গাজীপুর সদর উপজেলার পিরুজালী ও মির্জাপুর ইউনিয়নে অসংখ্য ইটভাটা গড়ে উঠেছে। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে অধিকাংশ ভাটাগুলো নির্মাণে কৃষি জমিকেই বেছে নেওয়া হয়েছে। এতে ইট ভাটার কালো ধোঁয়া ও ছাই পড়ছে ফসলি জমিতে। পরিবেশ দূষণ ও ফসলের ক্ষতির পাশাপাশি স্বপ্ন পুড়ছে কৃষকের। চাষাবাদে আগ্রহ হারাচ্ছে কৃষক।
জানা যায়, গাজীপুর সদর উপজেলা একটি শিল্পাঞ্চল এলাকা হওয়ার চাষাবাদের জমি কমেছে। যতটুকু জমি চাষাবাদ উপযোগী রয়েছে তাতেও কৃষক আগ্রহ হারাচ্ছে। যতটুকু চাষাবাদ হচ্ছে ফসল ও পরিবেশ ধ্বংসে যুক্ত হয়েছে এসব ইটভাটা। উপজেলার পিরুজালী ও মির্জাপুর ইউনিয়ন তুলনামূলকভাবে কৃষিনির্ভর এলাকা। তবে এ অঞ্চলে ফসল উৎপাদনে বড় বাধা এখন ইটভাটা। অধিকাংশ উৎপাদিত ফসলের মাঠ ভাটার ধোঁয়া ও ছাই কৃষিজমিতে পড়ে ফসল নষ্ট করছে। পাশাপাশি দূষিত হয়ে পড়েছে এলাকার পরিবেশ। এছাড়াও আবাসিক এলাকায় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নির্দিষ্ট দূরত্ব না মেনে ইটভাটা নির্মাণ করা হচ্ছে। কৃত্রিম ভাবে কৃষি জমি কমছে। পাশাপাশি কৃষি জমির উর্বরতা কমছে এবং কৃষকেরা আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েই চাষাবাদে অনিহা প্রকাশ করছেন।
পিরুজালী গ্রামের কৃষক ইনতাজ খান বলেন, 'আগে এ সব জমিতে ধান ও সবজি চাষ করতাম। কিন্তু এখন ইটভাটার ধোঁয়ায় গাছ মরে যাচ্ছে। ফলে কৃষি এখন আর লাভজনক নয়।'
কৃষক মোমরেস খাঁন বলেন, 'আমাদের গ্রামে আগে কৃষি ছিল প্রধান পেশা। কিন্তু বর্তমানে ইটভাটার জন্য জমি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আম, নারিকেল, বড়ই, পেঁপেসহ বিভিন্ন গাছের ফল নষ্ট হয়ে গাছ মরে যাচ্ছে। এ ছাড়া আমাদের শরীরেও এর প্রভাব পড়ছে। অনেকে শ্বাসকষ্ট ও নানা রোগে ভুগছেন।'
কৃষকদের অভিযোগ, ইটভাটার কারণে পরিবেশ ও কৃষি খাতে ক্ষতির বিষয়টি নিয়ে বারবার প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করা হলেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। বরং ইটভাটার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও কৃষিজমির উপর ইটভাটা নির্মাণ বন্ধ হচ্ছে না।
বাংলাদেশ রিভার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ মনির হোসেন বলেন, ইটভাটার ধোঁয়ার কারণে বায়ু দূষিত হচ্ছে, যা ওই এলাকার কৃষিজমি, ফসল এবং মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। দূষণের কারণে কৃষিজমি অনুপযোগী হয়ে পড়ছে এবং ফসল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ওই এলাকায় পরিবেশবান্ধব ইট তৈরির উদ্যোগ নিতে হবে অথবা দূষণ সৃষ্টিকারী ইটভাটা বন্ধ করতে হবে।
পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলেন, ইটভাটার কালো ধোঁয়া শুধু কৃষি নয়, পুরো পরিবেশের জন্য বিপজ্জনক। এটি নিয়ন্ত্রণ করা না হলে ভবিষ্যতে এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়বে।
গাজীপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আরেফিন বাদল জানান, নতুন কোনো ইটভাটাকে ছাড়পত্র দেওয়া হচ্ছে না। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ অনুযায়ী ভাটাগুলোর ওপর নজরদারি চলছে। পিরুজালী ও মির্জাপুর এলাকার অবৈধ ইটভাটাগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হয়েছে এবং সামনে আরও অভিযান হবে।