ণ হলেও জনবল সংকট রয়েছে। ওয়ার্ড বয়, মালি ও পরিচ্ছন্নতাকর্মী নেই। যে কারনে সেবার পরিধি বাড়ানো যাচ্ছে না। জনবল সংকট পূরন হলে ভালো চিকিৎসা পাবেন রোগীরা।

সদরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আহমেদ মঞ্জুরুল ইসলাম সামী বলেন, 'আমি এখানে নতুন এসেছি। হাসপাতালে জনবল সংকট রয়েছে। নোংরা ও ময়লা রয়েছে কোনো আয়া না থাকার কারনে। বাইরের লোক দিয়ে কাজ করাতে হচ্ছে। ধীরে ধীরে সব সমস্যার সমাধান করা হবে।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে